×

জাতীয়

মন্দার মধ্যেও বেড়েছে জনশক্তি রপ্তানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪১ এএম

মন্দার মধ্যেও বেড়েছে জনশক্তি রপ্তানি

ফাইল ছবি

সৌদি আরবের নতুন শহরে কাজের সুযোগ

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে। নতুন অনেক দেশেই সৃষ্টি হয়েছে কাজের সুযোগ। সৌদি আরবে ‘দ্য লাইন’ নামে দূষণমুক্ত যে শহর তৈরি হচ্ছে সেখানে কাজ করছে বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন পুরনো মিলে অনেক দেশে প্রশিক্ষিত কর্মী যাওয়ায় বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। এদিকে মালয়েশিয়ার কাক্সিক্ষত শ্রমবাজার নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটার আভাস মিলেছে।

সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির রিক্রটিং এজেন্সিগুলোর সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের সব রিক্রটিং এজেন্সি ওই দেশে জনশক্তি রপ্তানির সমান সুয়োগ পাবে। বায়রার সভাপতি আবুল বাশার গতকাল রাতে বিষয়টি ভোরের কাগজকে নিশ্চিত করেন।

এ প্রসঙ্গে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক শহীদুল আলম বলেছেন, দক্ষ কর্মী তৈরি হওয়ায় বিদেশে চাহিদা বেড়েছে। নতুন শ্রমবাজার তৈরি হচ্ছে। রেমিট্যান্স বাড়ছে।

বিএমইটি’র তথ্য মতে, ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড সংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। প্রধান কয়েকটি গন্তব্য দেশে চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং বেশ কিছু নতুন বাজার সৃষ্টি হওয়ায় বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে গত বছর। তবে জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও মানসম্পন্ন অভিবাসনে এখনো পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, অদক্ষ শ্রম অভিবাসীর সংখ্যা আগের বছরের ৭৫ দশমিক ২৪ শতাংশ থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৯৩ হাজার ৭৫০ জন কর্মী বিদেশে গিয়েছেন; মহামারি শুরুর আগের সময়ে গড় এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার। গত বছরের শুধু ডিসেম্বরেই ৯৫ হাজার ৯৮৮ জন শ্রমিক বিদেশে পাড়ি জমান। বাংলাদেশি অভিবাসীদের শীর্ষ গন্তব্য হলো সৌদি আরব। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সমস্ত বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ৫৬ শতাংশই হয়েছে এই দেশে। এরপরে রয়েছে ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কাতার, কুয়েত ও জর্ডান। এছাড়া

কিছু দক্ষ ও স্বল্পদক্ষ শ্রমিক প্লাম্বার, ইলেকট্রিশিয়ান বা রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনার টেকনিশিয়ান হিসেবে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

এদিকে ২০২২ সাল থেকে ইতালি ও গ্রিস নতুন করে কর্মী নেয়া শুরু করেছে। ২০২২ সালের প্রথম ১১ মাসে অন্তত ৬ হাজার ৬০০ কর্মী নিয়োগ দিয়েছে ইতালি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে গ্রিসের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।

এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, গ্রিসে বৈধভাবে ৪ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পাবেন। কোরিয়ান এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের (ইপিএস) মাধ্যমে বাংলাদেশ ওভারসিজ অ্যামপ্লয়মেন্ট এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসল) গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি কর্মী পাঠিয়েছে। বেশি বেতন, শ্রম অধিকার এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে পাঠানো হয়েছে এই কর্মীদের। গত জুলাই পর্যন্ত পোল্যান্ডে অভিবাসন করেছেন ১০৩ জন। পূর্ব ইউরোপের বাংলাদেশিদের নতুন শ্রমবাজার রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, মলদোভায় পুরুষ কর্মীর পাশাপাশি নারী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। রিফিউজি এন্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (আরএমএময়ারইউ) তথ্য অনুসারে- ইমারত নির্মাণ, জাহাজ শিল্প, কৃষিকাজ, কলকারখানা, গার্মেন্টস, বেবি সিটিং ও রেস্তোরাঁ কর্মী হিসেবে গত দুই বছরে সেখানে ১০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী পাড়ি জমিয়েছেন। এছাড়া গত বছরের মে পর্যন্ত নতুন শ্রমবাজার আলবেনিয়ায় অভিবাসন করেছেন ৭৯৪ জন বাংলাদেশি কর্মী। মালয়েশিয়া সরকারিভাবে যে পদ্ধতিতে কর্মী নিচ্ছে তা এখনো রেমিট্যান্সে আশা জাগাতে পারেনি।

