×

জাতীয়

৫ বছরে ১ লাখ ২২ হাজার অগ্নিকাণ্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:১০ এএম

৫ বছরে ১ লাখ ২২ হাজার অগ্নিকাণ্ড

ফাইল ছবি

শীতকাল এলেই বাড়ে আগুন লাগার ঘটনা। আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে বছরের এই সময়টাতে দেশে অগ্নিকাণ্ড বেড়ে যায় ও ঘটে প্রাণহানিও। গেল ৫ বছর প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে দেশে। গত চার বছরে অগ্নিকাণ্ডে ৩ হাজার মানুষের প্রাণহানিসহ আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ৮৬৩ জন। শুধু হতাহতই নয়, আগুনে হচ্ছে আর্থিক ক্ষতিও। গত ৫ বছরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

এসব সূত্রে জানা যায়, বড়-ছোট মিলিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ধরণ ও কারণ তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে বৈদ্যুতিক গোলযোগই আগুন লাগার অন্যতম কারণ। নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণেই বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটছে। গত ৬ বছরে ৩৯ শতাংশ অগ্নিকাণ্ডের কারণ বৈদ্যুতিক গোলযোগ। বিশ্লেষকরাও বলছেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় নগরায়ন ও শিল্পায়ন বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৈরি হচ্ছে বড়-বড় ইমারত ও কারখানা। এ সবের কারণে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে। এছাড়াও শীত এলেই গ্যাসের চাপ কমে যাচ্ছে। শহর এলাকার মানুষ অনেকটাই বাধ্য হয়ে বৈদ্যুতিক ইনডাকশন চুলা ও মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তবে দেখা যাচ্ছে, এসব কর্মকাণ্ডে নিরাপত্তার দিকগুলো বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। নিরাপত্তাকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হচ্ছে না। অনেকেই খরচ বাঁচাতে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক লাইন সঞ্চালন সরঞ্জাম ও পণ্য ব্যবহার করছে। এমন পরিস্থিতিতে কয়েকটি চক্রও সুযোগ নিয়ে মানহীন সরঞ্জাম তৈরি করে ফায়দা লুটছে।

বিএসটিআইয়ের তথ্যমতে, ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৩৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মান নিয়ন্ত্রণকারী এ সংস্থাটি। ১৫১টি মামলা দায়েরসহ জরিমানা করা হয়েছে ২ কোটি ৮ লাখ ৩৫ লাখ টাকা। বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক রিয়াজুল হক গতকাল বলেন, আমরা নিয়মিতই এসব বন্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। শুধু জরিমানা ও মামলা নয় আমারা নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও তার জব্দ করে ধ্বংসও করছি। তবে শুধু অভিযানই নয় এসব রোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলেও জানান বিএসটিআইয়ের এ কর্মকর্তা।

ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্র বলছে, গত ২০১৬ সালে ১৬ হাজার ৮৫৮টি, ২০১৭ সালে ১৮ হাজার ১০৫টি, ২০১৮ সালে ১৯ হাজার ৬৪২টি, ২০১৯ সালে ২৪ হাজার ৭৪টি, ২০২০ সালে ২১ হাজার ৭৩টি ও ২০২১ সালে ২২ হাজার ২২২টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটে ২০১৯ সালে। সূত্র মতে, গত ২০১৬ সালে ৩৯ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৩৬.৯৫ শতাংশ, ২০১৮-১৯ সালে ৩৯ শতাংশ, ২০২০ সালে ৩৬.৬৭ শতাংশ ও ২০২১ সালে ৩৬.৮২ শতাংশ অগ্নিকাণ্ডের কারণ ছিল বৈদ্যুতিক গোলযোগ।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, অধিকাংশ সময়েই দেখা যাচ্ছে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত হচ্ছে। আর এরজন্য দায়ী নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবহার। এসব রোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো অভিযানও চালাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি হচ্ছে তা হলো সচেতনতা। কম দামের জন্য নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করে নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলাসহ আপনি অসদ উপায় অবলম্বনকারীদেরও সহযোগী হয়ে উঠছেন কিনা বা নিজের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছেন কিনা- তা আপনাকেই ভাবতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব পার করছি। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অবকাঠামো বাড়ছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, প্রত্যেক জায়গায় ফায়ার হাইড্রেন্ট ছাড়াও নির্মাণ নিয়মবিধি মানতে হবে। সেখানে আমরা একটু সচেতন হই। অগ্নিনিরাপত্তা খাতে খরচকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখি। ফায়ার এক্সটিংগুইশার সচল রাখি ও গ্যাস লিকেজ থেকে বাঁচতে লাইন থেকে শুরু করে চুলা জ্বালানোর প্রক্রিয়া পর্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করি।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডে আর্থিক ক্ষতিও কিন্তু কম নয়। আগুনে ২০১৭ সালে ২৫৭ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ৩৮৬ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে ৩৩০ কোটি টাকা, ২০২০ সালে ২৪৭ কোটি টাকা ও ২০২১ সালে ৩৩৩ কোটি টাকা মিলিয়ে মোট ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা।

অগ্নি নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, ভবনসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় শুধু ফায়ার সার্ভিসই নয় রাজউক ও সিটি করপোরেশন কাজ করে। এখানে সমন্বয়ের যেমন একটা ঘাটতি রয়েছে তেমনি রয়েছে মনিটরিং ব্যবস্থার। ফায়ার সার্ভিসকে এখনো ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হলো না। তারা শুধু চিঠি দেয়, কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। এছাড়া দেখা গেছে, প্রতিবছরই সব জায়গায় অডিট, সার্ভে অনুসরণ করা হয় না। তিনি আরো বলেন, শুধু সংশ্লিষ্টদের দোষ দিলেই হবে না আমাদেরও সচেতন হতে হবে। শীতকালে কয়েল, হিটার, ইনডাকশন, ওভেন ও সিলিন্ডার ব্যবহারে সাবধানী হতে হবে আমাদের। অগ্নিনিরাপত্তাকে ব্যয় নয়, বিনিয়োগ হিসাবে দেখতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App