×

সারাদেশ

দেলোয়ারের অবুঝ শিশুরা জানেনা তাদের বাবা কোথায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:১২ পিএম

দেলোয়ারের অবুঝ শিশুরা জানেনা তাদের বাবা কোথায়

ছবি: ভোরের কাগজ

দেলোয়ারের অবুঝ শিশুরা জানেনা তাদের বাবা কোথায়
দেলোয়ারের অবুঝ শিশুরা জানেনা তাদের বাবা কোথায়
দেলোয়ারের অবুঝ শিশুরা জানেনা তাদের বাবা কোথায়
দেলোয়ারের অবুঝ শিশুরা জানেনা তাদের বাবা কোথায়

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বুরুঙ্গাছড়া সীমান্তে গত শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) দেলোয়ার হোসেন নামের এক যুবককে গুলি করে বিএসএফ।

জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে শিলং ১৯৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ভারতীয় বড়ছড়া বিএসএফ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যের গুলিতে আহত হয় দেলোয়ার। আহত অবস্থায় তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে পরদিন শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে সরজমিন বরুঙ্গাছড়া গ্রামে নিহত দেলোয়ারের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার অবুঝ দুই শিশু মাসুমা (৪) ও রেশমা (২) এখনও জানেনা তাদের বাবা কোথায়? কিংবা আদৌ তাদের বাবা ফিরে আসবে কিনা। এসব কিছু বুঝার বয়স হওয়ার আগেই তার বাবা দেলোয়ার হোসেন বিএসএফের গুলিতে নিহত হন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৮ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন দেলোয়ার হোসেন। ট্রলি চালিয়ে ৮ সদস্যের পরিবার চালাতেন দেলোয়ার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি (দেলোয়ার)-কে হারিয়া তার মা হেলেনা বেগম (৫০) বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে রয়েছেন। চলছে স্যালাইন। তার স্ত্রী কবিতা বেগম কোন কথাই বলতে পারছেন না বার বার মুর্চা যাচ্ছেন।

দেলোয়ারের নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুরো গ্রাম জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসছে। এখনও গ্রামবাসির চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। দেলোয়ারের অবুঝ দুই কন্যাশিশু ও পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে বাড়িতে ভীড় করছেন আশপাশের কয়েকটি গ্রামের নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজন।

বড় বোন হালেমা আক্তার (৩৫) দেলোয়ারের দুই অবুঝ শিশুকে নিয়ে এ প্রতিবেদকের সামনে নিয়ে এসে বিলাপ করতে করতে বললেন, আমার ভাইকে কে ফিরিয়ে দেবে? আমার ভাই ছাড়া যে আমাদের সংসার অচল। কে দায়িত্ব নেবে অবুঝ দুই শিশুসহ আমাদের ৮জনের পরিবারের? আমরা তো বিচারও পাইয়াম না (বিচারও পাবনা)।

যা বললেন প্রত্যক্ষদর্শীরা

বরুঙ্গাছড়া গ্রামের মৃত আব্দুন নুরের স্ত্রী ফুলজাহান (৭০) বলেন,কি বলব বাবা জীবনে কোনদিন এতো বিএসএফ দেখিনি চারিদিকে পোকার মতো শুধু বিএসএফ আর বিএসএফ। আমরা ভয়ে দৌড়াচ্ছি, তারা যদি আমাদের ধরে নিয়ে যায়।

একই গ্রামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী নাসরিনা বেগম ২৮ বলেন, গুলি খেয়ে আহত হয়ে যখন আমাদের বাড়ির উঠানে পড়ে রয়েছিল তখন বাড়িতে কোন পুরুষ লোক ছিলনা সবাই ছিল নামাজে। চারিদিক থেকে বিএসএফ এসে তাকে টেনে হিছড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। পুরো উঠান জুরে দেলোয়ারের রক্ত পড়েছিল। এসময় এলাকাবাসি বিএসএফকে লক্ষ করে পাথর দিয়ে ঢিল ছুড়তে থাকলে তারা দ্রুত চলে যায়। তবে যাওয়ার সময় গুলি করতে করতে যায় তারা।

একই গ্রামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী (৭০) সিরাজ মিয়া বলেন, জীবনে এভাবে কোনদিন এতো বিএসএফ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেখিনি। ভয়ে পুরো গ্রামের মানুষ দিকবিদিক দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। প্রথম যখন গন্ডগোল শুরু হয় তখন এলাকাবাসী বিজিবিকে কল দিয়েছিল। এসময় সঙ্গে সঙ্গে বিজিবি আসলে হয়তো এরকম ঘটনা ঘটতোনা। তারা এসেছে ঘটনার আধাঘন্টা পর। ততক্ষণে বিএসএফ গুলি করতে করতে ভারতের ভিতরে চলে গেছে।

রবিবার রাত সোয়া আটটায় দেলোয়ারের লাশ বাড়ি নিয়ে এলে সেখানে এক হৃদয়বিদায়ক ঘটনার সৃষ্টি হয়। এসময় স্বজনদের কান্নায় সেখানকার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠে। শেষবারের মতো দেলোয়ারকে এক নজর দেখার জন্য উৎসুক জনতার ভীড় সামলাতে পুলিশ-বিজিবিকে হিমশিম খেতে হয়েছে।

রাত নটায় উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন আ.লীগ কার্যালয় প্রাঙ্গনে দেলোয়ারের নামাজে জানাজা শেষে তাকে বড়ছড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজার নামাজে পুলিশ-বিজিবি কর্মকর্তা, তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি হাজী আলকাছ উদ্দিন খন্দকার, তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ ইফতেখার হোসেন, এসআই মোহাম্মদ শাহাদত হোসাইন, টেকেরঘাট পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এএসআই আরিফ হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাজী রিয়াজ উদ্দিন খন্দকার লিটন, উত্তর শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী হায়দারসহ এলাকার সর্বস্থরের লোকজন অংশগ্রহণ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App