×

মুক্তচিন্তা

দেশি উদ্যোগ ও আর্থিক সংস্কারে বিদেশি শর্ত এবং পরামর্শ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৪০ এএম

বাংলাদেশ বর্তমানে আইএমএফ থেকে ফান্ড প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় নেগোসিয়েশন করছে। আইএমএফ এ ধরনের বিশেষ ফান্ড প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিতে সংস্কারধর্মী কঠিন শর্ত আরোপ করে। অনেকে মনে করেন, এত কঠিন শর্ত মেনে ফান্ড পাওয়া মানে নিজের অনেক বিপদ ডেকে আনা বা শর্ত পরিপালনে সংস্কারের কাজটি সুখকর হয় না। কিন্তু এখানে বিশেষভাবে বিবেচ্য থেকে যাবে কেন এই শর্ত আরোপ। এ শর্ত বিদ্যমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় পরিলক্ষিত দুর্বলতা, দুরবস্থা, সমস্যা সংকট থেকে অর্থনীতিকে উদ্ধার, অপারগতাকে পারঙ্গম করে তোলা, অনিয়ম সরানো বা মোদ্দাকথায় মেরামতের জন্য। কেউ স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেকে সুস্থ-সবল রাখতে পারলে তার জন্য ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন হয় না। তেমনি কোনো দেশ বা অর্থনীতি নিজেদের ব্যবস্থাপনায় দক্ষ বা পারঙ্গম না থাকে, নিজেদের ভুল পদক্ষেপ, অন্যায়-অনিয়মের কারণে অর্থনীতিকে দুর্বল করে ফেলে, তখন তাকে উদ্ধারের জন্য সংস্কারের প্রেসক্রিপশন আসবেই। সুতরাং আইএমএফের সংস্কারের শর্ত মানতে হিমশিম খাওয়া মানে নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা। ভাবিয়া করিলে কাজ ডাক্তার ডাকার প্রয়োজন পড়ে না। তখন কুইনাইন অসুখ সারাবে কিন্তু কুইনাইন সারাবে কে- এ কথা ভাবা অবান্তর বৈকি। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইনের সংস্কারে নতুন করে প্রণয়ন ও প্রবর্তনে আপত্তি জানিয়েছিল ২০১২ সালে এবং তারপরও ২০১২ সালের আইন ২০১৯-এর আগে আকিকা হয়নি। এখনো ভ্যাট আইনটির প্রয়োগ ও প্রবর্তন রক্ত-মাংসে মোটাতাজা হয়নি। ১৯৯১ সালের মূসক আইনটি সময়ের অবসরে, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপক বিস্তারের প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়ন যোগ্যতার আলোকে সংস্কারের যৌক্তিকতা ও দাবি ছিল অনেক দিনের। ২০০৫ সাল থেকে আইএমএফ আইনটির সংস্কারের তাগিদ দিয়ে আসছিল। বাংলাদেশ সেটা কানে তুলতে বিলম্ব করায় ২০১০ সালে ইসিএফ সুবিধা দেয়ার সময় ভ্যাট আইন পরিবর্তনের কঠিন শর্ত দেয়। ইসিএফের ২০১২ সালের কিস্তি ছাড়ের অন্যতম ট্রিগার বা শর্ত ছিল নতুন ভ্যাট আইন প্রবর্তন করতে হবে। ফলে আইনটির খুঁটিনাটি দিক পর্যালোচনা এবং সবার মতামতের ভিত্তিতে পরিবর্ধন-পরিমার্জন করে যথাসময়ে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে আইন প্রণয়নের পন্থা অবলম্বন না করেই আইন প্রবর্তনে বাধ্য হয় বাংলাদেশ। পরে তা গলধকরণে কার্যকর প্রবর্তনে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বা হচ্ছে। আরেকটি বিষয়, বেশ কয়েক বছর পত্রপত্রিকায় পাল্টাপাল্টি বিবৃতি ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জানা যাচ্ছিল- নিরীক্ষা ও হিসাব পেশা ও পদ্ধতির দেখা তথা নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানের জন্য একটি উপপরিদর্শন প্রতিষ্ঠান (এফআরসি) এবং তার জন্য আইন (এফআরএ) প্রণয়ন ও প্রবর্তনের বিষয়ে বেশ বাঁক ও স্নায়ুযুদ্ধ চলেছিল। এফআরএ এফআরসি নিয়ে সৃষ্টি হওয়া বিতর্ক এবং বহুপক্ষীয় কৌশলগত মন্তব্য চালাচালির মধ্যে লক্ষণীয় ছিল, শ্রীমান এফআরসি নিয়ে কেন এই দড়ি টানাটানি। এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যই বা কী? উভয় ক্ষেত্রে যে জিনিসটি কমন হিসেবে উঠে আসে, সেটি হলো- দাতা সংস্থার শর্তে ও বিদেশি পরামর্শকের মুসাবিদায় আইন তৈরি হওয়ায় আইনের চেহারা চরিত্র ও ভাবদর্শন নিয়ে মতান্তর। সোজা কথায় বালসুলভ এ প্রশ্ন উঠছে- ‘হাঁটব আমি বাংলাদেশের রাস্তায়, মাথায় কেন ব্রিটিশ ট্রাফিক আইন।’ বিদেশি পরামর্শে দেশি উদ্যোগের বাস্তবায়ন যে বাস্তবতার আশপাশে ঘোরাফেরা করে, এটা বোঝার তাগাদা দিচ্ছে এসব বিষয়। ১৯৯১ সালে ভূতপূর্ব ‘বিক্রয় কর’ এর স্থলে এবং অনেক দেশে প্রচলিত ‘গুডস এন্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স’ (জিএসটি)-এর আদলে ‘ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স’ (ভ্যাট) ওরফে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) প্রবর্তিত হয়েছিল। সে সময় নতুন গণতান্ত্রিক সরকারের প্রথম বছরেই এই আইন প্রবর্তনের সময় বেশ বিতর্ক, অনিচ্ছা-অনীহা ইত্যাদি উচ্চারিত হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিসরে দেখা গেল আইনটি টিকে গেছে। পাশের দেশে বাংলাদেশের ভ্যাট আইনের প্রশংসা মিলেছে। তবে সব সময় যা হয়ে থাকে, বাস্তবায়ন পর্যায়ে এর অনেক ধারা পরিবর্তন-পরিমার্জনের মধ্যে পড়ে। প্রতি বছরের ‘অর্থ বিল’-এ তা প্রস্তাব করাও হয়েছে, গৃহীত হয়েও আসছে। মূসক আইনের সংস্কারের বিদেশি পরামর্শ ও শর্ত অনেক দিনের। এ জাতীয় কাজে বিদেশি পরামর্শকের কর্মসংস্থান হয় ভালো। ২০০৭-০৮ সালে সেই পরামর্শ ও দাবির মোকাবিলায় বলা হয়েছিল- দেশীয় আইন, সংস্কৃতি ও বাস্তবতার আলোকে নিয়মিত সংস্কার করা হবে। বিদেশি পরামর্শকের মুসাবিদায় দেশীয় আইনের চেহারা-চরিত্র অনেক পাল্টে যায়। কেননা বিভিন্ন উন্নত অর্থনীতির ‘বেস্ট প্র্যাকটিস’গুলো ‘কাট এন্ড পেস্ট’ করে প্রণীত গুরুপাক আইন বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতিতে হজমযোগ্য হয় না বলেই তা বাস্তবায়নে নানা দুর্বিপাক সৃষ্টি হয়, উদ্ভব হয় নানা সমস্যার। এ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের বহু আইন তৈরি ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে ঘটেছে। বিদেশি পরামর্শে ও শর্তে বাংলাদেশে বহু প্রতিষ্ঠান ভাঙা-গড়া হয়েছে। আবার বানানো ভবন ভেঙে পূর্বের অবস্থায় ফেরত যেতে হয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সংসার ভেঙে খানখান হয়েছে