×

আন্তর্জাতিক

‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ ঠেকাতে যে তথ্য গোপন করেন আইজেনহাওয়ার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:৪৩ পিএম

‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ ঠেকাতে যে তথ্য গোপন করেন আইজেনহাওয়ার

রয়েল উইলিয়ামস

১৯৫২ সালের নভেম্বরে কোরীয় উপদ্বীপের ইয়ালু নদীর কাছে কিংবদন্তি ও মহানায়কে রূপান্তরিত হয়েছিলেন পাইলট রয়েস উইলিয়ামস।

এখন ৯৭ বছর বয়সে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সেই স্মৃতিচারণই করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই নেভাল অ্যাভিয়েটর জানিয়েছেন সেদিনের সেই ভয়ংকর ঘটনা গোপন না করলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেত বিশ্ববাসী।

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সিএনএনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ক্যালিফোর্নিয়ায় উইলিয়ামসকে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘নেভি ক্রস’ দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার অনুষ্ঠিত সেই অনুষ্ঠানে নেভি সেক্রেটারি কার্লোস দেল টোরো বলেন, স্পষ্টতই উইলিয়ামস যা করেছিলেন তা সত্যিই অসাধারণ ছিল। এর জন্যই তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।

সেদিনের সেই ২৭ বছর বয়সী উইলিয়ামসের সঙ্গে আরো ৩ পাইলটকে যুদ্ধবিমানসহ উত্তর কোরিয়া ও চীনের মধ্যভাগে ইয়ালু নদীর কাছে নজরদারির জন্য পাঠানো হয়েছিল। এর উত্তর-পূর্বে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের রুশ প্রজাতন্ত্রের সীমান্ত। কোরীয় যুদ্ধে উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন।

১৯৫২ সালের ১৮ নভেম্বর উইলিয়ামস তার ৩ সহকর্মীর সঙ্গে আকাশে উড়েছিলেন এফ৯এফ প্যান্থার যুদ্ধবিমান নিয়ে। মার্কিন নৌবাহিনী কোরীয় যুদ্ধে প্রথম এই ধরনের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে। উত্তর কোরিয়ার উপকূল থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরে জাপান সাগর হিসেবে পরিচিত পূর্ব সাগরে টহল দেয়া ইউএসএস অরিসকানি যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ থেকে উড়েছিলেন উইলিয়ামস। যখন মার্কিন নৌবাহিনীর চারটি যুদ্ধবিমান টহলের জন্য আকাশে উড়াল দেয় তখন তাদের দলনেতা উড়োজাহাজের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তার উইংম্যানকে নিয়ে রণতরীতে ফিরে আসেন। আকাশে থাকেন উইলিয়ামস ও তার উইংম্যান। হঠাৎ তারা দেখতে পান, সোভিয়েত ইউনিয়নের সাতটি মিগ-১৫ যুদ্ধবিমান ধেয়ে আসছে মার্কিন টাস্ক ফোর্সের দিকে। উইলিয়ামস ও তার উইংম্যানকে মিগ ও মার্কিন টাস্ক ফোর্সের মধ্যভাগে অবস্থানের নির্দেশ দেয়া হয়।

সেদিনের স্মৃতিচারণ করে উইলিয়ামস বলেন, এমন পরিস্থিতিতে চারটি মিগ যুদ্ধবিমান থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। এরপর সেই গোলা এক মিগের ‘লেজে’ নিক্ষিপ্ত হয়। একপর্যায়ে মার্কিন কমান্ডাররা উইলিয়ামসকে নির্দেশ দেন সোভিয়েতদের সঙ্গে লড়াইয়ে না যেতে। উইলিয়ামস জানতেন, সোভিয়েত যুদ্ধবিমানগুলো তার যুদ্ধবিমানের চেয়ে দ্রুতগামী। তাই পালাতে গেলে তাকে ধরে ফেলবে তারা।

উইলিয়ামস বলেন, সে সময় মিগ-১৫ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে সেরা যুদ্ধবিমান। আমার যুদ্ধবিমানটি ভূমি থেকে আকাশে যুদ্ধ করতে পারদর্শী, তবে ডগ ফাইটের জন্য নয়।

তিনি আরো বলেন, আমার যুদ্ধবিমানটি স্বয়ংক্রিয় ছিল। মিগও তাই। আমার উন্নত প্রশিক্ষণ আছে। তাদেরও আছে। তবে হঠাৎ তারা ভুল করে বসে।

উইলিয়ামস দেখতে পান একটি মিগ তার দিকে আসছে। কিন্তু সেখান থেকে কেউ গুলি ছুড়ছেন না। তিনি বুঝতে পারেন, তার ছোড়া গোলায় সেই মিগের পাইলট নিহত হয়েছেন। এমন সময় ডান পাশ দিয়ে তার সামনে এগিয়ে আসে আরও একটি মিগ। গোলা ছোড়েন উইলিয়ামস। থেকে যায় আরও একটি মিগ। উইলিয়ামস তখন যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশে 'রোলার কোস্টারে'র মতো ওপর-নিচ হয়ে উড়তে থাকেন। আর সেই মিগ থেকে তাকে লক্ষ্য করে ক্রমাগত গুলি ছোড়া হয়।

এমন পর্যায়ে ‘যুদ্ধে’ যোগ দেন উইলিয়ামের উইংম্যান। পতন হয় সেই মিগেরও। ইউএস নেভি মেমোরিয়ালের ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেদিন আধঘণ্টায় ২০ মিলিমিটারের ৭৬০ রাউন্ড কামানের গোলাবর্ষণ করেছিলেন উইলিয়ামস। সোভিয়েত পাইলটদের গুলিতে উইলিয়ামসের যুদ্ধবিমানের রাডার ও উইং কন্ট্রোল সারফেস অকেজো হয়ে গেছিল। উইলিয়ামস যখন তার যুদ্ধবিমান নিয়ে বিমানবাহী রণতরীতে ফিরে আসেন তখন তার সহকর্মীরা সেই যুদ্ধবিমানের গায়ে ২৬৩টি ছিদ্র পেয়েছিলেন। নেভি মেমোরিয়ালের ওয়েবসাইটে আরো বলা হয়, উইলিয়ামসের যুদ্ধবিমানটির অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে, তা সাগরে ফেলে দেয়া হয়।

উইলিয়ামসের এই বীরত্বের কাহিনি শুনেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার। তখন উইলিয়ামসকে বলা হয় বিষয়টি গোপন রাখতে। কেননা, এই ঘটনা ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ উসকে দিতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App