×

জাতীয়

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পাশে থাকবে আইএমএফ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৩০ এএম

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পাশে থাকবে আইএমএফ

ছবি: সংগৃহীত

চলমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে আবারো সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে সংস্থাটি। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেরই বা প্রস্তুতি কী- সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।

গতকাল রবিবার সকালে ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন সফররত আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তোইনেত মনসিও সায়েহ। একইদিন রাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের আমন্ত্রণে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ে নৈশভোজে অংশ নেন। নৈশভোজের আগে সন্ধ্যায় আইএমএফ ডিএমডি তার প্রতিনিধিদলসহ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। দুটি বৈঠকেই তিনি চলমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে অর্থনীতিতে যে ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে সে ব্যাপারে বাংলাদেশের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বৈঠক সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা। প্রতিনিধদলটি পাঁচ দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছে।

জানা গেছে, আইএমএফ ডিমএডি অ্যান্তোইনেত মনসিও সায়েহের এবারের সফরটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে নিয়েছে সরকার। কারণ এ সংস্থা থেকে বাংলাদেশকে সাড়ে ৪৫০ কোটি বা সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার বিষয়ে শর্তসহ খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তবে তার এই সফরে ঋণের বিষয়টি আলোচনার টেবিলে নেই বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে। বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছেন আইএমএফের ডিএমডি। তিনি বিভিন্ন দেশ সফর করছেন, অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন। বাংলাদেশে আইএমএফ কাউন্টার পার্ট হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশ কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মেজবাউল হক আরো বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির নীতিগুলো কীভাবে প্রণয়ন করা যায় এবং তার প্রয়োগ করার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরির্বতনজনিত ঝুঁকির প্রভাব মোকাবিলায় আইএমএফ কোন কোন খাতে অর্থায়ন করতে পারে তা এসেছে আলোচনায়। করোনা ভাইরাস মহামারিপরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেছে প্রতিনিধিদল। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সক্ষমতা বাড়াতে অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছে বৈশ্বিক সংস্থাটি।

আইএমএফ বলছে, এই সফর বংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরো জোরদার করতে সহায়ক হবে বলে তারা আশা করছে। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ অন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবেন আইএমএফ ডিএমডি। বাংলাদেশ যেসব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে আছে, সেসব বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি আইএমএফ কীভাবে সেসব চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণে সহযোগিতা করতে পারে, সেসব বিষয় আসবে এসব বৈঠকে। এছাড়া বাংলাদেশে নারী অধিকার কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করেছে- আইএমএফের কাছ থেকে বড় অঙ্কের ঋণ পাবে বাংলাদেশ। মূলত সেই ঋণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার আগে ডিএমডি এ সফর করছেন।

জানা গেছে, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী বৈঠকেই বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করা হবে। আর সেই বোর্ড মিটিংয়ে বাংলাদেশ ঋণ পেতে পারে কিনা কিংবা ঋণ ফেরত দিতে কতটা সক্ষম সে বিষয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ করবেন অ্যান্তোইনেত মনসিও সায়েহ। এ কারণে তার এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বাংলাদেশ। রবিবার সন্ধ্যায় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও আইএমএফ ডিএমডি বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত এই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়া কেউ অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি। এমনকি সংবাদমাধমের প্রবেশাধিকার রাখা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলার সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো ভালো থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। এ কারণে চলতি বছরের মধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেব প্রথম কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। এছাড়া পরবর্তী আরো সাতটি কিস্তিতে আইএমএফ ঋণের পুরো অর্থ পরিশোধ করবে।

সম্প্রতি সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, আইএমএফ সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি। এই অর্থ বাংলাদেশ পাবে সাত কিস্তিতে। এছাড়া নভেম্বর মাসে এই ঋণ পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন সংস্থাটির কর্মকর্তা কর্মকর্তা রাহুল আনন্দ। ওই সময় পনের দিন বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আইএমএফের নির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আইএমএফ বোর্ড এ ঋণ প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারে। এ ঋণের অর্থ দিয়ে যেসব প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার হাতে নেবে, তার উদ্দেশ্য হবে সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং দুর্দশায় পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিয়ে দৃঢ়, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নেয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতেও এই ঋণের অর্থ ব্যয় করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App