অপরদিকে দূষণমুক্ত শহর গড়ে তুলে নজির গড়ার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। সবকিছু ঠিক থাকলে ‘নিওম’ প্রকল্পের অধীনে ২০২৪ সালের মধ্যেই সেই শহর পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে। পরিবেশবান্ধব এই শহরের নাম রাখা হয়েছে ‘দ্য লাইন।’ শহর তৈরির কাজ শুরু হয়েছে ২০২১ সালে। উপর থেকে ছবি তুললে মনে হবে যেন কেউ জঙ্গলের মধ্যে একটা লাইন এঁকে দিয়েছে। এজন্যই শহরটির এমন নাম। ১০৫ মাইল দীর্ঘ এলাকায় গড়ে উঠছে এই শহর। তিনটি স্তর থাকবে শহরটিতে। একেবারে উপরের স্তর মাটির উপরে। সেখানে শুধুমাত্র হাঁটাপথ থাকবে। পাহাড়-জঙ্গল কেটে তৈরি হচ্ছে এই দীর্ঘ লম্বা শহর, যত সম্ভব প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি কম করার জন্যই তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে শহরটিকে। যাতে কম সংখ্যক গাছ-পাহাড় কাটা যায়। শহরটিতে চলবে না কোনো গাড়ি! থাকবে না গাড়ি চলাচলের রাস্তাও! সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত হওয়ার নজির গড়ে তুলবে। এই শহর গড়তে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্বে প্রথম এমন শহর গড়ে উঠতে চলেছে। শহরটির নিচের দুটি স্তর ভূগর্ভস্থ। সেখানে গাড়ি চলাচলের রাস্তা থাকবে। দ্বিতীয় স্তর মূলত পরিকাঠামো পর্যবেক্ষণের জন্য রাখা থাকবে। তৃতীয় স্তর দিয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন ট্রেন এবং অন্য যানবাহন যাতায়াত করবে। এর ফলে একেবারে উপরের স্তর থাকবে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত। এই শহরে ১০ লাখ মানুষ একসঙ্গে বাস করতে পারবেন। শহরের নকশা এমনভাবে বানানো হবে, যেন হাসপাতাল, স্কুল, রেস্টুরেন্টসহ সব জায়গায় পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায়। এই শহর থেকে আশপাশের অঞ্চলের যোগাযোগ স্থাপন হবে তৃতীয় স্তরের যাতায়াত ব্যবস্থার মাধ্যমে। সৌদি আরব এই প্রকল্পে ২০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অন্তত তিন লাখ ৮০ হাজার কর্মসংস্থান হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) ৪৮০০ কোটি ডলার বাড়বে পাবে। এই পুরো প্রকল্পটিই ‘নিওম’ প্রকল্পের অধীন। সৌদি আরবের তাবুক প্রদেশের দশ হাজার বর্গমাইল এলাকায় গড়ে উঠছে এই প্রকল্প। ‘নিওম’ শব্দটির অর্থ হল নতুন ভবিষ্যৎ। ড্রোন ট্যাক্সি, জুরাসিক পার্কের (যেখানে ঘুরে বেড়াবে রোবট ডাইনোসর) মতো বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকছে। পুরো শহরকে পর্যবেক্ষণে রাখবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি। রোজকার জীবনে বাসিন্দাদের শহরে থাকতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হলে সেটাও নথিভুক্ত করবে এবং ভবিষ্যতে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে এই প্রযুক্তি।

সূত্র মতে, গ্রিসে গার্মেন্টস সেক্টরে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি কাজ করেন। কৃষি, রেস্টুরেন্ট ও পর্যটন খাতেও অনেকে কর্মরত। বছরে তারা ১০০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ইউরো পাঠান। এর মধ্যে অবৈধ অভিবাসী ধড়পাকড় শুরু হওয়ায় আতঙ্কে অনেক বাংলাদেশি ইতালি, পর্তুগাল, জার্মানি ও ফ্রান্স চলে গেছেন। গত নভেম্বরে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের ফলে গ্রিস এদেশে দূতাবাস খুলতে যাচ্ছে। এতে সেখানে বৈধভাবে কর্মী যাওয়া বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২২ সালের শেষে দেশে রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে। গত বছর ১১ দশমিক ২৫ লাখ বৈদেশিক কর্মসংস্থানের রেকর্ড নিয়ে টানা দ্বিতীয় মাসের মতো ডিসেম্বরেও রেমিট্যান্স প্রবাহে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় ছিল। দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বছরে (ইয়ার অন ইয়ার) ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়ায়। বিদেশে প্রবাসী শ্রমিকদের অভিবাসন বাড়লেও আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে ৭৮৭ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স কম এসেছে। এসোসিয়েশনস অব ব্যাংকার্স (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস এসোসিয়েশন (বাফেদা) রেমিট্যান্সের ডলারের রেট নির্ধারণ করে দেয়ার পর রেমিট্যান্স আসা কিছুটা কমেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App