×

শিক্ষা

শাবিতে ভর্তি ফি বাড়ল ৪৬ শতাংশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৩৫ পিএম

শাবিতে ভর্তি ফি বাড়ল ৪৬ শতাংশ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ভর্তি ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে রবিবার দুপুরে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্ধীরা। ছবি: ভোরের কাগজ

# ভর্তিচ্ছু ও শাবি শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ

গত বছরে ভর্তি ফি আট হাজার ১০০ টাকা থাকলেও চলতি বছর তা ৪৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা কররেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) প্রশাসন। এর প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জুনতলা থেকে এ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে গোলচত্বরে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

মিছিল শেষে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তানভীর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ওসমান গণি, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সজিব আহমেদ জয় ও গণিত বিভাগের সজিব আহমেদ তাহসিন।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা বলেন, হঠাৎ করে প্রায় দ্বিগুণ ভর্তি ফি বৃদ্ধি এক ধরণের জুলুম (অত্যাচার)। আকস্মিকভাবে ফি বাড়ানোর ফলে দরিদ্র ও প্রান্তিক অঞ্চলের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। টাকা যার, শিক্ষা তার- এই নীতি বাস্তবায়নে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর একটা যথাযথ সমাধান করতে হবে।

ক্যাম্পাসে প্রতিবাদের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও ক্ষোভ জানাতে ছাড়েননি।

এদিকে, ফি বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভর্তিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী। সানী নামে এক ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলেমেয়েরা কম খরচে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই যাতে আমাদের ফ্যামিলিতে (পরিবারে) প্রেশার (চাপ) কম পড়ে। এখন এমনভাবে যদি আমাদের ওপর জুলুম (অত্যাচার) করা হয়, তাহলে আমরা মধ্যবিত্তরা কি পড়াশোনাই ছেড়ে দেবো?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভর্তিচ্ছু আরেক শিক্ষার্থী বলেন, চূড়ান্ত ভর্তির সময় সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়ে প্রথমে আমাদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। আমাদেরকে এত মাস ঘরে বসিয়ে রাখছে। তারপর হঠাৎ করে ভর্তি ফি বাড়ানো হয়েছে। আমরা রীতিমত অবাক হয়েছি। এটা কখনোই শিক্ষার্থীবান্ধব হতে পারে না। আর এত টাকা যখন নিবে, আগে থেকে কর্তৃপক্ষের বলা উচিত ছিল।

এদিকে গত শুক্রবার প্রাথমিকভাবে ভর্তি নিশ্চিত হওয়া সব শিক্ষার্থীকে মুঠোফোনে বার্তায় চুড়ান্ত ভর্তির বিষয়ে জানানো হয়েছে। মেসেজে ভর্তির জন্য সময় নির্ধারণ ও চুড়ান্ত ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা ও মুল সনদপত্র সাথে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।

চূড়ান্ত ভর্তির বিষয়ে ভর্তি কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, আগামী ২৩ জানুয়ারি ২০২১-২২ শেসনের চূড়ান্ত ভর্তি কাযক্রম শুরু হবে, চলবে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এবারের ভর্তি ফি নির্বারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রাথমিক ভর্তিতে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ হাজার টাকা ও চূড়ান্ত ভর্তিতে আর ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।

ভর্তি ফি বাড়ানোর বিষয়ে চলমান ২০২১-২২ সেশনের ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার বলেন, ফি বৃদ্ধির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই বিষয় ভর্তি কমিটির কোন হাত নেই।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দ্প্তরের বরাতে জানা গেছে, ভর্তি ফি ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ তরা হলেও খাতওয়ারি ফি নির্ধারণে ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার ও সদস্য সচিব ইশরাত ইবনে ইসমাঈলের নেতৃত্বে কমিটি করে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া, কমিটিতে সদস্য হিসেবে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শামসুল আলম, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগে অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম সাইফুল ইসলাম ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম রয়েছেন।