বারবার। দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোগ নিয়ন্ত্রণের নামে এন্তার পোষক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ইকোনমিক জোন বংশে ইদানীং নতুন প্রজন্মের ছড়াছড়ি। নিরীক্ষা ও হিসাব ব্যবস্থা উন্নয়ন ও স্বচ্ছতার সঙ্গে আর্থিক প্রতিবেদন প্রণয়নের স্বার্থে ‘এফআরএ’র আওতায় ‘এফআরসি’ গঠনে দাতা সংস্থার শর্ত ও তাগিদ (ট্রিগার) ২০০৩ সাল থেকে। কিন্তু এই আইন প্রণয়ন বারবার শেষ হয়েও শেষ করা যায়নি। আইনের উদ্দেশ্য বিধেয়র মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্যতার প্রশ্নে অস্পষ্টতা, অন্তর্দ্ব›দ্ব, দ্বিধা ও সাংগঠনিক সমস্যা বারবার উঠে আসায় তা প্রণয়ন ও প্রবর্তন প্রলম্বিত হয়েছে। দেশে সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষা ও হিসাব ব্যবস্থা ও পেশা তদারকি প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান থাকতে তার ওপর আরেকটি খবরদারি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা ও কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বরং বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানের সার্বিক দুর্বলতা এবং এর সক্ষমতা তথা দক্ষতার ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরামর্শ উঠছে। অতীতে অনেক সমান্তরালধর্মী এরূপ প্রতিষ্ঠান এভাবে গড়ে কার্যকর করা যায়নি। বিদেশি পরামর্শ ও শর্ত মানতে গিয়ে শুধু নতুন আইন তৈরি আর সংস্থা নির্মাণ করার যৌক্তিকতা সে নিরীখে ভেবে দেখা দরকার। বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজস্ব, হিসাব নিরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইনকানুনগুলো নতুন মলাটে প্রমিতকরণের অনেক কাজ শেষ পর্যায়ে। রাজস্ব আইনের সংস্কারের এ উদ্যোগ সহসা সচকিত নয়, দীর্ঘদিন ধরে চলছে পরিকল্পনা আর প্রাজ্ঞ পরামর্শকদের প্রয়াস পারঙ্গমতা। আইন সংস্কারের সব উদ্যোগের আগ্রহ অভিপ্রায়ে কোনো কমতি নেই, কিন্তু বিদ্যমান আইনে ‘শতেক শতাব্দী ধরে নামা শিরে অসম্মানভারের’ লাঘব প্রকৃত প্রস্তাবে ঘটছে কিনা, সংস্কারকৃত আইন কতটা বাস্তবায়নসম্মত, রাজস্ব আহরণকারী এবং দাতার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা এবং তার রূপকল্প ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ আবশ্যকতা থেকে যাচ্ছে। আমরা জানি, চিন্তা থেকে যেমন কাজের উৎপত্তি, আইনের প্রয়োগ; তেমনি আইনের দৃষ্টিভঙ্গি ভেদে বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে। যারা আইন তৈরি করেন তাদের সঙ্গে যাদের ওপর এর প্রয়োগ হবে তাদের মধ্যকার সম্পর্কেরও একটা বিশেষ ভূমিকা আছে আইনের দৃষ্টিভঙ্গি নির্মাণে। এখানে তৃতীয় আরেক শরিকের কথাও এসে যায়, যাদের মাধ্যমে আইনটির প্রয়োগ হবে, তাদের মনোভাব, মনোভঙ্গি, সক্ষমতা-অক্ষমতার ব্যাপারটিও বিশেষভাবে বিবেচ্য থেকে যায় আইনের প্রয়োগ তথা বাস্তবায়নযোগ্যতার ক্ষেত্রে। কেননা আইন প্রয়োগের দায়িত্ব আইনপ্রণেতার নয়, নির্বাহী