×

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধকালে জিয়ার রহস্যময় ভূমিকার কথা বললেন রফিকুল ইসলাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৭ পিএম

মুক্তিযুদ্ধকালে জিয়ার রহস্যময় ভূমিকার কথা বললেন রফিকুল ইসলাম

ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে জিয়াউর রহমানের রহস্যময় ভূমিকার কথা তুলে ধরলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান তখন চট্টগ্রামে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ না দিয়ে জানজুয়ার নির্দেশে সোয়াত জাহাজ থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের জন্য আনা অস্ত্র খালাস করায় চেষ্টা করেন। যদিও জনগণের দেয়া ব্যারিকেড ভেঙে পোর্ট পর্যন্ত যেতে পারেননি তিনি। পরে তিনি ভারতে পালিয়ে যাবার জন্য ম্যাপ দেখে বর্ডার কোনটা তার দিক নির্দেশনাও চান।

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা তুলে ধরেন তিনি। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রী বীর উত্তম রফিকুল ইসলামকে তার স্মৃতিচারণ চালিয়ে যাবার ইঙ্গিত দেন এবং স্পিকার তাকে প্রায় আধাঘন্টা বক্তব্য দেয়ার সময় দেন।

রফিকুল ইসলাম বলেন, মেজর জিয়া সাহেব, তাকে (জিয়া) আমি অনুরোধ করলাম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে, এসময় আমি সীমান্ত দখল করে ফেলেছিলাম ২৪ মার্চ রাতে। শহর যখন দখল করতে যাবো তখন জিয়াউর রহমান সাহেব এবং কর্ণেল চৌধুরী তারা আমার কাছে রেলের পাহাড়ে দেখা করতে আসছেন বলে জানান। এরমধ্যে আমরা পাক সৈন্যদের আমরা গ্রেফতার করে ফেলেছি, এখন শুধু শহর দখলের অপেক্ষায়, এমন সময় জিয়াউর রহমান সাহেব এবং এম আর চৌধুরী কর্ণেল বললেন, তুমি যদি আজকে যুদ্ধ করো (২৪ মার্চ রাতের কথা) তাহলে আমরা তোমার সঙ্গে থাকতে পারবো না। আমি বললাম, আজ যদি যুদ্ধ শুরু না করেন তাহলে চট্টগ্রাম বেদখল হয়ে যাবে। এসময় এক জন পশ্চিমা কমান্ডারকে (জানজুয়ার) দায়িত্ব দেয়া হয় পোর্টে গিয়ে সোয়াত জাহাজের অস্ত্র খালাস করতে । আমি তখন তাদের গণহত্যার প্রস্তুতি বুঝে ফেললাম। হয় গণহত্যা আজকে রাত শুরু করবে অথবা কালকের মধ্যে শুরু করবে। আমি তখন জিয়াউর রহমান সাহেবকে বললাম, আপনি যদি আমাদের সাথে যুদ্ধ না করেন তাহলে কালকে হয়তো সময় নাও পেতে পারেন। ২৪ মার্চ আমি শহর দখল থেকে বিরত থাকলাম কিন্তু আমি জানতাম বিপদ আসছে। ২৫ মার্চ রাতে খবর পেলাম যে কোনো সময় ঢাকা আক্রমণ হতে পারে। আমি জিয়াউর রহমান সাহেবকে আমার সঙ্গে যুদ্ধ করার কথা বললাম। আমি বেরিয়ে আসলাম ইপিআরকে নিয়ে চট্রগ্রাম শহর দখল করার জন্য। কিন্তু জানজুয়ার নির্দেশে তখন জিয়াউর রহমান চলে গেছে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে।