তবে খাত অনুযায়ী ফি নির্ধারণের বিষয়ে কমিটির সভাপতি ড. রাশেদ তালুকদার, সদস্য সচিব ইশরাত ইবনে ইসমাঈলসহ একাধিক সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সদস্যরা সবাই তথ্য জানাতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক নথি অনুযায়ী, ইন্সুরেন্স ফি (বিমা ফি) ৫০০ টাকা, ডোপ টেস্ট ফি ৫০০ টাকা, হল সংযুক্তি ফি ৫০০ টাকা ও বিভাগ উন্নয়ন ফি পাঁচ হাজার টাকাসহ অন্যখাতের ফি নির্ধারণে কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

খাতওয়ারি কোন খাতে কত টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, ফি’র বিষয় একাডেমিক কাউন্সিলে পাস হয়েছে। খাতওয়ারী ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা তো আমার মুখস্ত নেই।

তবে ভর্তি কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবের কাছে এ তথ্য পাওয়া যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সভাপতি ও খাতওয়ারি ভর্তি ফি নির্ধারণ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভর্তি ফি নির্ধারণ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের কাজ। এ তথ্য আমরা দিতে পারব না। রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে সংগ্রহ করেন।

অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত হিসেবে খাত অনুযায়ী ফি জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য সচিব মো. ফজলুর রহমান বলেন, সম্প্রতি আমি দায়িত্ব পেয়েছি। তাই এই মুহূর্তে আমার কাছে এমন তথ্য নেই। আমাকে ২-১ দিন সময় দিন। আমি খুঁজে বের করতে পারলে এ তথ্য জানাতে পারব।

তবে ভর্তি যেহেতু সোমবার থেকে শুরু, সেহেতু স্বল্প সময়ে তথ্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হলে রেজিস্ট্রার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এদিকে, গুচ্ছে গিয়ে শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ভর্তি কমিটি সুত্রে জানা গেছে, অষ্টম পর্যায়ে ভর্তির পরও বিভিন্ন বিভাগের অধীনে ১০৮টি সিট (আসন) খালি রয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্বতা ছিলো। ভালো মানের গ্রাজুয়েট (স্নাতক) পেত। কিন্তু গুচ্ছভুক্ত হয়ে গত দুই বছর ধরে ভালো মানের শিক্ষার্থী পাচ্ছে না দেশের মধ্যে শীর্ষে থাকা এ বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি বারবার কল করেও শিক্ষার্থী আসছে না ভর্তি হতে।

প্রসঙ্গত, গত বছর খাতের তালিকায় দেখা যায়, ভর্তি ফি ৭০০ টাকা, বেতন ৪৫০ টাকা, রেজিস্ট্রেশন ফি ৪৩০টাকা, পরিবহন ফি ৫৫০টাকা, ইউনিয়ন ফি ১০০টাকা, ছাত্রছাত্রী কল্যাণ ফি, ৩০০টাকা, লাইব্রেরি ফি ১৭৫টাকা, কম্পিউটার ফি ৩০০টাকা, রোভার স্কাউট ফি ২৫ টাকা, বিএনসিসি ফি ২৫ টাকা, ইন্সুরেন্স ফি (জীবন বীমা ও স্বাস্থ্য বীমা) ২০০টাকা। এছাড়া অন্যান্য ফি’র মধ্যে রয়েছে পাঠ বহির্ভূত কার্যক্রম ১৫০ টাকা, চিকিৎসা ফি ১২০ টাকা, উৎসব ফি ১০০ টাকা, পরিচয়পত্র ফি ১৭৫ টাকা, সিলেবাস ফি ৪০০টাকা, শিক্ষাপঞ্জি ফি ১০০ টাকা, মাদকাসক্তি ফি ৪০০ টাকা, বিভাগীয় ফি তিন হাজার টাকা, হল সংযুক্তি ফি ৪০০ টাকাসহ মোট আট হাজার ১০০ টাকা ছিল।

তবে চলতি বছরের বৃদ্ধিজনিত ভর্তি ফি খাত অনুযায়ী তথ্য জানাতে গিয়ে লুকোচুরি করছে ভর্তি কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App