×

সারাদেশ

আলফাডাঙ্গায় বাংলার আরেক ‘আসমানিকে’ সহায়তা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:০৬ পিএম

আলফাডাঙ্গায় বাংলার আরেক ‘আসমানিকে’ সহায়তা

ছবি: ভোরের কাগজ

‘আসমানিরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও’। আসমানীর দুর্দশা ফুটে উঠেছিল পল্লীকবি জসীম উদদীনের বিখ্যাত ‘আসমানি’ কবিতায়। ছালেহা বেগমের জীবনও কবিতার আসমানীর দুর্দশার চেয়ে কম কিছু নয়।

বাংলার অপর এক ‘আসমানি’ সালেহা বেগমকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় শাহ্জালাল মৎস্য অ্যান্ড ডেইরি ফার্ম পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

রবিবার (২২ জানুয়ারি) বিকেল চারটায় দিকে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে ইউএনও’র সিএ তারক কুমার মজুমদারের নিকট অসহায় বৃদ্ধা সালেহা বেগমের ঘর নির্মাণ কাজের সহায়তা হিসেবে ২৫ হাজার টাকা অর্পণ করেন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী বিশিষ্ট সাংবাদিক শিল্পপতি তাজমিনউর রহমান তুহিন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম,উপজেলা ক্যাবের সভাপতি সাংবাদিক কবীর হোসেন, পৌর মানবাধিকার কমিশনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির,প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক মিয়া রাকিবুল,আজিজুর রহমান প্রমুখ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিধবা বৃদ্ধা সালেহা বেগমের বয়স ৮৫ ছুঁই ছুঁই। বাড়ি আলফাডাঙ্গা পৌরসভার বুড়াইচ এলাকায়। স্বামী ও সন্তান না থাকায় অসহায় এ বৃদ্ধা করুণ অবস্থায় দিনাতিপাত করছিলেন। সালেহা বেগমের এই ধরাধামে কিছু নেই। পরের জমিতে করা জীর্ণ এক ঘরে বাস স্বামীহারা নিঃসন্তান এই নারীর। তাকে দেখভাল করার মত কেউ নেই। ভাঙা দরজার সামনে সারাদিন শুয়ে শুয়ে বৃদ্ধা এক পলকে তাঁকিয়ে থাকেন বাইরে। এক বেলা খাবার জোটে তো পরের বেলা উপোস। সালেহা বেগমের স্বামী মারা গেছেন ২৭ বছর আগে। স্বামীর সামান্য ভিটেবাড়িটিও বিক্রি করতে হয়েছিল অর্থাভাবে। হতদরিদ্র হলেও সরকারের দেওয়া নানা সামাজিক কর্মসূচির মধ্যে কেবল যৎসামান্য বিধবা ভাতা পান অশীতিপর এই বৃদ্ধা। বার্ধক্যজনিত কারণে শারীরিক অক্ষমতাও সালেহা বেগমকে পেয়ে বসেছে। রোগেশোকে দিনমান কাটে বিছানায়। সঙ্গী বলতে তার সঙ্গে থাকা দুটি বিড়াল। অসুস্থ হওয়ায় নিয়মিত সেবনের ওষুধও অর্থাভাবের কারণে তার কাছে যেন অমূল্য।

পরে তার এই দুঃখদুর্দশার কথা উপজেলার বুড়াইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজা বেগমের একটি লেখনি 'হৃদয়ে আলফাডাঙ্গা' নামে একটি গ্রুপে উপস্থাপন করা হয়। এরপর বিষয়টি আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হকের নজরে আসলে ওই বৃদ্ধাকে দেখতে যান তিনি। পরে বৃদ্ধাকে তাৎক্ষণিক একমাসের খাদ্য সামগ্রী ও শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল সহায়তা দেন ইউএনও। সেইসাথে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে ওই বৃদ্ধাকে একটি নতুন ঘর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি।

ইউএনও’র এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে অসহায় বৃদ্ধার ঘর নির্মাণে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন তাজমিনউর রহমান তুহিন। তাজমিনউর রহমান উপজেলার বিদ্যাধর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আলী আহমেদ মৃধার ছেলে। তিনি আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া, লেবাজ সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান তিনি।

এ বিষয়ে শাহ্জালাল মৎস্য অ্যান্ড ডেইরি ফার্মের সত্ত্বাধিকারী তাজমিনউর রহমান তুহিন বলেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া সমাজের সব সামর্থ্যবান মানুষেরই দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই অসহায় বৃদ্ধা সালেহা বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছি।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হক বলেন, আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় অসহায় বৃদ্ধা সালেহা বেগমকে একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। মানবিক এই কর্মকাণ্ডে সমাজের সামর্থ্যবানদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।

‘আসমানিরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও’। ‘আসমানি’র দুর্দশা ফুটে উঠেছিল পল্লীকবি জসীম উদদীনের বিখ্যাত ‘আসমানি’ কবিতায়। ছালেহা বেগমের জীবনও কবিতার আসমানির দুর্দশার চেয়ে কম কিছু নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App