×

সম্পাদকীয়

সীমান্তে মিয়ানমারের গোলাগুলি : বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:১০ এএম

সীমান্তে মিয়ানমারের গোলাগুলি : বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে আকাশসীমা লঙ্ঘন করে সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে বারবার। ওই সময় সীমান্তজুড়ে বিরাজ করছিল থমথমে অবস্থা। সেসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে কয়েকবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে সতর্ক করা হয়েছিল। এরপর পরিস্থিতি কিছুদিন দৃশ্যত শান্ত ছিল। নতুন করে সীমান্ত উত্তেজনা স্বাভাবিকভাবে উদ্বেগ বাড়বে। জানা যায়, বুধবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে অন্তত একজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন এবং একজন আহত হয়েছেন। তবে সীমান্তের একাধিক সূত্র দাবি করেছে, গোলাগুলিতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশকিছু ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে অনেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি প্রায় দেখছি আমরা। বিষয়টি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ? না এটি মিয়ানমারের একটি ফাঁদ। তারা বাংলাদেশকে এ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার জন্য উসকানি দিচ্ছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের করণীয় কী- তা দ্রুত ঠিক করতে হবে। তারা হয়তো চাচ্ছে অভ্যন্তরীণ এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে বসবাসরত বাকি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেটাই চাচ্ছে। তারা এ ধরনের কোনো ফাঁদ পেতে থাকলে এবং তাতে আমরা পা দিলে সেটা আমাদের জন্য নেতিবাচক ফল বয়ে আনবে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বিষয়টিকে মিয়ানমার সব সময় এড়িয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বারবার বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের অবস্থান এবং সমাধানের জন্য বক্তব্য তুলে ধরেছেন। অনেক দেশ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিলেও ভূরাজনীতির কারণে অনেক দেশ এ ব্যাপারে বিরত থেকেছে। এর মধ্যে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বিজিপির ব্যাপক সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এখন সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। মিয়ানমারের এসব আচরণকে আগ্রাসন হিসেবেই দেখছে বাংলাদেশ। সীমান্ত দিয়ে আর একটি রোহিঙ্গাও যেন বাংলাদেশে প্রবেশ না করতে পারে তার জন্য নজরদারি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আন্তরিক ভূমিকাও জরুরি। বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতায় এখন চীন ও ভারতকে গুরুত্বের মধ্যে নিতে হবে। এই দুটি দেশকে কাজে লাগাতে পারলে মিয়ানমারের অবস্থার পরিবর্তন হবে। সর্বোপরি, মিয়ানমারে দুপক্ষের মধ্যে এ লড়াইয়ে সীমান্তসংলগ্ন অঞ্চলের সাধারণ বাংলাদেশি নাগরিকদের সুরক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের। যুদ্ধ বা কোনো সামরিক ব্যবস্থা নয়, কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মিয়ানমারকে বাংলাদেশের সীমান্তে আতঙ্ক ছড়াতে বন্ধ করতে বা আন্তর্জাতিক সীমান্ত অঞ্চলে অভিযানের আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করতে বাধ্য করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App