×

মুক্তচিন্তা

রাজা এডওয়ার্ড থেকে প্রিন্স হ্যারি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৩৯ এএম

রাজা এডওয়ার্ড থেকে প্রিন্স হ্যারি

বিয়েবিচ্ছেদ হওয়া আমেরিকান এক মহিলা ওয়ালিস সিম্পসনকে বিয়ে করেছিলেন ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড। সিম্পসনকে বিয়ে করার এডওয়ার্ডের এই সিদ্ধান্তে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল তখন। শুধু তাই নয়, ব্রিটেনে সাংবিধানিক সংকটও সৃষ্টি হয় এ বিয়ের জন্য। কারণ ‘চার্চ অব ইংল্যান্ড’ পতœী বেঁচে থাকাকালীন এমনকি কোনো বিয়েবিচ্ছেদ হওয়া ব্যক্তিদের পুনরায় বিয়ে করার অনুমতি দেয়নি। সেজন্য ১৯৩৬ সালে তাকে সিংহাসন ত্যাগ করতে হয়। এই দম্পতি পরে ফ্রান্সে বিয়ে করেন এবং সেই সঙ্গে রাজপরিবারের খেতাব ‘ডিউক এবং ডাচেস অব উইন্ডসর’ উপাধিও তাকে ত্যাগ করতে হয়। রাজা এডওয়ার্ডের ভাই রাজা ষষ্ঠ জর্জ তার স্থলাভিষিক্ত হন। গত শতাব্দীতে এ ঘটনা একটা বড় ধরনের কাঁপন তোলে রাজপরিবারে, কিছু হলেও নড়ে-চড়ে উঠে ব্রিটেনের রাজপরিবার। ভালোবাসার কাছে রাজ্য ছাড়ার এ অধ্যায় যদিও শুরু হয়েছিল ১৯৩৬ সালে, কিন্তু অনেক রক্ষণশীলতা থাকা সত্ত্বেও রাজপরিবারে এরকম ঝাঁকুনি এসেছে আরো দুয়েকবার। ব্রিটেনের তথা পশ্চিমা সমাজব্যবস্থার কারণেই হোক কিংবা ভালোবাসার বিশালতার কারণেই হোক- গত ৪০ বছরের মাঝে রাজপরিবারে বয়ে গেছে আরো ঝড়। বিশ্লেষকরা এই ঝড়কে ব্যাখ্যা করছেন এখনো ভিন্ন ভিন্নভাবে। আজকের রাজা চার্লসের বিবাহিত স্ত্রী ছিলেন এক সেরা সুন্দরী- ডায়ানা। ডায়ানার বিয়ে-পরবর্তী তাদের বিয়ে নিয়ে ছিল মুখরোচক আলোচনা বিশ্বজুড়েই। দুজনই হয়তো সুখী ছিলেন না। রাজপরিবার যেন ডায়ানাকে খুব একটা টানত না। সামাজিক কাজে ঘুরে বেড়াতেন বিশ্বময়, এমনকি আফ্রিকার কালো কালো শিশুদের কোলে টেনে নিতেন তিনি। এরই মাঝে জন্ম হয় তাদের দুই সন্তানের, উইলিয়াম আর হ্যারি। উইলিয়াম আর হ্যারি শিশু থাকাকালীনই এক দুর্ঘটনায় প্যারিসে নিহত হন ডায়ানা এবং ডোডি আল ফাহাদসহ গাড়ির চালক। এ হত্যাকাণ্ড নিয়েও আছে বিভিন্ন প্রচারণা। কিন্তু সময় থেমে থাকে না। ডায়ানা নিহত হওয়ার পর কার্যত চার্লসের বিয়েতে আর কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি যুক্তরাজ্যের চার্লস অব ইংল্যান্ডের আইন। তিনি বিয়ে করেন তার পুরনো প্রেমিকাকে। রানী এলিজাবেথ মারা যান গত বছর। উত্তরাধিকার সূত্রে চার্লস রাজা হয়েছেন, তার স্ত্রী ক্যামেলিয়া এখন ডিউক উপাধি নিয়ে রাজপরিবারের প্রধান অংশ হয়েই আছেন। ডায়ানার নিহত হওয়ার মধ্য দিয়েই চার্লস-ক্যামেলিয়ার প্রেমের সফল পরিণতি হয়। অর্থাৎ রাজতন্ত্রের আধুনিক ইতিহাস