×

জাতীয়

চুন্নুর বক্তব্যে সরকারি দলের এমপিদের হৈচৈ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:১৫ পিএম

গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে ৬০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি কীভাবে দেবো, সংসদে প্রধানমন্ত্রী ব্যাবসায়ীদের বাইরে থেকে কেনা দামই দিতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কৃষিতে আমরা ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিচ্ছি। এখন গ্যাস উৎপাদন ও গ্যাস বিতরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিদ্যুৎ বিতরণে যদি ৪০-৫০-৬০ হাজার কোটি টাকা আমাকে ভর্তুকি দিতে হয় তাহলে সেটা কি করে দেবো। সেজন্য ব্যবসায়ীরা গ্যাস চাইলে সরকার দিতে পারবে কিন্তু যে মূল্যে বাইরে থেকে কেনা হবে সেই মুল্যই দিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জনগণের টাকা দিয়ে গ্যাসে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলেও তিনি জানান।

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণের যে চেষ্টা তা করে সেটার কিছু সফলতা কিন্তু আমরা দেখাতে পেরেছি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি কিন্তু কিছুটা কমেছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ হচ্ছে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি। একটা ‍উন্নত দেশের কথা, পৃথিবীর সব দেশেই এ অবস্থা বিরাজমান। বাংলাদেশ এখনও সে অবস্থায় পরেনি। আর বিদ্যুতের দাম যদি বৃদ্ধি পায়, মানুষ যদি একটু সাশ্রয়ী হয়, যেমন আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবন সেখানে কিন্তু আমরা বিদ্যুতের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি। এভাবে যদি সবাই উদ্যোগ নেয় তাহলে কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে পারে। আর অত্যাধিক দামে গ্যাস কিনতে হচ্ছে, যারা আমাদের বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী, এখানেও অনেকে আছেন, তাদের তো আমি স্পষ্ট বলেছি যে, গ্যাস আমরা দিতে পারবো, কিন্তু যে মূল্যে গ্যাস বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আনবো সেই মুল্য যদি আপনারা দেন তাহলে আমরা গ্যাস দিতে পারবো। এখন যেটুকু বাড়িয়েছি তারা যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায় তাহলে যে মুল্যে কেনা হবে সেই মুল্য তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকী দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতায় নাই। আর এটা ভুলে যাবেন না যে ভর্তুকির টাকাটা তো জনগণেরই টাকা। ভর্তূকির ফলে যত মুল্য কম থাকে সব থেকে লাভবান কারা- বিত্তবানরা। যারা সাধারণ মানুষ তারা কিন্তু ঠিক মতো বিল দেয়। বৃত্তশালীরা তারা আরাম করবে আর এই স্বল্পমুল্যে পাবে সেটা কি করে হবে। কাজেই সে দিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি।

চুন্নুর বক্তব্যে হৈচৈ

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে একটি প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেই পর্ব তো শেষ হয়ে গেল। এখন তো আর উত্তর পাওয়ার বা প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। এসময় স্পিকার বলেন, আপনি পরে কোন একদিন বলবেন।

চুন্নু আরো বলেন, তাহলে আমি পয়েন্ট অব অর্ডারে বলতে চাই। বলছি। এখন কিন্তু দুটি বিষয় খুব আলোচনায় এসেছে। প্রথমত ৪৫০ কোটি ডলারের আইএমএফের যে ঋণ সে ঋণেল বিষয়টা, এটা পাওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে, একটি হলে যে ওই ঋনের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে, অনতিবিলম্বে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে, এর ফলে কৃষি পণ্য যেটা উৎপাদন করে তার সামগ্রিক উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। যদি বেড়ে যায় তার ফলে আমাদের অর্থনৈতিক যে চাপ আছে তা বাড়বে, ফলে মূল্যস্ফিতি বেড়ে যাবে, সরকারের ওপর চাপ বাড়বে। কীভাবে সরকারের মোকাবিলা করবে?

