×

জাতীয়

নতুন সংবিধান প্রণয়নের ঘোষণা সাংঘর্ষিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩০ এএম

নতুন সংবিধান প্রণয়নের ঘোষণা সাংঘর্ষিক

ছবি: সংগৃহীত

দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মাসে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও যশোরে তিনটি জনসভা করেছেন। প্রতিটি জনসভাতেই আগামী নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন তিনি। আগামী ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। সেখানেও নৌকার পক্ষে ভোট চাইবেন দলীয়প্রধান।

এছাড়া দলটির সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকেই নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে ১৪ দলীয় জোট শরিকদের মধ্যেও। জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের দাবি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, তারা অংশও নেবে না। আর সরকারি দল আওয়ামী লীগ বলছে, বিদ্যমান সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের বাইরে তারা কোনো চিন্তা করছে না।

এদিকে বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের কথা বলেছেন বিএনপির সিনিয়র দুই নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এই দুই নেতা বর্তমান সংবিধান পুরোপুরি ফেলে দিয়ে একেবারেই নতুন সংবিধান তৈরির কথা বলেছেন। দুই নেতার বক্তব্যকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ।

দলটির নেতারা বলছেন, বাহাত্তরের সংবিধান ফেলে দেয়ার কথা বলে বিএনপি এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তারা অসংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির নেতাদের বক্তব্য আর তাদের দল ঘোষিত ২৭ দফা একে অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জানা গেছে, গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে ’৭২-র সংবিধান পুরোপুরি বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রয়ণয়নের প্রস্তাব দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তার প্রস্তাবকে সমর্থন করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

মিন্টুর মতে, বাহাত্তরের সংবিধান বারবার কাটাছেঁড়া না করে পুরোটাই ফেলে দিয়ে নতুন সংবিধান তৈরি করতে হবে। এ জন্য দলের স্থায়ী কমিটির প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

আবদুল আউয়াল মিন্টুর ওই বক্তব্যকে সমর্থন করে গয়েশ্বর বলেন, নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রস্তাবের সঙ্গে আমি একমত। বিএনপির ২৭ দফা প্রস্তাবে আছে দুইবারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। এই প্রস্তাবটি দুইবারের বেশি কেউ মন্ত্রী, এমপি হতে পারবেন না- এ পর্যন্ত বিস্তৃত করলে রাজনীতিবিদরা এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। বিএনপি ক্ষমতায় যাবে, কিন্তু তার আগে প্রস্তুতি নিতে হবে।

বিএনপির মহাসচিবসহ দলটির নেতাদের অনেকেই এই লাইনে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। বিএনপি নেতাদের এসব বক্তব্যকে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করছেন, সংবিধান বাতিলের বক্তব্য বিএনপির উচ্চ পর্যায়েরই পরিকল্পনা। বর্তমান আন্দোলন তাদের সেই ধারাবাহিকতারই একটা অংশ। আন্দোলনের নামে বিএনপি পূর্বের মতোই নাশকতার চেষ্টা করছে। সরকার হটাতে দেশে-বিদেশে চক্রান্ত করছে। বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করছে। বিদেশি দূতাবাসে ধরনা দিচ্ছে, যাতে তারা সরকার হটাতে সহযোগিতা করে।

এদিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপি দেশে বড় ধরনের নাশকতার চেষ্টা করছে। তারা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি এখন হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে বিদেশি প্রভুদের কাছে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে ‘স্যাংকশন’ আরোপের ক্রমাগত ষড়যন্ত্র করছে দলটি।

বিএনপির বিরুদ্ধে নাশকতা করার আশঙ্কার বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট কামরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপির জন্মই হচ্ছে অসাংবিধানিকভাবে। তারা অসাংবিধানিকভাবেই চলে। সেটাই তাদের পছন্দ। এভাবে ক্ষমতায় আসাই তাদের উদ্দেশ্য। ওয়ান ইলেভেনে তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কীভাবে ২ বছর ক্ষমতা প্রলম্বিত করেছে। সে রকমটা তারা এবারো চায়। সে লক্ষ্যেই তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিদেশে গিয়ে দেশের বদনাম করছে। বিদেশি কূটনৈতিকদের কাছে প্রতিদিন ধরনা দিচ্ছে। বিএনপি চায়, অসাংবিধানিক একটা সরকার এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিক। তাদের কর্মকাণ্ড ও বক্তৃতা-বিবৃতি সে রকমই।

আবদুল আউয়াল মিন্টু ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্যের বিষয়ে এডভোকেট কামরুল বলেন, বিএনপি যে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় যেতে চায়- তার প্রমাণ বিএনপির এই দুই নেতার বক্তব্য। তারা বাহাত্তরের সংবিধানকে সম্পূর্ণ বাতিল করতে চায়। যে সংবিধানের আমাদের স্বাধীনতা, মুজিবনগর সরকার, জাতির পিতার কথা বলা আছে। যে সংবিধানে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়াগুলোকে বাতিল করা হয়েছে- সেগুলো তারা আবার সন্নিবেশিত করতে চায়। সেটাই তাদের বক্তব্যে প্রতীয়মান। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যও আছে বিএনপি সে পথেই হাঁটছে। সেজন্য তারা যে কোনো ধরনের নাশকতা চালাতে পারে। সেই প্রচেষ্টাও তারা চালাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের এই আশঙ্কা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার। তিনি বলেন, এটা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্পষ্ট করে বললে মানুষ সহজে বুঝতে পারবে। তবে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করার বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র দুই নেতা যা বলেছেন- সেটা সাংঘর্ষিক এবং অবশ্যই চিন্তার কথা। কারণ কয়েকদিন আগেই তারা তাদের দলের পক্ষে ২৭ দফা ঘোষণা করেছেন। সেগুলোর একটি দফা হলো ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। যেটা বাহাত্তরের সংবিধানের মূল নীতি। আর দুই নেতা বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করার কথা বলছেন। কাজেই এই সংবিধান বাতিল করতে তো আর তাদের দফা থাকে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App