×

জাতীয়

প্রণয় যার প্রতারণার হাতিয়ার: ১০ বিয়ে ও প্রেমে সেঞ্চুরি মাহির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩৫ এএম

প্রণয় যার প্রতারণার হাতিয়ার: ১০ বিয়ে ও প্রেমে সেঞ্চুরি মাহির

তানজিনা আক্তার ইভা ওরফে মেরি ওরফে মাহি

অষ্টম শ্রেণি পাস তানজিনা আক্তার ইভা ওরফে মেরি ওরফে মাহি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে পরিচয় দিতেন ও লেভেল এবং এ লেভেল পাস করে যুক্তরাজ্যের একটি আইটি ফার্মে কর্মরত হিসেবে। টিকটক, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত পোস্ট দিতেন নিজের অর্ধনগ্ন ছবি ও ভিডিও। পরে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ফেলতেন প্রেমের জালে। ধনাঢ্য ব্যক্তি হলে করে ফেলতেন বিয়ে। পরে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে এবং অডিও ও ভিডিওতে হওয়া কথোপকথন রেকর্ড করে ব্লাকমেইল করে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা।

তার এই প্রণয়ে পড়ে প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। বিয়ের ফাঁদে পড়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। যাদের মধ্যে সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও রয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, মাহির সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া গাজীপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি রহমত আলীর ছেলে পরিচয় দিয়ে ৪০ নারীকে প্রেম-পরকীয়ার ফাঁদে ফেলা প্রতারক মো. মাসুম বিল্লাহ ফারদিনের সঙ্গে। দুজনে মিলে বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করতেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে। রিমান্ডে ফারদিনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই গত রবিবার মাহিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। দুদিনের রিমান্ড শেষে গতকাল বুধবার তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

ডিবি বলছে, টিকটক, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই অর্ধনগ্ন ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতেন মাহি। পরে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ম্যাসেঞ্জারে মেসেজ দিতেন। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর নিয়ে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতেন। একপর্যায়ে নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে নামিদামি হোটেলে লাঞ্চ/ডিনারের আমন্ত্রণ জানাতেন। এভাবে সম্পর্ক গভীর হওয়ার পর টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে কৌশলে স্ন্যাপচ্যাটের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বলতেন। যারা স্ন্যাপচ্যাট চালাতেন না, তাদের স্ন্যাপচ্যাটে একাউন্ট খুলে মেসেজ দিতে বলতেন। এরপর স্ন্যাপচ্যাটের মেসেঞ্জারে নিজের অর্ধনগ্ন ছবি পাঠিয়ে রসাত্মক আলাপে উদ্বুদ্ধ করতেন। কেউ তার ফাঁদে পা দিলেই সব অডিও, ভিডিও কথোপকথন রেকর্ড করে রাখতেন। পরে টার্গেটকে বিভিন্ন হোটেলে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাত্রিযাপন করতেন। নিয়ে যেতেন বিভিন্ন স্পা সেন্টার, বার, নাইট পার্টি ও সীসা লাউঞ্জেও। এরই মধ্যে নিজের স্বার্থ হাসিল করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি। এভাবে নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মোহনীয় মায়ায় আকৃষ্ট করে সাময়িক সময়ের জন্য একে একে ১০টি বিয়ে করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মাহি। আর তার প্রেমের ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার ব্যক্তির সংখ্যা শতাধিক।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৩ সালে পারিবারিকভাবে উচ্চপদস্থ এক বেসরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে বিয়ে হয় মাহির। কিন্তু তার উশৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য ২০১০ সালে ওই স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপরই তিনি লাগামহীন জীবনযাপন শুরু করেন। প্রথম স্বামীর ঘরে ৩ সন্তান থাকলেও তাদের পরিচয় দিতেন না। প্রথম সংসারে থাকতেই বিভিন্ন লোকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান এবং প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন তিনি। ডিভোর্সের পর প্রতারণা অব্যাহত রাখতে একে একে ১০টি বিয়ে করেন এবং শতাধিক প্রেমের সম্পর্কে জড়ান মাহি। বিভিন্ন নামিদামি হোটেলে রাত্রিযাপন করতে থাকেন দেশি-বিদেশি মানুষদের সঙ্গে। তার প্রতারণার স্বীকার হওয়া বিভিন্ন ব্যক্তি আইনগত ব্যবস্থাও নিয়েছেন। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ৫টি প্রতারণার মামলা দায়ের হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র আরো জানায়, ২০২২ সালে মাহির সঙ্গে পরিচয় হয় নিজেকে গাজীপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি রহমত আলীর ছেলে পরিচয় দিয়ে ৪০ নারীকে প্রেম-পরকীয়ার ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করা মো. মাসুম বিল্লাহ ফারদিনের সঙ্গে। পরে কয়েক দফা সাক্ষাৎ হওয়ার পর তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং একসঙ্গে বেশ কয়েকবার রাত্রিযাপন করেন। একপর্যায়ে তারা একে অপরের সহযোগিতায় প্রতারণার জাল আরো বিস্তার করেন। ফারদিন যাদের সঙ্গে প্রতারণা করতেন, তাদের সঙ্গে মাহিকে গাজীপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতেন। একই পরিচয়ে অনেকের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথাও বলিয়ে দিতেন। পরে প্রতারণার টাকা ভাগ করে নিতেন ফারদিন ও মাহি।

ডিবির সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের ওয়েব বেউজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের ইনচার্জ এডিসি আশরাফউল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, গত ১১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হওয়ার পর রিমান্ডে প্রতারক ফারদিনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাহিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় মাহির কাছ থেকে র‌্যাব, নেভি ও বিমান বাহিনী লেখাসংবলিত ৮টি ক্যাপ, ওয়াকিটকি সেট, ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ৩টি আইফোন, দুটি এটিএম কার্ড ও সীসা টানার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। প্রাথমিকভাবে মাহির ১০ বিয়ে ও শতাধিক লোককে প্রেমের ফাঁদে ফেলার তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আরো যাচাই-বাছাই চলছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App