×

জাতীয়

জাপানি দুই শিশু কার জিম্মায় থাকবে রায় ২৯ জানুয়ারি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:৪১ পিএম

জাপানি দুই শিশু কার জিম্মায় থাকবে রায় ২৯ জানুয়ারি

ছবি: ভোরের কাগজ

জাপানি দুই শিশু কার জিম্মায় থাকবে রায় ২৯ জানুয়ারি

জাপানী বংশোদ্ভুত সেই দুই শিশুর অভিভাবকত্বের আইনি লড়াইয়ের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। শিশু দুইটি বাবার, নাকি মায়ের জিম্মায় থাকবে সে বিষয়ে রায়ের জন্য আগামী ২৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।

রবিবার (২২ জানুয়ারি) ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমানের আদালতে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এরপর বিচারক মামলার রায়ের জন্য আগামী ২৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। জাপানি মা নাকানো এরিকোর পক্ষে আইনজীবী শিশির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিন জাপানি মা নাকানো এরিকোর পক্ষে আইনজীবি শিশির মনির যুক্তিতর্কে আদালতে বলেন, বড় মেয়ের বয়স ১৩ বছর, মেজো মেয়ের বয়স ১১ বছর ও ছোট মেয়ের বয়স ৯ বছর। ঢাকায় আনা দুই মেয়েদের ১৮ বছর হতে এখনো ৫-৭ বছর বাকি। টোকিয়াতে বিশ্বের ভালো ভালো স্কুল কলেজ রয়েছে। মায়ের কাছে থাকলে তারা ভালো থাকবে। ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারবে। মেয়েরাও চায় মায়ের কাছে থাকতে। এছাড়া বাবাকে মেয়েদের খরচ দেয়ার কথা বলা হলেও তিনি উচ্চ আদালতের আদেশ মানেন নি।

অন্যদিকে জাপানি বাবা ইমরান শরীফের পক্ষের আইনজীবী বলেন, বাদী বিবাদীর বিয়ে মুসলিম শরীয়ত অনুযায়ী হয়েছে। এতে বাচ্চাদের জিম্মার (দায়িত্ব) বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মেয়ে সন্তানরা মায়ের কাছে থাকবে। সাবালক হওয়ার পর বাবার জিম্মায় থাকতে পারে। তবে আইনে মায়ের জিম্মা হারানোর বিষয়ে এটাও বলা আছে, কোন মা যদি বৈবাহিক থাকা অবস্থায় আবাসিক ভবন থেকে দূরে বসবাস করেন তাহলে মা সন্তানদের জিম্মা হারাবেন। কারণ ভরণ পোষণের জন্য বাবাকে দরকার।

এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি জাপানি দুই শিশু ও তাদের বাবা মাকে বক্তব্য শুনেছেন পারিবারিক আদালত। একই সঙ্গে আদালত বাবা ও মায়ের বক্তব্যও শুনেছেন।

উল্লেখ্য, মা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। ১২ বছরের সংসারে তারা তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তারা হলো জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।

এরপর ওই দুই মেয়েকে জিম্মায় পেতে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গতবছর জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নারী। তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক। কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাই কোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সাথে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।

হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেয়ার আদেশ দেয়।

এরপর গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি হবে পারিবারিক আদালতে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় আপিল বিভাগ। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।

এদিকে সন্তানসহ পালানোর চেষ্টার অভিযোগে জাপানি মা এরিকো নাকানোর বিরুদ্ধে সন্তানদের বাবা ইমরান শরিফ গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেন। যা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিব পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App