সংসদে চুন্নু বলেন, ইতিমধ্যে একজন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লু আমাদের দেশে এসেছিলেন, তিনি যখন পাকিস্তানে যান, উনি (তিনি) পাকিস্তান সফরের পর পাকিস্তান ইনসাফ যে দল (পিটিআই), সেই দল ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যায়। এই ভদ্রলোক আসার পরে অনেকে মনে করেছিল এদেশেও কিছু একটা হয়ে যাবে। তবে উনি (তিনি) যাওয়ার পরে সরকারকে বেশ একটু খুশি খুশি লাগছে, আর অন্য দলটিও দেখছি বেশ খুশি। তবে আমরা জাতীয় পার্টি ওইভাবে নিচ্ছি না, স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছি। তবে উনার (তার) সফর নিয়ে রাজনৈতিকভাবে একটা গুঞ্জন আছে। একেই ডলার সংকট, অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে কিছু একটা হয় কিনা? এসময় সংসদে হৈচৈ করে এ বক্তব্যের আপত্তি জানাতে থাকেন সংসদ সদস্যরা। চুন্নু তাদের বলেন, আরে আমাকে বলতে দেন, হৈচৈ করছেন কেন?

এরপর স্পিকার তার মাইক বন্ধ করে দেন, বসতে অনুরোধ করেন। তার পরেও চুন্নু তার বক্তব্য দিয়ে যেতে থাকেন। পরে স্পিকার আবার মাইক চালু করেন। চুন্নুকে বলতে শোনা যায় এবিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যদি উত্তর দেন তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে, জাতি জানতে চায়।

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন ভেবেছিলাম আজ আর কথা বলবো না, কিন্তু প্রশ্ন যখন হয়েছে আমি উত্তর দিচ্ছি। এর আগেই প্রধানমন্ত্রী তার নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর শেষ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ ঋণ দেয় যে দেশ ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা অর্জন করে। এখানে তেমন কোনো শর্ত দিয়ে কিন্তু আমরা ঋণ নেইনি। অর্থনৈতিকভাবে যেমন বিদ্যুৎ আমরা তো ‍বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছি, গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন বিশ্বের কোন দেশ বিদ্যুতে, গ্যাসে ভর্তুকী দেয়, কেউ দেয় না। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, সরবরাহ নিশ্চিত করেছ কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। ইংল্যান্ডে দেড় শ’ ভাগ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে। ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের পর আমরা এখন মাত্র পাঁচ ভাগ বাড়ালাম, আর বাড়ছে কিছু গ্যাসের দাম। গ্যাস যেটা আমরা ছয় ডলারে স্পট মূল্যে কিনতাম এলএনজি সেটা এখন ৬৮ ডলার। কত ভর্তুকি দেবে সরকার। সরকার যে ভর্তুকিটা দেবে সেটা তো জনগণেরই টাকা। দ্রব্যমূল্য সারা বিশ্বেই বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু বাংলাদেশে এখনও আমরা নিম্ন আয়ের বা মধ্যম আয়ের তাদরে জন্য কিন্তু আমরা ন্যায্য মূল্যের কার্ড দিয়েছি সেখানে মানুষ মাত্র ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারে। প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন তেল, চিনি, ডাল এগুলো যাতে সীমিত আয়োর যারা কিনতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তার থেকে নিম্ন আয়ের যারা তাদের জন্য মাত্র ১৫ টাকায় ওএমএসের চাল আমরা দিচ্ছি। সেই সঙ্গে তেল, ডাল, চিনিও তারা কম দামে কিনছে। আর হত দরিদ্র যারা কিছুই কিনতে পারে না তাদের কিন্তু আমরা বিনা পয়সায় খাদ্য সরবরাহ করছি। যারা স্বল্প আয়ের তারা যাতে কষ্ঠ না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা এ ব্যবস্থা করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App