শুধুই রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের মধ্যেই শেষ হয়নি, বলা যায় এ দিয়েই শুরু হয়েছিল। এবারে একটা বিশাল ঢেউ লেগেছে রাজপরিবারে। যুক্তরাজ্য তো বটে, পশ্চিমের দেশগুলো এখন যেন চেয়ে আছে চার্লস-ডায়ানার ছেলে হ্যারির দিকে। যদিও হ্যারি গত কয়েক বছর থেকেই মাঝে মাঝে গণমাধ্যমে আসছেন। আমেরিকার এক জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী মেগান মার্কেলকে নিয়ে যখন ওঠাবসা শুরু করেছিলেন, তখন থেকেই তিনি আলোচনায় উঠে আসেন। তিনি কি রাজপরিবারের প্রতি বিদ্রোহ করবেন, না-কি মেগানের সঙ্গে ওঠাবসাই করবেন- এ ছিল এক জিজ্ঞাসা। কারণ তার পিতা চার্লস রাজপরিবারকে চ্যালেঞ্জ করে ডায়ানা স্ত্রী থাকালীন সময়ে ক্যামেলিয়াকে বিয়ে করেননি। বহু আলোচিত একটা দুর্ঘটনার মধ্য দিয়েই তিনি এমনকি ব্রিটেনের বিয়েবিষয়ক সাংবিধানিক সংকট কাটিয়ে উঠে শেষ পর্যন্ত ক্যামেলিয়াকে রানী করতে পেরেছেন। কিন্তু আধুনিক তথা খোলামেলা জীবনব্যবস্থার সঙ্গে নিজেকে খুবই প্রাসঙ্গিক করে হ্যারি বিদ্রোহই করে বসলেন। অনেক বাধা-বিপত্তি থাকা সত্ত্বেও শেষপর্যন্ত বিয়েই করলেন ওই অভিনেত্রীকে। হ্যারি নিজেও তার আরেক পূর্বসূরি এডওয়ার্ডের মতো রাজপ্রাসাদ ছেড়ে দিলেন, উঠলেন আমেরিকায়। বিশ্ব মিডিয়ায় এখন পর্যন্ত তারা এক সুখী দম্পতি হিসেবেই পর্যালোচিত, তাদের সন্তানও আছে। এ নিয়ে এর আগে হ্যারি আমেরিকার গণমাধ্যমগুলোতে সরাসরি আলাপই করেছেন। সেই থেকেই একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল, হ্যারি হয়তো একটা কিছু করবেন, যাতে রাজপরিবার কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবে। আর সেই ঢেউটাই বয়ে যাচ্ছে এখন ব্রিটেন, আমেরিকা ও বিশ্বজুড়ে। ‘স্পেয়ার’ নামের আত্মজীবনীমূলক বইয়ে হ্যারি তার ৩৮ বছরের জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন। রাজপরিবারের সঙ্গে তার দ্ব›দ্ব প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে, গণমাধ্যমে চুম্বক অংশগুলো আমরা দেখছি কিংবা পড়ছি। বিশেষত ভাই উইলিয়াম নিয়ে তার লেখাগুলো খুব বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। এ নিবন্ধের আলোচনা তার বই নিয়ে নয়, এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়তো চলবে আরো কয়েক দিন, কয়েক মাস সারা দুনিয়ায়। কিন্তু কার্যত স্পেয়ার দিয়ে কী বার্তাটা এলো সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে। রাজপরিবারের সমালোচনায় তিনি মুখর হয়েছেন। তিনি কি রাজপরিবার ছেড়েছেন? তিনি এখনো তার সেই আভিজাত্যের টাইটেল ‘ডিউক এন্ড ডাচেস অব সাসেক্স’ ব্যবহার করছেন। অর্থাৎ রাজপরিবারের অংশ হয়েই আছেন নর্থ আমেরিকায় বসবাস করেও। যদিও তাকে আর রয়েল হাইনেস হিসেবে সম্বোধন করা হবে না। ব্রিটেনে তো বটেই, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে তথা সারা বিশ্বেই এই রাজপরিবার একটা বিশেষ মর্যাদার জায়গায় আছে। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও দেশ চলছে তাদের ছাড়াই। রাজনীতিও চলে এই পরিবার ব্যতিরেকে। গণতন্ত্রের যাত্রাপথে এই পরিবার কোনো প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়নি কখনো। দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া যেখানেই তারা নিজেদের উপস্থাপন করেন, জনগণ তাদের সমীহ করে। রাজপরিবারকে সম্মান দেয়া ব্রিটেনের সুস্থ সংস্কৃতির যেন একটা অংশই। সে কারণেই দেখা যায়, এমনকি ‘স্পেয়ার’ প্রকাশ হওয়ার পর উইলিয়াম কিংবা তার স্ত্রী জনসমক্ষে এলে এ নিয়ে একটা প্রশ্ন পর্যন্ত কেউ করেনি। ১০ জানুয়ারি বই প্রকাশের প্রথম সপ্তাহেই প্রিন্স হ্যারির আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ প্রায় ৫ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে, এ ছাড়া অনলাইনসহ অন্যান্যভাবে বিক্রি আরো প্রায় দুই লাখ। এ নিয়ে সমালোচনা কিংবা বিতর্ক বিশ্বজুড়ে দেখা গেলেও রাজপরিবারের জনপ্রিয়তায় কোনো ছেদ পড়েনি ব্রিটেনে। এখন পর্যন্ত এ দেশের জরিপ সংস্থাগুলোর যেমন ‘মরী’ কিংবা ‘ইউ গভ’র জরিপে উইলিয়াম-হ্যারির (ভাইদের) মাঝে জনপ্রিয়তার শীর্ষেই আছেন উইলিয়াম ব্রিটেনে। আমেরিকায়ও সেই একই অবস্থা। তবে জনগণের অর্থে বসে বসে জীবন উপভোগ না করে মেধা এবং যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে প্রিন্স হ্যারি পৃথিবীতে একটা উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছেন, যা তিনি দুই বছর আগেই বলেছিলেন। অবশ্য এর আগে হ্যারি ব্রিটিশ এয়ারফোর্সেও কাজ করেছেন, যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। যা-ই করেন না কেন প্রিন্স হ্যারি, রাজপরিবারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার মতানৈক্যই তিনি তুলে ধরতে চেয়েছেন তার বই ‘স্পেয়ার’-এ, তবে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। বংশপরম্পরায় বেড়ে ওঠা আভিজাত্যের বিরুদ্ধে তিনি অবস্থান নেননি অর্থাৎ শ্রেণিগত অবস্থানে তিনি দৃঢ়ই থেকেছেন তার আত্মজীবনীমূলক বইটাতে। সেজন্যই তিনি বলেছেন, ‘গু ঢ়ৎড়নষবস যধং হবাবৎ নববহ রিঃয ঃযব সড়হধৎপযু, ড়ৎ ঃযব পড়হপবঢ়ঃ ড়ভ সড়হধৎপযু. ওঃ’ং নববহ রিঃয ঃযব ঢ়ৎবংং ধহফ ঃযব ংরপশ ৎবষধঃরড়হংযরঢ় ঃযধঃ’ং বাড়ষাবফ নবঃবিবহ রঃ ধহফ ঃযব চধষধপব.’

ফারুক যোশী : কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App