×

সারাদেশ

দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গির কবরস্থানে মরদেহ পাওয়া যায়নি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:০৫ পিএম

দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গির কবরস্থানে মরদেহ পাওয়া যায়নি

ছবি: ভোরের কাগজ

বান্দরবানে থানচি ও রুমা দুই উপজেলা দুর্গম পাহাড়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দার শারক্বীয়ার’ এক জঙ্গির কবরস্থানে তার মরদেহ উত্তোলন করতে গিয়ে সেখানে তার মরদেহ পাওয়া যায়নি। তবে কবর দেওয়ার জায়গায় যে সামান্য কিছু আলামত পাওয়া গেছে সেটি নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রুমা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুন শিবলী।

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে রুমা ইউএনও মামুন শিবলী সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের স্পষ্ট আদেশ ছিল মরদেহ উঠাতে হবে। যারা জঙ্গি ছিল তারা কবরস্থান দেখিয়ে দেবে। তারা দেখিয়ে দিয়েছে। কবর খোড়া হয়েছে কিন্তু মরদেহ পাওয়া যায়নি। সেখানে সামান্য কিছু আলামত ছিল এগুলো নিয়ে আসা হয়েছে। যদি শনাক্ত করার মত কিছু হয়।

ইউএনও মামুন শিবলী বলেন, থানচি-লিক্রি সীমান্তে সড়কে ২২ কিলোমিটার এলাকা থেকে দেড় ঘন্টার মত হাঁটতে হয় লুংয়ংমুয়াল পাড়া পর্যন্ত। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে আবার কবরস্থান পর্যন্ত পৌঁছাতে লাগে আরও দুই ঘন্টার সময়। কবরস্থানে যেতে পাহাড় থেকে রশি ধরে নামতে হয়েছে। কবর খোঁড়ার সময় উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব ও সেনা সদস্যসহ মোট বিশজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।

রুমা উপজেলার ৩নং রেমাক্রিপ্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম এলাকায় নিজেদের ‘দ্বন্দের জেরে’ এক জঙ্গিকে খুন করে কবর দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ। ১১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার ৫ জঙ্গির রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে দুই জঙ্গি এমন তথ্য দেওয়া বলে জানায় তারা।

গত শুক্রবার র‌্যাব ও পুলিশের একটি দল দুই জঙ্গিকে সঙ্গে নিয়ে সেই কবরস্থান চিহ্নিত করে এসেছে বলেও জানানো হয়। পরে আদালতের নির্দেশ একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার মরদেহ উত্তোলন করতে শনিবার যাওয়ার কথা থাকলেও শীতে প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে তা বাতিল করা করা হয়।

গত রবিবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে সেখানে মরদেহ তুলতে যায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসক, পুলিশ, র‌্যাব ও সেনা সদস্যের একটি দল। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন ওই দুর্গম গহিন পাহাড় থেকে রবিবার রাতে ফিরে আসেন দলটি।

রুমা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন সোমবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাস্থলে একজন এসআইসহ দুই পুলিশ সদস্যকে পাঠানো হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য হল, কবর খুঁড়ে মরদেহ পরিবর্তে একটি কম্বল পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কয়েকদিন আগে এটা খুঁড়া হয়েছে। মাটি দেওয়া হয়েছে। এটা যে ইনটেক শুরু থেকে বুঝা যায়।

আগেভাগে জঙ্গি বা অন্য কেউ মরদেহটি সরিয়ে ফেলেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি আমলগীর হোসেন বলেন, পুলিশের ধারণা সেখান থেকে কোন মৃতদেহ সরানো হয়নি। এটা একটা ভুয়া হতে পারে। এটা একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে জঙ্গিরা নাটক করেছে হতে পারে। বিশেষ কোন নির্দিষ্ট এজেন্ডা বা উদ্দেশ্যও তাদের থাকতে পারে। তবে সেখানে এরকম কিছু পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। তা না হলে সেখানে কবরের মত কিছু একটা করা হবে কেন।

‘তবে এমনও হতে পারে যার কথা (নিহত জঙ্গি) বলা হচ্ছে তাকে মেরে মাটি চাপা দিয়েছে। তারা হয়ত চিন্তা করেনি যে, এত দুর্গম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পৌঁছাতে পারবে। হয়তো তারা ভেবে নিয়েছে সে তো মরেই গেছে তাকে আর খুঁজবে না।’

ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করতে রবিবার সকালে হেলিকপ্টারযোগে রুমা ও থানচি দুই উপজেলা রেমাক্রিপ্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের লুংয়ংমুয়াল পাড়া পর্যন্ত যান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মইন ও গোয়েন্দা শাখা প্রধান মো: মশিউর রহমান।

র‌্যাবের এই মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান, কুমিল্লা থেকে একই সময়ে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হওয়া ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরে সঙ্গে আমিনুল ইসলাম ওরফে আল আমিন নামে যিনি নিখোঁজ ছিলেন কবরস্থানটি তারই। ১৭ বছর বয়সী কিশোর ওই জঙ্গি তার কবরস্থানটি দেখিয়েছেন। মরদেহ উত্তোলন দলটির সঙ্গে নিহত আল আমিন বাবা মো. নূর হোসেনকেও নিয়ে আসা হয়েছে।

খন্দাকার আল মঈন বলেন, ১১ জানুয়ারি বান্দবানের রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জঙ্গির ছয়দিনের রিমান্ডের জিজ্ঞাসাসাবাদে এক জঙ্গি কিশোর (১৭ বছর বয়সী) স্বীকার করে ২৫ নভেম্বর প্রশিক্ষণরত অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামে আল আমিন নামে এক জঙ্গি মারা গেছেন। পাহাড়ে গহীনে তাকে কবর দেওয়া হয়েছে। তার মরদেহ উত্তোলন করে সুরতহালসহ আইনি প্রক্রিয়ায় সবকিছু করা হবে।

মরদেহ উত্তোলন দলটির সঙ্গে থাকা নিহত আল আমিনের পিতা মো. নূর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আসল পরিবেশটা কি আজকে এসে দেখলাম। ঘটনাস্থলে ডেকসি, হাড়ি পাতিল এবং থালা-বাটি দেখে মনে হচ্ছে এই গহীন অরণ্যে তারা (কেএনএফ) কোন একটি গ্রুপকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এটা খুব দুর্বিষহ জীবন। মৌলবাদীর সঙ্গে যারা ইসলামকে অপপ্রচার চালিয়ে ভুল ব্যাখা দিয়ে সরকার ও জাতির বিরোদ্ধে ভুল তথ্য দিয়ে ভুল পথে ধাবিত করেছে তাদের বিচার চায়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বান্দরবান জেলায় কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) একটি সশস্ত্র সংগঠন অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে অক্টোবর মাসে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে জানায় র‌্যাব।

এরপর অক্টোবর মাস থেকে জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যদের বিরোদ্ধে রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব ও সেনা সদস্যের যৌথ বাহিনী। পরবর্তীতে এ অভিযান চালানো হয় থানচি উপজেলাতেও। যৌথ বাহিনীর এ অভিযানে এ পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দার শারক্বীয়া’ দলের পার্বত্য চট্টগ্রাম বান্দরবান থেকে ১২ জন সদস্য এবং পাহাড়ে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের ১৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App