×

আন্তর্জাতিক

বসন্তে চূড়ান্ত হামলার প্রস্তুতি রাশিয়ার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:১৫ এএম

বসন্তে চূড়ান্ত হামলার প্রস্তুতি রাশিয়ার

ছবি: এপির

যুক্তরাষ্ট্র-কিয়েভের মধ্যে দানা বাঁধছে সন্দেহ

জাতিসংঘে রাশিয়ার নিযুক্ত প্রথম উপস্থায়ী প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি গতকাল জাতিসংঘে রাশিয়াবিরোধী এক বৈঠকের পর ইউক্রেনে আগ্রাসনের সমালোচনার তীব্র জবাব দিয়েছেন। একই সঙ্গে ইউক্রেনে রাশিয়ার অবস্থানের রূপরেখার জন্য জাতিসংঘে একটি অনানুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করতেও প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে।

দিমিত্রি বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন নিয়ে আলোচনার জন্য আমাদের বিরোধীদের অন্ধকারে থাকতে দিন। একটি ‘রুশ-বিরোধী’ অধিবেশনের পরে আমরা তাদের জন্য আরো অস্বস্তিকর একটি সভা আয়োজন করার চেষ্টা করব। এতে আমাদের আকর্ষণীয় বক্তা এবং তথ্য থাকবে। নিউজউইকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে পলিয়ানস্কি বলেন, আমরা এটি চেয়েছিলাম। আমি মনে করি না আমরা সভার আগে আর কোনো তথ্য দেব।

এদিকে মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি এই সপ্তাহে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বা মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর লক্ষ্যের সঙ্গে খাপ খায় না।

পুতিনের কি চূড়ান্ত ধাক্কা : ইউক্রেন যুদ্ধ বর্ষপূর্তির আগে বিশাল হামলার আশঙ্কা করছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের একজন আইনপ্রণেতা ইহোর চেরনিভ বলেছেন যে ভ্লাদিমির পুতিন কিয়েভের জন্য একটি নতুন আক্রমণ শুরু করার চেষ্টা করতে পারেন শীতের পরেই। চেরনিভ সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে এই পরিস্থিতিতে, রাশিয়া পশ্চিম ইউক্রেনে ‘কিছু লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত’ করতে পারে যা ইউক্রেনকে ইউরোপের বেশিরর ভাগ অংশের সঙ্গে সংযোগকারী পরিবহন রুটগুলোকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রোগ্রাম এবং ট্রান্সন্যাশনাল থ্রেটস প্রজেক্টের পরিচালক সেথ জোনস মঙ্গলবার নিউজউইককে বলেছেন, স্যাটেলাইট চিত্রগুলো এমনভাবে দেখা যাচ্ছে যে রাশিয়া দ্রুত দখলের আরেকটি প্রচেষ্টাকে নির্দেশ করে। দোনেৎস্ক, খেরসন, লুহানস্ক এবং জাপোরিঝিয়া- রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলগুলো নিয়ে ক্রেমলিন তাদের পরবর্তী আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হবে বলেও চেরনিভ সতর্ক করেছেন। একই সঙ্গে রাশিয়া তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আগামী ৬-১২ মাসের পরবর্তী সামরিক অভিযানের জন্য প্রস্তুতি শুরু করার চেষ্টা করতে পারে।

কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, পুতিন বসন্তে একটি বড় আক্রমণের মাধ্যমে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে অভিভূত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আরো সৈন্য সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সহকারী অধ্যাপক আলেকজান্ডার ল্যানোসকা শুক্রবার নিউজউইককে বলেছেন, রাশিয়া স্পষ্টতই আক্রমণ চালানোর জন্য সংঘবদ্ধ বাহিনী ব্যবহার করছে, যেমনটি আমরা বাখমুট-সোলেদার অক্ষ বরাবর দেখেছি। সম্ভবত রাশিয়া বসন্তে একটি নতুন আক্রমণের জন্য অনেক সংহত বাহিনীকে রিজার্ভ করে রেখেছে।

পোল্যান্ড নিয়ে বাইডেনের সঙ্গে জেলেনস্কির দূরত্ব : পোল্যান্ডে প্রাণঘাতী ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণ নিয়ে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ব্যাখ্যা পরস্পরবিরোধী। এতে আবছা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে, ভবিষ্যতে রাশিয়ার আক্রমণ নিয়ে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের দাবি কীভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করবে যুক্তরাষ্ট্র। ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের পর শুরুতে সতর্ক হয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। কিন্তু এই উত্তেজনা দ্রুতই কমে আসে যখন পোল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে ইউক্রেনীয় আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র দুর্ঘটনাবশত পোলিশ ভূখণ্ডে বিস্ফোরিত হয়েছে বলে একমত হয়ে যায়।

যদিও কিয়েভের প্রতি মার্কিন সামরিক সহযোগিতা এখনো আগের মতোই রয়েছে। কিন্তু বাইডেনের মন্তব্য প্রমাণ করছে যে তারা ইউক্রেনের সবকিছুর সঙ্গে একমত নয়। জুন মাসে জেলেনস্কির এক উপদেষ্টা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের করা মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

ওই সময় বাইডেন বলেছিলেন, রাশিয়ার আক্রমণের আগে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট মার্কিন সতর্কতার কথা শুনতে চাননি। আগস্টে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট টমাস ফ্রিয়েডম্যান বাইডেন ও জেলেনস্কির মধ্যে গভীর অনাস্থার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, ইউক্রেনীয় নেতৃত্ব যেভাবে চলছে তা নিয়ে কতটা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন মার্কিন কর্মকর্তারা।

ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব আমেরিকার ইতিহাসের অধ্যাপক ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি পরিকল্পনা বিষয়ক সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল কিমেজ বলেন, ইউক্রেনের কিছু ত্রুটি ও সমস্যা রয়েছে। মুশকিল হলো, যুদ্ধ বিষয়ে কিয়েভের দেয়া তথ্যের সত্যতা নিয়ে হয়তো হতাশা রয়েছে এবং এটি বিরক্তিকর হতে পারে।

কিমেজ আরও বলেন, জেলেনস্কি প্রচুর সমর্থন পাচ্ছেন, কিন্তু কিছু মাত্রায় ব্যক্তিগত বিরোধ থাকতে পারে যা অস্বাভাবিক। ইতিহাসের এই অধ্যাপক বলেন, পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে মতবিরোধ শুধু ঝুঁকিই নয়, জেলেনস্কির সামনে আরো বড় ঝুঁকি হলো হলিউড সিনেমার মতো এই সংঘাতের দ্রুত ও সহজ সমাধান তার হাতে নেই। তিনি বলেন, হলিউড সিনেমার মতো তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখা কঠিন।

এই পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার নিজের অবস্থান কিছুটা নমনীয় করেছেন জেলেনস্কি। সিঙ্গাপুরে ব্লুমবার্গের নিউ ইকোনমি ফোরামে তিনি বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের কারণ আমি শতভাগ জানি না। মার্কিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মাস্টার সার্জেন্ট ডেনিস ফ্রিটজ বলেন, আমি মনে করি তার (জেলেনস্কির) বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App