×

সারাদেশ

দুর্ভোগ-দুর্নীতির অপর নাম সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:৪১ পিএম

দুর্ভোগ-দুর্নীতির অপর নাম সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

ছবি: ভোরের কাগজ

দুর্ভোগ-দুর্নীতির অপর নাম সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

ছবি: ভোরের কাগজ

দুর্ভোগ-দুর্নীতির সর্বোচ্চ শিখরে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। দুর্নীতির বিষয়ে জেলাভিত্তিক তালিকা করা হলে পাসপোর্ট অফিসের অবস্থান হবে এক নম্বরে। এই অফিসের সহকারী পরিচালক সাজাহান কবিরের অপরাধের তালিকা এতই লম্বা এবং তার খুঁটির জোর এতই শক্ত যে তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার মতো কেউ নেই। তিনি পাসপোর্টের মহাপরিচালককেও তোয়াক্কা করেন না।

সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতির তথ্যানুসন্ধান করতে যেয়ে স্তম্ভিত হওয়ার মত তথ্য বের হয়ে এসেছে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলায়, সাজাহান কবিরের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইউনিয়ন ও গ্রামের ভুয়া ঠিকানা দেখিয়ে শতশত পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। একাধিক উপজেলায় পাসপোর্টের স্থায়ী ঠিকানায় সেইসব ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয়রা তাদেরকে চেনেন না, অথচ তাদের নামে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। ভোটার তালিকা ও জন্ম নিবন্ধনে তাদের কোন অস্তিত্ব নেই। অনেকে অভিযোগ করেছেন, এইসব পাসপোর্টগুলো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। তাদের বিদেশে পাড়ি দিতে ব্যবহার করা হয়েছে।

আরো জানা যায়, সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিস থেকে ইস্যু হওয়া এমনই পাসপোর্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। একই পাসপোর্ট নাম্বারে একাধিক ব্যক্তির নামে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। সদর উপজেলার শিবপুর ও আগরদাড়ি ইউনিয়নে, গ্রামের নাম আবাদেরহাট ব্যবহার করে লতিফুর রহমানের মেয়ে সাইন আরা আক্তারের নামে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আবাদেরহাটটি শিবপুর ও আগরদাড়ি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদ্বয় এবং পরিষদের স্ব স্ব ইউপি সদস্য ও এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, শিবপুর ও আগরদাড়ি ইউনিয়নে আবাদেরহাট নামে কোনো গ্রাম নেই। এই নামের সেখানে একটি দীর্ঘদিনের বাজার আছে।

পাসপোর্টধারী ওই ব্যক্তির অস্তিত্ব আছে কি জানতে চাইলে তারা বলেন, যেখানে আমাদের ইউনিয়নে আবাদেরহাট নামে কোন গ্রামের অস্তিত্ব নেই সেখানে পাসপোর্ট ইস্যু হওয়া ওই ব্যক্তির অস্তিত্ব থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

একই নাম্বারের পাসপোর্টধারী অপরজন, জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চান্দিমুখা গ্রামের। সঠিক তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট করেছেন সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে। ভারত গমনের ভিসা নিয়ে ভ্রমন কর দিয়ে ইমিগ্রেশন ক্রস করতে না পারায় দেখা হয়নি অসুস্থ মায়ের সাথে। শুধু তাই নয় ইমিগ্রেশন ক্রস করতে না পারায় চলে আসেন পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কাছে। তিনি আরেকটি বই বানানোর পরামর্শ দেন। আমার বইতে মেয়াদ আছে, আমি আবার কেন বই বানাবো জানতে চাইলে তিনি আমার সাথে মারাত্মক দুর্ব্যবহার শুরু করেন। অফিস থেকে বের হয়ে যান। আমার অফিস আমি যেভাবে চালাবো সেভাবে চলবে। এভাবে বর্ণনা করেন এই পাসপোর্টধারী।

