×

মুক্তচিন্তা

মানবাধিকারের মুখ ও মুখোশ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:০০ এএম

একবিংশ শতাব্দীর এ উত্তর আধুনিক সময়ে এসেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো মানবাধিকার বিষয়ে সোচ্চার একটি দেশে বর্ণবাদের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার বিষয়ে মানুষকে রাস্তায় প্ল্যাকার্ড হাতে দেখতে হচ্ছে! তাহলে কী মানবাধিকার তাদের একটি মুখোশ মাত্র! যার আড়ালের প্রকৃত মুখটি বিশ্ববাসীর সামনে প্রায়ই ভেসে ওঠে। বলা হয়ে থাকে, মার্কিন দেশকে সভ্য করেছেন মার্টিন লুথার কিং। তার নেতৃত্বে কালো মানুষ পেয়েছে সাদা মানুষের সমান অধিকার, আর সাদা নাগরিকরা পেয়েছে বর্ণবাদের অভিশপ্ত অহংকার থেকে মুক্তি! আসলেই কি মুক্তি মিলেছে? তাহলে বোস্টনের অলিগলিতে ‘স্টপ পুলিশ ব্রুটালিটি’ সেøাগানে কেন মানুষ রাস্তায় নেমেছে? কেন মানুষ আবারো বর্ণবাদী আচরণে পুলিশকে অভিযুক্ত করছে? কেন মানবাধিকার শুধু সাদা আর কালোর দেয়ালে দ্বৈতরূপ পরিগ্রহ করে? এ প্রশ্ন এখন সবার মনে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সৈয়দ ফয়সাল আরিফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্টের বোস্টন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী। যিনি সম্প্রতি দেশটির ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনে কেমব্রিজের চেস্টনাট স্ট্রিটে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তরুণ সৈয়দ ফয়সাল আরিফ কোনো ফৌজদারি অপরাধ বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য নয় বরং বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করে স্থানীয় গণমাধ্যম। মাত্র ২০ বছর বয়সি ফয়সাল কোনো ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত না হয়েও শ্বেতাঙ্গ পুলিশের বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন বলে মনে করছে ফয়সালের স্বজনরা। যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নৃশংসতা নিয়ে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে, যাকে আজো যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে স্বীকার করে না কিন্তু অন্য দেশে ঠিকই নিজেদের বুলি আওড়াতে ওস্তাদ তারা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভও হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, নৃশংসতা ও অসদাচরণের কারণে দেশটির পুলিশের সংস্কার দাবিতে বহু আলোচনা ও বিতর্ক হয়েছে, বাস্তবে যা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। ২০১৪ সালের আগস্টে মাইকেল ব্রাউন নামের ১৮ বছর বয়সি এক হাইস্কুল শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে নিহত হন। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে পুলিশের সহিংসতার সমাধানে মার্কিন সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সামনে থেকে কাজ করছে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন; কিন্তু তারপরও বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে প্রশাসন তেমন সাফল্য দেখাতে পারছে না। ২০২০ সালের ২৫ মে জর্জ ফ্লয়েড নামের কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে আটক করার সময় হাঁটু দিয়ে ঘাড় চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ। পুলিশের নির্যাতন থেকে বাঁচতে ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ বলে আকুতিও করেছিলেন ফ্লয়েড। কিন্তু পুলিশ তার প্রতি কোনো করুণা করেনি। কিন্তু মার্কিন স্টেট ও ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট যাচাই-বাছাই ছাড়াই বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সুনাম অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান র‌্যাব সদস্যদের মানবাধিকারের নামে সুবিচার করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এসব সত্ত্বেও আমেরিকার পুলিশ সংস্কার নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। বাস্তবে মানবাধিকার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দ্বৈতনীতির একটা মুখোশ মাত্র! মানবাধিকারের চেয়ে ভূ-রাজনীতি, সামরিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, কৌশলগত অবস্থান বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সিরিয়ার শিশুদের কান্না কখনো যুক্তরাষ্ট্রের কানে পৌঁছেনি, আফগানিস্তানের উদ্বাস্তু শিশুরা জানে না তাদের অনাগত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে, ইরাক কিংবা লিবিয়ায় এখনো কত স্বপ্ন ধুমড়ে-মুচড়ে বেহুশ তার খবর মার্কিন প্রশান রেখেছে কী? যুক্তরাষ্ট্রে কিছু দিন পর পরই মানবাধিকার লঙ্ঘন ও জাতিগত সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও তারা মানবাধিকার বিষয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশকে পরামর্শ দিচ্ছে। আমরা চাই না আমাদের দেশে তো বটেই অন্য কোনো দেশেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হোক। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাদাগিরি দেখলে মনে হয় তাদের চেয়ে মানবিক আর কেউ নেই, তবে কেন আমাদের নিষ্পাপ ফয়সাল আরিফের বুকে বিদ্ধ হলো মার্কিন পুলিশের বুলেট? তানজিব রহমান, গবেষক ও লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App