×

মুক্তচিন্তা

আমলার চোখে সত্তরের নির্বাচন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:১২ এএম

আমলাতান্ত্রিক পদসোপানে ডেপুটি কমিশনার ও ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের অবস্থান যত নিচেই থাকুক সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে এলে তিনি হয়ে ওঠেন জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনের সময় ঢাকার ডিসি ছিলেন এ টি এম শামসুল হক। একাত্তরের আগস্ট পর্যন্ত এ পদে ভালোভাবেই বহাল থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে বদলি হন এবং সেখানে যোগদান করেন। সত্তরের বন্যা এবং কিছু রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৫ অক্টোবর ১৯৭০-এর পূর্বনির্ধারিত নির্বাচন পিছিয়ে ৭ ডিসেম্বর ১৯৭০-এ নির্ধারণ করা হয়। পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো আওয়ামী লীগের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নির্বাচন পিছিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ নির্বাচন পেছানোর কথা বলেনি এবং পিছিয়ে দেয়াকে স্বাগতও জানায়নি। এ টি এম শামসুল হকের স্মৃতিগ্রন্থ মোজাইক অব মেমোরিজ থেকে পরবর্তী অংশ অনুসৃত হচ্ছে : সারাদেশ যখন নির্বাচন-জ¦রের কবলে, রণহুঙ্কারের জয় বাংলা ধ্বনির সঙ্গে ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগের অবস্থান আরো সংহত হতে থাকে। যেসব সংকেত পাওয়া যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট আওয়ামী লীগ বিজয়ের দিকে এগোচ্ছে- কিন্তু কত বড় বিজয় সেটা লাখ টাকার প্রশ্ন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে তার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং তার বুদ্ধিদাতারা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও কেন্দ্রে সরকার গঠন করার মতো আসন পাবে না। পশ্চিম পাকিস্তানের বিজয়ী দল এবং পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের বিরোধিতাকারী দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয়ে নতুন কোয়ালিশন সৃষ্টি হতে পারে। আসলে এমন একটা সরল হিসাব ও ধারণার ওপর ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচনে সম্মতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে স্পষ্ট হয়ে উঠল প্রকৃতপক্ষে যা ঘটেছে তা কল্পকথার চেয়েও অদ্ভুত। ঢাকা হয়ে উঠল অনন্ত মিছিল আর মিটিংয়ের শহর। দিনভর এবং রাতেও জয় বাংলা এবং জয় বন্ধবন্ধু সেøাগান মুখরিত হতে থাকল। পুরনো চর্চা অনুযায়ী কমিশনার ভবনে (বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবন) জেলা প্রশাসনের পক্ষের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হলো, এটাই ডিসির কন্ট্রোল রুম নামে খ্যাত। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কন্ট্রোল রুমও এখানে স্থাপিত হলো। আমাদের অবস্থান দোতলায়। সে সময় এটা দোতলা ভবনই ছিল। এখন এটা অদ্ভুতই মনে হয় নির্বাচনের আগের সপ্তাহগুলোতে তেমন বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সব ব্যবস্থাই নেয়া হয়। নির্বাচনের যথার্থতা নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগও আসেনি। বেসামরিক জনগণ ছাড়াও শীর্ষস্থানীয় সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তারা ডিসির কন্ট্রোল রুম পরিদর্শনে আসেন। নির্বাচনের আগের দিনগুলোতে এখানে আমার অনেক সময় কেটেছে। ঢাকার কমিশনার এম আলাউদ্দিন নিয়মিত কন্ট্রোল রুমে আসতেন এবং আমরা এক সঙ্গে চা ও নাস্তা খেতাম। ১৯৭০-এর ৭ ডিসেম্বর শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হলো। নির্বাচনের দিনদুপুরের পর বেসামরিক বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী আমাকে ফোন করে উন্মত্ত কণ্ঠে বললেন লালবাগের নির্বাচন কেন্দ্র ও অন্যান্য জায়গা থেকে তিনি কারচুপির অভিযোগ পাচ্ছেন। আমি তাকে অনুরোধ করলাম, চলুন আমার সঙ্গে, সরজমিন দেখে আসি আসলে প্রকৃত অবস্থা কী। তিনি সম্মত হলেন। আমরা যখন নির্বাচন কেন্দ্রে পৌঁছলাম কোনো ধরনের সমস্যা বা ভোট কারচুপির কোনো নিদর্শন পেলাম না। ভোটারদের মধ্যে প্রবল আনন্দ-উত্তেজনা, এটা প্রায় ‘ওপেন সিক্রেট’ যে অধিকাংশ ভোটই আওয়ামী লীগের বাক্সে পড়ছে। আমরা পোলিং বুথ ঘুরে ঘুরে দেখলাম। জেনারেল ফরমান আলী অভিযোগ করার মতো তেমন কিছু পেলেন না। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বুথ বন্ধ হওয়া থেকে শুরু করে নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সেনাবাহিনী, পুলিশ, সিভিল কন্ট্রোল রুম সম্পূর্ণ সক্রিয় থাকল এবং যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রইল। নির্বাচনের ফলাফল দেখার জন্য ডিসির কন্ট্রোল রুমে টেলিভিশন এনে লাগানো হলো। ফলাফল দেখার জন্য সেখানে আমার সঙ্গে যোগ দিলেন জ্যেষ্ঠসেনা, পুলিশ এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস (ল্যান্ডসøাইড) বিজয় হলো। বিজয়ী প্রার্থী এবং প্রধান বিরোধী প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান সব ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীকে তুচ্ছ করে দিল। বাঙালিরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠল, তবুও দু-একজনকে কপাল কুচকাতে দেখা গেল, তারা ঘোলাজলে মাছ শিকার করতে চেয়েছিলেন। কেবলমাত্র দুটি আসন একটি পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন এবং একটি চাকমাপ্রধান রাজা ত্রিদিব রায় জিতলেন, বাকি ১৬৭টি আসন লাভ করল আওয়ামী লীগ। পশ্চিম পাকিস্তানের ১৪৪ আসনের ৮৮টি পেল জুলফিকার আলী ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি। ৩১৩ সদস্যের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠিত হলো। কারো সমর্থন ছাড়া, কারো সঙ্গে জোট না বেঁধে তারা সরকার গঠনের ক্ষমতা অর্জন করলেন। কিন্তু নিয়তির প্রদর্শন ভিন্ন এক পথ, বাঙালির বড় প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। কিন্তু ওদিকে ইতিহাস সৃষ্টি করা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। সব রাস্তা তখন ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবের বাড়িমুখী, এই বাড়িই তখন প্রাদেশিক সরকারের স্নায়ুকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্য এবং এখানে কর্মরত পশ্চিম পাকিস্তানি চাকুরেদের মধ্যে ধীরে ধীরে যে পরিবর্তন ঘটছে প্রশাসনের দিক থেকে আমরা তা বুঝতে পারছিলাম। বিভিন্ন স্তরে সামরিক কর্তৃপক্ষ তাদের শক্তি বাড়াচ্ছে, লোকবল যোগ করছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ঢাকার ডিসিএমএলএ (ডেপুটি সাব-মার্শাল ল অ্যাডমেনিস্ট্রেক্টর) পশ্চিম পাকিস্তানে বসতি স্থাপন করা ভারতের উত্তর প্রদেশের মোহাজির লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফাতকে বদল করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদকে তার জায়গায় বসানো হয়েছে। এটা অবশ্যই একটি ঘুঘুকে সরিয়ে বাজপাখি বসাবার মতো ব্যাপার। শাফাত চমৎকার ভদ্রলোক, মৃদুভাষী, বিনয়ী সেনাবাহিনীর অন্যদের মতো নয়। জাহিদের শরীরে কাশ্মিরে যুদ্ধের জখমের চিহ্ন, শাফাতের চেয়ে ভিন্ন চরিত্র আচরণের মানুষ। তিনি যখন আমাকে ও এসপিকে তার অফিসে ডাকতেন দুজনের পার্থক্যটা বুঝতে পারতাম। শহরে দ্রুত ধসে যাওয়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য তিনি কোনো বাদ বিচার না করে জেলা প্রশাসনকে দোষ দিতেন। মার্চের মধ্যভাগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন দ্রুত অস্থির হয়ে উঠছিল, এখানে ওখানে কোনো কোনো ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। সামরিক আইনের ফাঁস ততদিনে আরো দৃঢ় হয়ে আসছে। কর্নেল শাফাত আমাকে বললেন একজন মেডিকেল ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কিন্তু তার ঠিক উপরের বস সাব-মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর (এসএমএলএ) ব্রিগেডিয়ার কাশেমের নির্দেশে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এখন আরো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অবিলম্বে তাকে হাজির করাতে হবে। শাফাত তার এই পাঞ্জাবি বস সম্পর্কে তিক্ত মন্তব্য করে জানান যখন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী যখন সেই ছাত্রটিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির করার কথা বলেন তিনি তাকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। কিন্তু সামরিক গোয়েন্দারা ছাত্রটিকে পুনরায় ধরে আনতে সক্ষম হয়নি। ‘তার চাকরি বাঁচাতে’ ছেলেটিকে কয়েক দিনের জন্য তার কাছে আত্মসমর্পণ করাতে সকাতর অনুরোধ করলেন। আল্লার কসম খেয়ে বললেন তার কোনো ক্ষতি হবে না, তিনি নিজে তার নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবেন এবং এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে ছেড়ে দেবেন। আমি একটু থেমে ক’মিনিট প্রস্তাবটি নিয়ে ভাবি। তারপর বলি আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব সবটাই করব। ফিরে এসে এমপি ও এসডিওর সঙ্গে কথা বলি এবং পক্ষে বিপক্ষে যুক্তিগুলো আলোচনা করি। আমরা অভিমত দিই যদি তার মরিয়া হয়ে ওঠা এই অনুরোধে আমরা সাড়া দিই, তাকে যদি খুশি রাখি তাহলে সামনের খারাপ দিনগুলোতে আমরা তার সমর্থন ও সহযোগিতা পাব। একটি বাঙালি ছেলেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া তার জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কর্নেল শাফাত তার প্রতিশ্রæতির কথা আরো জোর দিয়ে বললেন। আমরা ছেলেটিকে শনাক্ত করে তার বাবা-মার কাছে আমাদের দেয়া প্রতিশ্রæতির কথা বলে শাফাতের কাছে হস্তান্তর