[caption id="attachment_400371" align="alignnone" width="1591"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption] এদিকে এসব ভুয়া পাসপোর্টধারীদের অবাদে বিদেশ ভ্রমণ লক্ষ করা গেছে। দালালের মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা নিয়ে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সদ্য পদোন্নতি পাওয়া দুর্নীতিবাজ, ঘুসখোর উপ-পরিচালক ওইসব ব্যক্তির নামে পাসপোর্ট ইস্যু করেছেন। যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

ওদিকে, কর্মের উদ্দেশ্যে সরকারি ব্যাবস্থাপনায় বিদেশগামীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। সেখানে প্রশিক্ষণরত বিভিন্ন দেশের ভিসাপ্রাপ্ত পাসপোর্টধারীরা পাসপোর্ট অফিসের সীমাহীন দূর্নীতি ও ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন। নাম না প্রকাশের শর্তে ৯০ শতাংশ প্রশিক্ষণরত পাসপোর্টধারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও অর্থ না দিলে মাসের পর পাসপোর্ট ডেলিভারি না দেয়াসহ (নির্দিষ্ট দালাল বাদে) ফরম জমা দেওয়ার সময় ফরমে কোন ভুল না থাকলেও একাধিক বার ফরম জমা বানিয়ে ফেরত দেয়া হয় বলে জানান। শুধু তাই নয়, একটা বইতে মায়ের নাম সংশোধনে ২৯ হাজার টাকা ঘুস নেয়াসহ উপ-পরিচালকের দুর্ব্যবহারের কথা তুলে ধরেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মচারী (পদবি ডিআইপি) বলেন, দৈনিক চার শতাধিক ফরম জমা হয়। দালাল ছাড়া সরাসরি কোন ফরম জমা দিতে গেলেই তৈরি হয় নানারকম বিপত্তি। দালালের এসএমএস ছাড়া ফরম জমা দিতে গেলে ফরমে ভুলত্রুটি বের করে আবেদনকারীকে ঝামেলা পোহাতে হয়। যে কোন ফরম দালালের মাধ্যমে জমা দিলে সব ভুল হলেও মুহূর্তে জমা হয় নির্দিষ্ট মডিউলে।

তিনি আরো বলেন, পাসপোর্টের আবেদন ফরম জমা দেওয়ার মডিউল দুটি। আবেদনকারীদের ফরম জমা দেওয়ার লাইন একই কিন্তু কম্পিউটার এন্ট্রির মডিউল আলাদা। একটা মডিউলে জমা হয় সম্পূর্ণ সহকারী পরিচালক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত দালাল চক্রের এসএমএস পাওয়া তালিকা ধরে। অন্য মডিউলে এক থেকে তিন হাজার টাকা বাঁচানোর জন্য বারবার ঝাড়ুদার লাভলুর (আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ) মাধ্যমে। শুধুমাত্র এসএমএস পাওয়া ফরম নিদিষ্ট সময়ে স্ক্যানিং করে ঢাকায় পাঠানো হয়। অসুস্থ মানুষের পাসপোর্ট আবেদন ফরমও দীর্ঘদিন পড়ে থাকে অতিরিক্ত টাকা না দেয়ায়। সংশোধনের জন্য আসলে লাভলু ও আমিনুরের (ডিআইপি) কাজে তাদের যাওয়া লাগবেই। নাম সংশোধনে আট হাজার। বয়স সংশোধনে বছর প্রতি আট হাজার। পাঁচ বছর হলে ৪০ হাজার টাকা ঢাকায় পাঠানোর কথা বলে নেয়া হয়। সাজাহান কবির ঝাড়ুদার লাভলুর মাধ্যমে জেলাব্যাপী গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী দালাল চক্র।

এসব দুর্নীতি, অনিয়মের বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক সাজাহান কবিরের কাছে সরাসরি তার অফিসে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু কাগজপত্রের বিষয় এড়িয়ে যান এবং কিছু বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। প্রতিদিন চার’শ ফরম জমার হওয়ার কথা স্বীকার করে অন্য বিষয়গুলো এড়িয়ে যান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App