×

জাতীয়

আন্দোলন তুঙ্গে নেয়ার ছক কষেছে বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:১৬ এএম

আন্দোলন তুঙ্গে নেয়ার ছক কষেছে বিএনপি

ফাইল ছবি

আন্দোলন তুঙ্গে নেয়ার ছক কষেছে বিএনপি

ফাইল ছবি

হঠাৎ করেই যেন ছন্দ হারিয়েছে বিএনপির ‘সরকার পতনের’ আন্দোলন। বিভাগীয় গণসমাবেশের মাধ্যমে উজ্জীবিত দলটিও এখন যেন খানিকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। গণমিছিল, গণঅবস্থান কিংবা বিক্ষোভ সমাবেশের মতো গতানুগতিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সরব থাকলেও খানিকটা হতাশ মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আন্দোলন প্রশ্নে দল কি তবে ক্ষমতাসীনদের পাল্টা পদক্ষেপের মুখে পিছু হটল? মাঠের কর্মীদের মনে যখন এমন শঙ্কা; তখন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমেই দাবি আদায়ে সফল হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন সিনিয়র নেতারা। অতীতের মারমুখী আন্দোলন থেকে সরে এসে কর্মসূচি দেয়ার ক্ষেত্রেও কৌশলী তারা।

বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, শত বাধা পেরিয়ে প্রথম ধাপের আন্দোলন কর্মসূচি সফল হয়েছে। এবার সরকারের ওপর চাপ তৈরির ভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা চলছে। যুগপৎ আন্দোলনে ধাপে ধাপে কঠোর কর্মসূচি আসছে। নেতাদের মতে, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চলমান আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতার বিকল্প নেই। তাদের ভাষ্য, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের রূপও পরিবর্তন হবে- যা নির্ভর করবে সরকারের আচরণের ওপর। তবে বিএনপির কর্মসূচির দিন সরকারের পাল্টা কর্মসূচি বাড়তি উসকানি হলেও আপাতত শান্তির পথেই হাঁটবে দলটি।

নেতারা বলছেন, নতুন বছর (২০২৩) বিএনপির জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের। সরকারের হামলা মামলা উপেক্ষা করে আগের চেয়ে আরো বেশি প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে রাজপথে। ব্যর্থ হলে রাজপথে রক্ত ঝরানো, কর্মীদের আত্মত্যাগ- সবই বৃথা হয়ে যাবে। দলকে দিতে হবে চরম মাশুল। তাইতো যে কোনো মূল্যে বিজয় পেতে প্রস্তুত করা হচ্ছে চূড়ান্ত আন্দোলনের ছক। সেই আন্দোলনে কর্মীদের নির্বাচন পর্যন্ত উজ্জীবিত রাখাই এই মুহূর্তে বিএনপির প্রধান লক্ষ্য।

সরকার যদি একতরফা নির্বাচন করতে চায়- সেক্ষেত্রে বিএনপি কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে? এমন প্রশ্নের জবাবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল মঙ্গলবার ভোরের কাগজকে বলেন, জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে এনে তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি। সব রাজনৈতিক দলকে আমরা একই দাবিতে এক করেছি, যাতে এই সরকারের চলে যাওয়া নিশ্চিত হয়। তিনি বলেন, দাবি আদায়ে অবশ্যই কঠোর আন্দোলনের বিকল্প ভাবছি না। এক্ষেত্রে চলমান কর্মসূচির বাইরে ধাপে ধাপে এমন কর্মসূচি আসবে যেখানে জনগণের সম্পূর্ণ সম্পৃক্ততার মধ্যে দিয়ে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।

গত বছরের জুলাই থেকে সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবিসহ নানা ইস্যুতে রাজপথে বিএনপি। তখন থেকেই গোলটেবিল বৈঠক, বিক্ষোভ, মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টা শুরু করে দলটি। অক্টোবরে এসে বিভাগীয় গণসমাবেশ, ডিসেম্বরের শেষে গণমিছিল, জানুয়ারিতে গণঅবস্থান, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলসহ দাবি আদায়ে চলছে নানা কর্মসূচি। সূত্র জানায়, সরকার পতনের আন্দোলনকে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত রূপ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। ‘অলআউট’ মাঠে নামার আগে সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য আরো সুদৃঢ় করা হবে।

