×

সারাদেশ

ঝিকরগাছায় রোড ডিভাইডার যেন মরণ ফাঁদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:১৫ পিএম

ঝিকরগাছায় রোড ডিভাইডার যেন মরণ ফাঁদ

ছবি: ভোরের কাগজ

যশোরের ঝিকরগাছায় লাউজানি রেলক্রসিং সংলগ্ন রোড ডিভাইডার যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, হচ্ছে প্রাণহানি। সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে এই ডিভাইডার। গত দুই বছরে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে প্রায় অর্ধ শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রাণঘাতি এই ডিভাইডার অপসারণ বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কোনো রকম উদ্যোগ নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সূত্রমতে, যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দিয়ে দিনে রাতে প্রায় কয়েক হাজার পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহীসহ ভারি যানবাহন চলাচল করে। ২০১৭-১৮ সালে এই মহাসড়ক পুনঃনির্মাণের সময় দীর্ঘ ৩৪ কিলোমিটার রাস্তার জায়গার ভিত্তিতে প্রস্থতা বাড়ানো হয় ২৪ ফুট থেকে ৩৪ ফুট পর্যন্ত। এবং রাস্তার দুই পাশে ৫ ফুট করে সোল্ডার নির্মাণ করা হয়। আর এই মাপের ওপরেই ঝিকরগাছা উপজেলার লাউজানি রেলক্রসিংয়ে প্রায় ১ ফুট প্রশস্ত ও ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি ডিভাইডার স্থাপন করা হয়।

সম্প্রতি গত বছরের ডিসেম্বরে ৭টি এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে দুটিসহ মোট ৯টি ট্রাক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। সর্বশেষ শনিবার রাত তিনটার দিকে বেনাপোলগামী মুরগীর বিষ্টা বোঝাই একটি ট্রাক ডিভাইডারে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। প্রাণহানি না ঘটলেও ট্রাকটি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। ট্রাকটি উল্টে রাস্তায় পড়ে থাকায় জানজট সৃষ্টি হয়।

পরে হাইওয়ে থানা পুলিশ এসে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন। ঘন কুয়াশার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে অনেকেই। তবে ঝিকরগাছা পারবাজার থানা মোড়ে রোড ডিভাইডারে কোন দুর্ঘটনা না ঘটলেও লাউজানি রেলক্রসিং সংলগ্ন ডিভাইডারেই শুধু দুর্ঘটনা হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভারি পণ্যবাহী যানবাহনে করে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেয়া করা হয়। বিশেষ করে রাতের বেলায় গাড়ির হেডলাইটে এ ডিভাইডারকে স্পষ্টভাবে বোঝাও যায় না। ফলে প্রতিনিয়ত এই ডিভাইডারকে ধাক্কা দিয়ে অনেক যানবহন উল্টে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় অনেক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও স্থানীয়দের অভিযোগ গত দুই বছরে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে প্রায় অর্ধশতাধিক যানবাহন দুর্ঘটনার খবর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে গেলেও তারা প্রতিরোধের উদ্যোগ নেয়নি।

বেনাপোলের ট্রাকচালক আব্দুর রহিম বলেন, রাতে ট্রাক চালানোর সময় ডিভাইডার দেখা যায়না। ডিভাইডারের কারণে রাস্তাও সরু হয়ে গেছে। এই ডিভাইডার তুলে দিলে দুর্ঘটনা কমবে।

তবে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং দুর্ঘটনারোধে ঝিকরগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত নিজ উদ্যোগে সোমবার (৯ জানুয়ারি) এ ডিভাইডারে রিফ্লেকশন স্টিকার লাগিয়ে দিয়েছেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাভারন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিশাত আল নাহিয়ান। তিনি বলেন, আমরা ডিভাইডারে স্টিকার লাগিয়েছি যাতে দূর থেকে চালকরা ডিভাইডার দেখতে পায়। এ ব্যাপারে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও তিনি জানান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম জোনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজি ওয়ালিউল হক বলেন, শুধুমাত্র ডিভাইডারের কারনে নয় বরং ড্রাইভারের অসাবধানতায় এই দুর্ঘটনা ঘটছে। ড্রাইভার যদি নিয়ম মেনে সড়কে তার লেন দিয়ে চলে তাহলে দুর্ঘটনা ঘটবে না। এছাড়া রাতের বেলা কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।

তিনি আরো জানান, অতিরিক্ত নিরাপত্তার স্বার্থে আগামী সপ্তাহের মধ্যে রেলক্রসিংয়ের আগে রাস্তায় যে গতিরোধক আছে তারও ১৫/২০ ফুট সামনে অন্তত পাঁচটি করে র‌্যাম্বল স্ট্রিপ (গতিরোধক) দেওয়া হবে। ডিভাইডার নির্মাণে কোন ত্রুটি বা অপ্রয়োজনীয় নয় বলে তিনি দাবি করেন। রেল চলাচলের কারণে মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে ডিভাইডার তুলে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই বলেও তিনি জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App