বিভাগের। আইন পরিষদ যদি মনে করে এ আইন অন্যের জন্য, পরিষদ সদস্যদের ওপর সব সময় বা সমভাবে বর্তাবে না এবং নির্বাহী বিভাগও যদি ভাবে, এ আইন নিজের ওপর ততটা নয়, যতটা অন্যের ওপর প্রয়োগের জন্যই; তাহলে যাদের ওপর আইনের প্রয়োগ তারা হয়ে পড়েন প্রতিপক্ষ আইনপ্রণেতা ও প্রয়োগকারী। এই প্রতিপক্ষতার পরিবেশেই আইনের দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে যায় নিবর্তনমূলক, প্রতিরোধাত্মক। এই প্রেক্ষাপটে আইন উপেক্ষার, অমান্যের ও অগ্রাহ্যের পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজস্ব আইনগুলোর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি হলে দেখা যাবে এ আইন জন্মগতভাবে ব্রিটিশ, দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে ঔপনিবেশিক এবং প্রায়োগিক দিক থেকে কিছুটা জটিল, নিবর্তন ও প্রতিরোধাত্মক। এ দেশে ভূমি কর বা রাজস্ব আদায়ের প্রথা প্রাগৈতিহাসিক আমল থেকে চলে এলেও এ দেশে আধুনিক কর আইনগুলো প্রবর্তিত হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে। প্রথম থেকেই আদায়ের ক্ষেত্রে করদাতাদের প্রতি অযাচিত আচরণ, পারস্পরিক অবিশ্বাস, ফাঁকিজুকি প্রতিরোধাত্মক ঔপনিবেশিক মনোভাব প্রাধান্য পায়। সব পর্যায়ে পরিপালনীয় বিধিবিধানের ভাষা জটিল ও দ্ব্যর্থবোধক হয়ে ওঠে। ‘তোমার আয় হোক আর না হোক অর্থাৎ বাঁচো আর মরো রাজস্ব আমার চাই’- এ ধরনের আইনগত দৃষ্টিভঙ্গির বদৌলতে কর আদায়কারী বিভাগের সঙ্গে করদাতাদের সম্পর্ক জবরদস্তিমূলক, পরস্পরকে এড়িয়ে চলার কৌশলাভিমুখী। পরস্পর অবিশ্বাসের ও প্রতিদ্ব›দ্বী পরিবেশে কর নির্ধারণ ও পরিশোধের ক্ষেত্রে পরস্পরকে এড়িয়ে চলার এবং সে লক্ষ্যে অনৈতিক আঁতাতের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির সংস্কৃতিরও সূত্রপাত ঘটে। দুর্নীতিগ্রস্ততার পরিবেশ সৃষ্টিতে আইনের মধ্যেই যেন রয়ে যায় পরোক্ষ প্রেরণা বা সুযোগ। এমন অনেক আইন আছে, যা প্রয়োগ পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে বেআইনি আচরণকে উস্কে দেয়। এ দেশের রাজস্ব কিংবা আর্থিক প্রতিবেদন প্রণয়ন নিরীক্ষা ও হিসাব নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত আইন হবে এ দেশেরই আবহমান অর্থনীতির আবহে লালিত ধ্যান-ধারণার প্রতিফলক, হবে সহজবোধ্য, জটিলতা পরিহারী এবং এর প্রয়োগ হবে স্বাচ্ছন্দ্যে সর্বজনীন ব্যবহার উপযোগী। তবেই বাড়বে এর গ্রহণ এবং বাস্তবায়নযোগ্যতা। অর্থনীতির বিভিন্ন পর্যায়ে অবস্থানরত করদাতারা যেন অভিন্ন আচরণে আইনগতভাবে কর প্রদানে দায়িত্বশীল হতে স্বতঃস্ফূর্ততা বোধ করেন। কর ‘আদায়’ নয়, কর আহরণে করদাতা ও কর আহরণকারীর মধ্যকার দূরত্ব যত কমে আসবে, যত অধিকমাত্রায় করদাতা কর নেটের আওতায় আসবেন, তত কর রাজস্ব আহরণে সুষম, সহনশীল ও দায়িত্ববোধের বিকাশ ঘটবে। এরূপ পরিস্থিতিতে করদাতাকে তাড়া করে ফেরার মতো স্পর্শকাতরতার অবসান ঘটবে।

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App