×

সারাদেশ

অস্থির রোহিঙ্গা ক্যাম্প, হুমকিতে নিরাপত্তা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:১৪ পিএম

আধিপত্য বিস্তার করতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র শক্তি প্রদর্শন শুরু করায় পুরো ক্যাম্পজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। গত চার মাসে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন ২৩ জন। গত ১৮ জানুয়ারি বান্দরবানের তমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া জিরো পয়েন্টে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যুর পরেই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অত্যাধুনিক এম-১৬ ও একে-৪৭ রাইফেলের মতো ভারী অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি সামনে আসে।

তমব্রু সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে গিয়ে নিহত হন গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা। এ ছাড়া ক্যাম্পের পাহাড়ি এলাকা ও সীমান্তের জিরো পয়েন্টে রয়েছে অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা ও গুদাম। ফলে কক্সবাজারের নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়ছে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

জেলা পুলিশ বলছে, বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবির পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শনিবার রাতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনিসহ তার সংগঠনের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে পোস্টার লাগানো হয়েছে। বার্মিজ ভাষায় এসব পোস্টার লাগানো হয়। তবে কারা এসব পোস্টার লাগিয়েছে তার কোনো তথ্য জানাতে পারেনি কেউ।

আট নম্বর আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফারুক আহমেদ বলেন, বিভিন্ন ক্যাম্পে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। পোস্টারে থাকা নামগুলোর সবাই সন্ত্রাসী। তারা একাধিক মামলার পলাতক আসামি। আমরাসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজছি। ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে আমাদের নজরদারি রয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে।

সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের স্বাধীকার আদায়ে নয় বরং মাদক ব্যবসা এবং ক্যাম্পে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে সশস্ত্র মহড়া চালাচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। একই সঙ্গে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ব্যবহার করছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। জিরো পয়েন্ট ক্যাম্পে মজুত করছে গ্রেনেড, রকেট লঞ্চারসহ ভারী অস্ত্র। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধির ওপর নজর রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে ওয়াকিটকি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটস অ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, ইম্যুসহ বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করছে তারা। অনেকে আবার মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজে লাগাচ্ছে।

বর্তমানে ক্যাম্পজুড়ে রাজত্ব করছে আরসা ও নবী হোসেন গ্রুপ। আর ক্যাম্পে রয়েছে তাদের উপগ্রুপ। মূলত ইয়াবা ব্যবসাকে ঘিরেই খুনের মহড়া চলে তাদের মাঝে। তাদের উগ্রতা ক্যাম্প ছাড়িয়ে প্রভাব পড়ছে স্থানীয়দের মাঝে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্যমতে, চার মাসে উখিয়ার একাধিক আশ্রয়শিবিরে আরসার সঙ্গে নবী হোসেন বাহিনীর একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২৩ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ রোহিঙ্গা মাঝি এবং পাঁচজন আরসার সদস্য।

ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি ফারুক আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের এসব গ্রুপগুলো আধিপত্য বিস্তারে একে অপরের ওপর হামলা, ক্যাম্পে খুন, অপহরণসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। আমরা ৮ এপিবিএন পুলিশ সব সময় কঠোরভাবে এসব সন্ত্রাসীকে দমন করতে কাজ করছি। অনেককে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন ক্যাম্পে ইনটেনসিভ প্যাট্রোলিং ও ব্লক রেইড পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি গ্রেনেড উদ্ধারের বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে না। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। নবীর ঘরে গ্রেনেড কীভাবে এসেছে, তা জানতে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App