×

সারাদেশ

সেচ সংকটে অনাবাদি কয়েক শত হেক্টর জমি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:২৮ পিএম

সেচ সংকটে অনাবাদি কয়েক শত হেক্টর জমি

ছবি: ভোরের কাগজ

সেচ সংকটে অনাবাদি কয়েক শত হেক্টর জমি

ছবি: ভোরের কাগজ

সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের পাঙ্গাসিয়ার হাওরের হাজারো কৃষক বছরের এক ফসলি বোরো জমির পানির সংকটে চাষাবাদ না করতে পেরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। তাদের এই মৌসুমে গোলায় একটি ধানও এবার উঠবে না। ক্ষতিপয় একটি প্রভাবশালী মহলের কারণে হাওরে আজ এই অবস্থা বলে কৃষকরা আহাজারী করছেন। তারা বলছেন, এই মৌসুমে গ্রাম্য প্রভাবশালীদের কারণে এক ফসলী পাঙ্গাসিয়া হাওরের প্রায় চার হাজার একর বোরো জমিন অনাবাদি থেকে যাবে। শিমুলবাক ইউনিয়নের পাঙ্গাসিয়ার হাওরের কাড়াটি আমরিয়া গ্রামের মসজিদ কমিটির নাম ভাঙ্গিয়ে ইজারা নিয়ে মৌসুমের আগেই পুরো হাওরের পানি ছেড়ে দিয়েছে প্রভাবশালী এই মৎস্য খেকু স্থানীয় ইজারাদার। ফলে পুরো হাওর জুড়েই দেখা দিয়েছে সেচ সংকট। হেক্টরের পর হেক্টর জমি রয়ে গেছে অনাবাদি ও সেচ সংকটের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে ইজারাদার পাঙ্গাসিয়া হাওরের খাড়ার মুখ বন্ধ করে দেয়ায় হাওরের নিচু এলাকার বোর জমির পানি না কমায় স্থানীয় কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের কিদিরপুর, রামেশ্বরপুর, ঢালাগাঁও, চাঁনপুর, আমরিয়া, কান্দাগাঁও, রুপাবালি, মুক্তাখাইসহ আটটি গ্রামের একমাত্র হাওর পাঙ্গাসিয়ার হাওর। সেখানে শত শত হেক্টর জমি রয়েছে। অনেকের লাগানো ফসল সেচ সংকটে পড়ে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। অন্যদিকে উচু জমি একেবারেই অনাবাদি রয়েছে। হাওরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র নালা- আমরিয়া গ্রামের পাশে পাঙ্গাসীয়ার কাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ইজারাদার আমরিয়া গ্রামের আহমদ আলী, আব্দুল বাছির, ইকবাল হোসেন বাছন’রা খালের মুখ বেঁধে খালটি সেলু পাম্প লাগিয়ে একেবারে শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করছেন।

হাওরের কৃষক কান্দাগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অধিরচন্দ্র দাস, মছব্বির মিয়া, কিদিরপুর গ্রামের মশাহিদ আলী, আনজব আলী, বিরাজ আলী, রুপাবালি গ্রামের আব্দুল আজিজ, আবুল কালাম, চাঁনপুর গ্রামের আশরাফ আলী, রামেশ্বরপুর গ্রামের নিরঞ্জন দাস সহ অসংখ্য কৃষকরা জানিয়েছেন, আমরিয়া গ্রামের ফয়জুর রহমান মেম্বার, আমরিয়া জামে মসজিদের মতাওয়াল্লী আব্দুর রহিম, আবুল কালাম, আলী আহমদরা প্রতি বছর তাদের মসজিদের নাম ধরে হাওরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র রাস্তা পাঙ্গাসীয়ার কাড়া গ্রাম্য ইজারার মাধ্যমে ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ইজারা প্রদান করেন। ইজারাদাররা প্রতি বছর কৃষকদের সাথে এমন আচরণ করে আসছেন। এই বছর তারা ভরা পানির মৌসুমে পুরো হাওরের পানি ছেড়ে দিয়ে মৎস্য আহরণ করেছেন। তাই হাওরের উচু জমি সেচ সংকটের কারণে অনাবাদি রয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ফসল লাগানো জমিও পানির কারণে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পাঙ্গাসিয়ার খাড়াটি রামেশ্বরপুর মৌজার সরকারি ১ নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় এটা সবার জন্য উন্মুক্ত। তাহালে একগ্রামের লোকজন এটাকে কিভাবে ইজারা দেয়। এটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

[caption id="attachment_399628" align="aligncenter" width="1280"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

তারা আরও জানান, এই অবাধ্য ইজারার কারণে আমরা আজ মহা দূর্ভোগে পড়েছি। তারা একটি গ্রামের কতিপয় কিছু প্রভাবশালী মিলে আমাদের আটটি গ্রামের একটি মাত্র হাওরের আজ এই দশা। আমরা এই প্রভবশালীদের কাছ থেকে মুক্তি চাই। হাওরের কৃষক পরিবার আজ করুন অবস্থার অবসান চাই। প্রশাসন যেন এই প্রতিকার করেন সেই আহ্বান আমাদের।

ইজারাদার আব্দুল বাছির ও ইকবাল হোসেন বাছন জানান, আমরা আমরিয়া গ্রামের পঞ্চায়েতের কাছ থেকে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে পাঙ্গাসীয়ার কাড়া ইজারা নিয়েছি। কৃষকরা পানি না পেলে আমরা কি করবো। আমরা মৎস্য আহরনের জন্য ইজারা নিয়েছি আমরা আমাদের জলাসয়ের মৎস্য আহরণ করছি। পানির বিষয়টি আমরিয়া গ্রামের পঞ্চায়েতের মানুষজন বলতে পারবেন। তাদের কাছ থেকে আমরা যেভাবে চুক্তি করেছি সেই ভাবেই আমরা মৎস্য আহরণ করছি।

আমরিয়া গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান ও ইউপি সদস্য ফয়জুর রহমান জানান, আমাদের জন্মের পর থেকে আমাদের বাপ দাদারা গ্রামের মসজিদের উন্নয়নের জন্য পাঙ্গাসিয়ার খাড়া ইজারা দিয়ে আসছেন। ইজারার টাকা আমাদের মসজিদের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। হাওরের প্রয়োজনে আমরা খাড়া বেধে রাখি এবং প্রয়োজন মতো ছেড়েও দেই।

এ ব্যাপরে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ জামান জানান, পাঙ্গাসিয়া খাড়াটি সরকারি খতিয়ানভূক্ত হয়ে থাকলে একে কোন ব্যক্তি ইজারা দিতে পারবে না। এটা তো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা। যে বা যারা ইজারা দিয়েছে, নিয়েছে তাহাদের বিরুদ্ধে আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App