নির্বাচন মাথায় রেখেই আন্দোলনের ছক : বিএনপির নেতারা জানান, মোক্ষম সময় না এলে আরো অন্তত ছয় মাস কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি। ইস্যুভিত্তিক জনসম্পৃক্ত শাস্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের অনীহা তৈরি হয় এমন কর্মসূচিও এড়িয়ে চলবে দলটি। সূত্রের দাবি, নির্বাচন মাথায় রেখে দাবি আদায়ে আন্দোলনের কর্মসূচিকে দুই ভাগ করে সাজানো হচ্ছে পরিকল্পনা। যাতে বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি হলেও রাজপথ ছেড়ে দিতে না হয়। একই সঙ্গে নেতাকর্মীরাও যেন ক্লান্ত হয়ে না পড়ে।

এক্ষেত্রে প্রথম ধাপে থাকছে- বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশের মতো কর্মসূচি। যা চলমান রয়েছে। এ ধাপের কর্মসূচি চলবে থাকবে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপে রাখা হয়েছে- হরতাল, অবরোধ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওসহ অন্যান্য শক্ত কর্মসূচি। তবে এসব কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে পরিস্থিতি এবং বাস্তবতা বিবেচনা করেই এগোবে বিএনপি। তফসিল ঘোষণার কয়েক মাস আগ থেকেই আন্দোলনের গতি বাড়ানো হবে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে সরকার একতরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেই চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবে তারা। ১০ দফা তখন এক দফায় পরিণত হবে।

চলমান আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ শেষ হলে আবার ঢাকা মহানগরীর স্পটে স্পটে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি দেয়া হবে। এসব কর্মসূচি শেষ হতে সময় লাগবে তিন মাস। এরপর সারাদেশে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ করবে বিএনপি। দেশব্যাপী এই কর্মসূচি আরো দুই মাস ধরে চালানোর ইচ্ছা দলটির। এর ফাঁকে ফাঁকে গুছিয়ে আনা হবে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ। পাশাপাশি চলতে থাকবে নির্বাচনের প্রস্তুতিও।

মে মাসের মধ্যভাগে সুধীজন, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। জুন-জুলাইয়ের পর নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হবে। পাশাপশি ২৭ দফার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে নেয়া হবে নানা কর্মসূচি। এই সময়ের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় না হলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে দলটির।

আগামীতে আন্দোলনের গতি কেমন হতে পারে- জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সময় ও পরিস্থিতির সঙ্গে আন্দোলনের গতিও পরিবর্তন হয়। এখন আমরা কঠোর কর্মসূচিতে না গেলেও পরিস্থিতি কখন আমাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য করে তা কেউ বলতে পারবে না। রাজনীতিতে ছোট ছোট কর্মসূচির মাধ্যমে বড় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।

গ্রেপ্তার এড়ানোর পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের মুক্তির জন্যও নতুন কৌশলে মাঠে থাকার কথা জানিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন, সাময়িকভাবে আন্দোলনের গতি কিছুটা ধীরে চললেও সামনের দিনে তা বাড়বে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পথ থেকে নেতাকর্মীরা যেন বিচ্যুত না হয়; সেদিকে খেয়াল রেখে সতর্কতার সঙ্গে আমাদের কর্মসূচিগুলো দিতে হচ্ছে। তবে সরকার পতনের কঠোর কর্মসূচি অবশ্যই আসবে।

ভাঙন ঠেকাতে সর্তক বিএনপি : কোনো প্রপাগান্ডা বা উসকানিতে নিজেদের মধ্যে যাতে দূরত্ব সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক নজর থাকবে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের। নির্বাচনে অংশ নেয়াসহ যে কোনো সিদ্ধান্তে ঐকমত্য থাকার কঠোর বার্তাও রয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অনেক দলকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বাগিয়ে নেয়া হতে পারে- এমন সন্দেহে বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা পোক্ত করতে ছোট দলের আবদারকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

এছাড়াও রাজপথে আন্দোলনে সরকার মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে; এমন আশঙ্কা থেকে কয়েক স্তরের নেতৃত্ব তৈরি করা হচ্ছে। এতে যেন কেউ নাখোশ না হন বা প্রতিযোগিতায় না নামেন এ ব্যপারে দলের বৈঠকে সিনিয়র নেতারা নিজেদের মতামত ঝালিয়ে নিচ্ছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App