সংসদে তিনি আরো বলেন, এদিকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এগুলো কোনো কাকতালিয় ঘটনা নয় বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ দিনের প্রস্তুতি নিয়ে এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। হঠাৎ করে কেউ রেডিও স্টেশনে গিয়ে ঘোষণা দিলে দেশ স্বাধীন হয় না। স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়, জনগণকে সংগ্রামে প্রস্তুত করতে হয়। সেটাই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের মুল কাজ। আমার কাছে যখন প্রস্তাব আসলো রেডিও স্টেশনে গিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার, আমি বললাম স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার আমি কেউ নই। এটা দেবে রাজনৈতিক নেতারা। পর দিন ২৬ তারিখ কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে দুইটা ৪০ মিনিটে এমএ হান্নান চট্রগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এই ঘোষণা বাণী পাঠ করেন। ঘোষণা দেওয়া আর ঘোষণা বাণী পাঠ এক কথা নয়। ঘোষণার অধিকার বঙ্গবন্ধুর ছিলো আর কারো ছিলো না। সেই অধিকার শুধু বঙ্গবন্ধুর, এম এ হান্নান শুধু বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সেই ঘোষণাবলী পাঠ করেছিলো। আমি বললাম, সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার, সৈনিকরা যে যুদ্ধ করছে এই জিনিসটা রেডিওতে প্রচার করলে ভালো হবে। আমাকে বললো আপনি আসেন, আমি বললাম আমি তো যেতে পারছি না, আমি গেলে সৈনিকরা ভাববে আমাদের এক মাত্র অফিসার উনিও চলে গেছে। আমি বললাম টেপ রেকরর্ডার আনেন। কিন্তু তার আগেই প্রচন্ড শেলিং শুরু হলো হেলিকপ্টার থেকে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন, সে ঘোষণা যখন প্রচার হচ্ছে , তখন জিয়াউর রহমান সোয়াত জাহাজ থেকে অন্ত্র খালাস করতে যাচ্ছেন কর্ণেল জানজুয়ার নির্দেশে। খবর পাঠানো হলো জিয়াউর রহমানকে ফিরিয়ে আনার জন্য, কারণ ওখানে গেলে মেরে ফেলতে পারে। জিয়া যখন যাচ্ছি সেখানে বেরিকেট ছিলো ওই বেরিকেট সরাতে গিয়ে সময় নষ্ট হয়। তা না হলে উনি চলে যেতেন। কিন্তু তাদের দুটি গাড়ি ফিরে এলো এবং তিনি চলে গেলেন ক্যান্টনমেন্টে। তিনি আমার যুদ্ধের খবর পেলেন, বেলুচ রেজিমেন্টের ওপর গুলি বর্ষণ করা হলো কিন্তু তিনি আক্রমণে না গিয়ে চলে গেলেন কক্সবাজার, রামু সেখান থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ওসমান সাহেব তাকে ফেরত পাঠায় যে রফিক সাহেব তো যুদ্ধ করছে, তখন সেখান থেকে জনগণের প্রতিরোধের মুখে ফিরে এসে কালুঘাট ব্রিজের পূর্ব পারে একটা পাহাড়তলী হাই স্কুল আছে সেই স্কুলে তারা অবস্থান নেয়। সেখান থেকে তিনি ম্যাপ দেখে বের করতে বললেন ইন্ডিয়া যাওয়ার রাস্তা কোনটা। পরে তিনি আমাদের সহায়তা না করায় এবং বিরশ্ব করার কারণে শহর আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।

একই সময় আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত (জোট সরকারের) শাসনামলে সাতক্ষীরা এক ভয়ংকর জনপদে রূপ নেয়। তার পরে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির পরে সাতক্ষীরায় শত শত মানুষকে বিএনপি জামাত আক্রমণ করে, তাদের মধ্যে বেশ কিছু আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু হিন্দুকে তারা পিটিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে। এসময় সংসদে জামাতের সেই তাণ্ডবের একটি ভিডিও দেখানো হয়।

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, বিএনপি-জামায়াতকে এক বিন্দু ছাড় দেয়া যাবে না। বিএনপির এখন বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন না করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাচ্ছে, তারা আরো কিছু দাবি করছে যা অসাংবিধানিক, তারা বিদেশীদের দারস্থ হয়ে তাদের ভ’ল বোঝাচ্ছে। কিন্তু তত্ত্ববধায়ক সরকার আর ফিরে আসার কোন উপায় নেই। তিনি বলেন, এই বিএনপি-জামাত জোট আবারো দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্র করে চলেছে, তারা পিছনের দরজা দিয়ে আবারো ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ চক্রান্ত বানচাল করতে হবে। শিরীন আখতার বলেন, বিএনপি বলছে দেশে গণতন্ত্র নেই, তাহলে তারা মিটিং মিছিল করছে কিভাবে, কিভাবে টক শো তে সরকারে সমালোচনা করছে? তিনি বলেন, গণতন্ত্র মানে দেশের সম্পদ ধ্বংস নয়, মানুষ হত্যা নয়, গণতন্ত্র মানে খুনীদের লাইসেন্স দেয়া নয়, গণতন্ত্র মানে বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করা নয়। তারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মত মিমাংসিত বিষয়কে অমিমাংসিত করে দেশকে বিভক্ত করে রেখেছে।

আওয়ামী লীগের এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, অনেকে ভাবছেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। এটা ঠিক নয়, তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, নির্বাচনে সহিংসতা ঘটানোর চক্রান্ত করছে। সেই সাথে বিএনপি অপেক্ষা করছে লণ্ডনের বার্তার ওপর। তাই দেশবাসীকে ভাবতে হবে আপনারা এই দুই পক্ষের মধ্যে আবার খুনী, জঙ্গিবাদের পোষক- দূর্নীতিগ্রস্ত বিএনপিকে আবার ক্ষমতায় আনবেন? নাকি উন্নয়নের কারিগর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওআমী লীগকে আবার বেছে নেবেন।

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন এমপি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, জিল্লুল হাকিম, এমএ মতিন, মাহফুজুর রহমান, আফতাব উদ্দিন সরকার, আদিবা আনজুম মিতা ও তানভীর শাকিল জয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App