করি। লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফাত তার কথা রেখেছেন। কোনো ধরনের শারীরিক লাঞ্ছনা ছাড়া এক সপ্তাহের মধ্যে সে ফিরে এসেছে। পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। সমঝোতাপূর্ণ নিষ্পত্তির সম্ভাবনা আর দেখা যাচ্ছে না। বামপন্থি রাজনীতিবিদ ও তরুণ প্রজন্ম স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনো ধরনের সমঝোতায় না যেতে বঙ্গবন্ধুর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। শত শত মিছিল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে মিলিত হচ্ছে- সবাই শেখ মুজিবের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষ ও তরুণ প্রজন্মের চোখে তিনি প্রথমে নায়ক এবং অতপর সুপারম্যান-এ পরিণত হয়েছেন। এমনই পরিস্থিতিতে ১ মার্চ ১৯৭১ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ থেকে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করলেন। আমি ২৮ নম্বর মিন্টো রোডের আবাসিক ভবনে ডিসির অফিসে জরুরি বিষয় নিয়ে কাজ করছিলাম। রেডিও ছিল আমার পাশে, বিকালের নিউজ বুলেটিনে ঘোষণাটি শুনলাম, অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘোষণার সঙ্গে পুলিশ ফোনে এসপির টেলিফোন পেলাম। তিনি বললেন, স্টেডিয়ামের পাশে বায়তুল মোকাররমে সমস্যা শুরু হয়েছে। স্টেডিয়ামে পাকিস্তান বনাম বিদেশি দলের খেলায় দর্শক মাঠে ঢুকে পড়লে প্রতিকূলতার মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানি ও বিদেশি খেলোয়াড়দের উদ্ধার করা হয়েছে। আমি এসপি ও এসডিওকে কন্ট্রোল রুমে চলে আসতে বললাম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার একটি ঘটনা ঘটল নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে। উচ্ছৃঙ্খল জনতা রাইফেল ক্লাব ভবন ভেঙে সেখানে মজুত সব অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে নিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে যুগপৎ এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এত বেশি ঘটনা ঘটছে যে পুলিশের পক্ষে তেমন কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ধরনের বিশাল কাজের মোকাবিলা করতে তাদের সংখ্যা অতি সামান্য। শেখ মুজিবুর রহমান পূর্বাণী হোটেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষোভ অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। ৩ মার্চ ১৯৭১ দেশজুড়ে হরতাল পালিত হলো এবং চূড়ান্ত ঘোষণার জন্য ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্সে সভা আহ্বান করা হলো। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পৃক্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সন্ধ্যায় এক বৈঠকে ডাকলেন গভর্নর আহসান। বৈঠক শেষে তিনি আমাকে ও এসপিকে শেখ সাহেবের সঙ্গে দেখা করে তার পক্ষ থেকে ধৈর্য ধারণ করার এবং সরকারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করতে অনুরোধ জানান। তার কথামতো আমরা পরদিন সকালে শেখ সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি তখন খুব সিরিয়াস মুডে ছিলেন, সংসদ মুলতবি করতে ইয়াহিয়ার ঘোষণার বৈধতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন করলেন, অবশ্য যতটা সম্ভব সরকারের সহায়তা করবেন বলে জানালেন। এর পরপরই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসহযোগিতার ঘোষণা দেয়া হয়। কার্যত একটি সমান্তরাল সরকার চলতে থাকে। কী করণীয় কী করণীয় নয় এ নিয়ে প্রতিদিন সমান্তরাল সরকারের পক্ষে হুকুম জারি হতে থাকে। ওদিকে আরো কঠোরভাবে সামরিক আইনের প্রয়োগ শুরু হয়ে যায়। কার্যত অভাবনীয় পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসন পরিবর্তিত পরিস্থিতির সামাল দিতে পারছে না, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলার দায়িত্ব প্রায় পুরোটাই নিয়ে নেয় সেনাবাহিনী। প্রতিরাতেই আমরা দেখতে পাচ্ছি সশস্ত্র সৈন্যরা কন্ট্রোল রুম থেকে বেরিয়ে তাদের ভাষায় অপারেশন করতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বেরিয়ে যাচ্ছে। আমরা গুলির আওয়াজ শুনতে থাকি, তখন প্রতিদিনই হত্যাকাণ্ডের খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে ঢাকা জেলার সব আসনই আওয়ামী লীগ পায়, এটা নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় সরকারের চাওয়া ছিল না। কিন্তু তারা তাকে চাকরিচ্যুত করেনি, বদলিও করেনি, ওএসডিও না। কিন্তু তিনি নিজে যখন নির্বাচন করে পরাজিত হলেন, তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করে জেলার ক’জন কর্মকর্তাকে বদলি করিয়েছেন, এমনই শোনা যায়। আমলা হিসেবে তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি, তিনি রাজনীতিবিদ হিসেবে সহনশীলতা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App