×

জাতীয়

রূপপুরের মালামাল আসবে রি-শিপমেন্টের মাধ্যমে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:১১ এএম

রূপপুরের মালামাল আসবে রি-শিপমেন্টের মাধ্যমে

ছবি: সংগৃহীত

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল মার্কিন নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জাহাজ ‘স্পার্টা ৩’ থেকে রি-শিপমেন্টের মাধ্যমে আবার বাংলাদেশে আনা হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল আসতে দেরি হলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজে কোনো সমস্যা হবে না বলে প্রকল্পের একটি সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে ঢাকাস্থ রাশিয়ান দূতাবাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল ফিরিয়ে নিয়ে গেলেও রি-শিপমেন্টের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই অন্য জাহাজে সরাসরি বাংলাদেশে ফিরে আসবে।’ তবে এসব বিষয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কর্মকর্তা ও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রোসাটমের কর্মকর্তারা সরাসরি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার প্রায় ২০০ জাহাজ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। জাতিসংঘও এই নিষেধাজ্ঞায় অনুমোদন দিয়েছে। ফলে রাশিয়ার এ জাহাজগুলো সহজেই ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সহজেই নোঙ্গর করতে পারবে না। ভারত ও চীন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছে না। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। এ কারণেই বাংলাদেশ ভারতের হলদিয়া বন্দর ব্যবহার করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল আনতে চেয়েছিল। কিন্তু রুশ জাহাজ থেকে মালামাল খালাসে ভারতের অনুমতি না পাওয়ার বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে রাশিয়া। প্রকল্পের অর্থের সিংহভাগ দিচ্ছে তারাই। সবদিক দিয়ে সময়মতো রূপপুরে মালামাল পাঠাতে না পারলে নির্মাণকাজ বন্ধ হবে। এতে রাশিয়া আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। তবে করোনা ও ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজের কোনো সমস্যা হয়নি। তাই রাশিয়া এই ক্ষতির মুখে না পড়তে বিকল্প উপায়ে রূপপুরের মালামাল বাংলাদেশে পাঠাবে। এখন বেলারুশ, পোল্যান্ড বা অন্য কোনো দেশের জাহাজে ওই মালামাল লোড করে বাংলাদেশে পাঠাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জানা গেছে, গত ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানতে পারে, ‘উরসা মেজর’ নামধারী জাহাজটি আসলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জাহাজ ‘স্পার্টা ৩’। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এক কূটনৈতিক চিঠিতে বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ওই জাহাজে পণ্য ওঠানো-নামানো, জ্বালানি সরবরাহ, জাহাজের নাবিকদের যে কোনো ধরনের সহযোগিতায় যুক্ত হলে ওই দেশের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া বা বড় আর্থিক দণ্ডের মুখে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই চিঠি পাওয়ার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানায়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় রাশিয়ান জাহাজটিকে বাংলাদেশের কোনো বন্দরে ভিড়তে দিতে রাজি হয়নি। নৌ মন্ত্রণালয় পূর্বের অনুমতি বাতিল করে। যদিও এতে রাশিয়া কূটনৈতিক চিঠির মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে। এমনকি জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে দিতে বাংলাদেশের ওপর চাপও সৃষ্টি করে মস্কো। কিন্তু ঢাকা তাতেও রাজি হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত জাহাজটি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে যাওয়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কারণে বাংলাদেশ সরকার নাম ও রং বদলে ফেলা রুশ জাহাজটিকে মোংলা বন্দরে ভিড়তে অনুমতি দেয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, জাহাজটি গ্রহণে বাংলাদেশ এবং ভারত উভয়ের প্রতি রাশিয়ার অনুরোধ ছিল। পরবর্তীতে জাহাজে আসা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া সমুদ্রবন্দরে খালাস করার ব্যবস্থা নেয়। সেখান থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল এজেন্টের মাধ্যমে সড়কপথে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়ে ভারতের সঙ্গে কথা হয়। রুশ জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে ভারত যেহেতু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মানছে না, তাই ভারতের হলদিয়া বন্দর ব্যবহার করে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল বাংলাদেশে নেয়ার ব্যবস্থা হয়। তখন বলা হয়েছিল মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কোনো রুশ জাহাজ ভারতের বন্দরে ভিড়লে তাতে ভারত সরকারের আপত্তি থাকবে না। তবে শেষ পর্যন্ত ভারত আগের অবস্থান থেকে সরে এসে রাশিয়ার জাহাজটি হলদিয়া বন্দরে ভিড়তে দেয়নি। হলদিয়া বন্দরে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল খালাস করতে না পেরে ১৪ দিন অপেক্ষার পর গত বৃহস্পতিবার জাহাজটি ফিরে গেছে। গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট মেরিন ট্র্যাফিকের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পতাকাবাহী ওই জাহাজ ৩ জানুয়ারি সকালে বঙ্গোপসাগরের লোয়ার অকল্যান্ড চ্যানেলে অবস্থান করছিল। তারও আগে কয়েকদিন ধরে জাহাজটিকে ভারতীয় অংশের বঙ্গোপসাগরের গভীরে ভাসতে দেখা গেছে। হলদিয়া পোর্ট ট্রাস্ট কর্তৃক তখন ধারণা দেয়া হয়েছিল যে, চ্যানেলে কুয়াশার অবস্থার ওপর নির্ভর করে পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জাহাজটি বন্দরে ভিড়তে পারবে। কিন্তু পরে আর বন্দরে ভিড়তে না দেয়ায় জাহাজটি ফিরে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App