×

জাতীয়

মাদকের বিরুদ্ধে ‘নতুন যুদ্ধ’: তালিকায় ৯৩ শীর্ষ মাদক কারবারি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:০২ এএম

মাদকের বিরুদ্ধে ‘নতুন যুদ্ধ’: তালিকায় ৯৩ শীর্ষ মাদক কারবারি

ফাইল ছবি

এক লাখ মাদকাসক্ত, জনসচেতনতা বাড়াতে প্রস্তুত অ্যাপ

শুধু ধরপাকড় নয়, বাস্তবিক অর্থে মাদক নিয়ন্ত্রণে ‘কম্প্রিহেন্সিভ অ্যাকশন প্ল্যান’ বা সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা শুরু করতে যাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। এজন্য গত ১০ মাসের বেশি সময় ধরে সারাদেশে কর্মশালা করে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণের নতুন এ যুদ্ধে কাজ করা হবে মাদকের সরবরাহ বন্ধ, চাহিদা রোধ ও ক্ষতি কমানো বা নিরাময় নিয়ে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতায় মাদকের সরবরাহ ও কারবার ঠেকাতে ইতোমধ্যেই তৈরি করা হয়েছে বিশেষ অ্যাপ। তালিকা করা হয়েছে এক লাখ মাদকাসক্তের। যাদের চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে। কাজ চলছে মাদক কারবারিদের তালিকা তৈরিরও। এরই মধ্যে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা শীর্ষ ৯৩ মাদক কারবারির তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। ডিএনসি বলছে, মাদকবিরোধী এ অভিযান শুরুর চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা জমা দেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই সারাদেশে একযোগে কার্যক্রম শুরু করা হবে। এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

ডিএনসি সূত্র জানিয়েছে, কম্প্রিহেন্সিভ অ্যাকশন প্ল্যানের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ড্যাম-অ্যামস (অ্যাওয়ারনেস এন্ড মোটিভিশনাল অ্যাক্টিভিটি মনিটরিং সিস্টেম) নামে বিশেষ অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ দেখতে পারবেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে কোন জেলায় ও উপজেলায় কী ধরনের সচেতনতামূলক কর্মশালা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন এলাকার মানুষ জানাতে পারবেন, তার এলাকায় কী ধরনের কর্মশালা করা উচিত। অধিদপ্তরও অ্যাপের মাধ্যমে কর্মশালা বাস্তবায়নের তথ্য নিতে পারবে। এছাড়া সারাদেশের

মাদক কারবারিদের নাম-ঠিকানা, কোথায় মাদক মজুত আছে এবং কোথাও কারবার চলছে কিনা- সে বিষয়ে তথ্য দেয়া যাবে। এক্ষেত্রে তথ্য সরবরাহকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে। তথ্য পাওয়ার পর ডিএনসির আভিযানিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে।

ডিএনসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু ধরপাকড় নয়, মাদকবিরোধী নতুন এ অভিযানে মাদকের সাপ্লাই, চাহিদা ও নিরাময় নিয়ে কাজ করা হবে। যারা এরই মধ্যে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের সুপথে আনতে নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সারাদেশে ৭০ লাখ মাদকাসক্ত থাকলেও কার্যক্রম শুরুর জন্য এক লাখ মাদকাসক্তের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের আওতায় আসবে অন্যরাও। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কমিউনিটি, প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কমিউনিটি পর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকর্মীরাই মাদকাসক্তদের চিকিৎসা দেবেন, কমিউনিটি পর্যায়ে সম্ভব না হলে প্রাইমারি পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হবে। তাতেও না হলে সেকেন্ডারি অর্থ্যাৎ জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পাঠানো হবে। যদি জেলাতেও না হয়, তাহলে ঢাকায় কেন্দ্রীয় মাদক নিরাময় কেন্দ্রে অথবা পাবনার মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হবে। এ কার্যক্রমের সঙ্গে যে চিকিৎসক ও নার্সরা সম্পৃক্ত থাকবেন, তাদেরও বিশেষ প্রশিক্ষণ দেবে ডিএনসি। ফলে যখন কোনো মাদকাসক্ত চিকিৎসা নিতে যাবেন, তিনি আসক্তির কোন পর্যায়ে আছেন, সহজেই বুঝতে পারবেন সংশ্লিষ্টরা। পরিকল্পনা আছে প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাদক নিরাময়ের জন্য আলাদা ওয়ার্ড খোলারও।

ডিএনসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, কম্প্রিহেন্সিভ অ্যাকশন প্ল্যান শুরু হওয়ার আগে জনসাধারণকে এ বিষয়ে জানানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনায় নেয়া হয়। এজন্য গত ১০ মাসের বেশি সময় ধরে সারাদেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪ জেলা ও ৪২৬টি উপজেলায় সচেতনতামূলক কর্মশালা করা হয়েছে। কর্মশালাগুলোতে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে। আমাদের পরিকল্পনাগুলো সবার সঙ্গে শেয়ার করার পর তারাও আমাদের বেশ কিছু বিষয় যুক্ত করার অনুরোধ করে। জনসাধারণের সেসব সুপারিশের যেগুলো আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে, সেগুলো চূড়ান্ত অনুমোদনের সুপারিশের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অ্যাপটি যাতে সবাই যথার্থভাবে ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য ডিএনসির জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। অ্যাপের তথ্য মনিটরিংয়ের জন্য অধিদপ্তরে মনিটরিং সেল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কম্প্রিহেন্সিভ অ্যাকশন প্ল্যানের অনুমোদন পাওয়ার পর প্লে-স্টোর ও অ্যাপল স্টোর থেকে এটি ইনস্টল করা যাবে।

মাদকের বিরুদ্ধে এই নতুন যুদ্ধ শুরু হবে কবে- জানতে চাইলে ডিএনসির উপপরিচালক (নিরোধ শিক্ষা) মো. মাঞ্জুরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, শুধু ধরপাকড় করে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। এজন্যই কম্প্রিহেন্সিভ অ্যাকশন প্ল্যান হাতে নেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, এটির কার্যক্রম শুরু হলে মাদক নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসির উপপরিচালক বলেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কিছু পরিকল্পনা আলোচনা পর্যায়ে আছে। তবে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই আমরা কার্যক্রম শুরু করব।

প্রসঙ্গত, ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগান সামনে রেখে ২০১৮ সালের ৪ মে দেশব্যাপী শুরু হয় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান। চলমান এ অভিযানে অনেক কারবারি গ্রেপ্তার ও বন্দুকযুদ্ধে ৬ শতাধিক নিহত হলেও কমেনি মাদকের বিস্তার। উল্টো র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসার পর ঝিমিয়ে পড়ে অভিযান। এই সুযোগে মিয়ানমার থেকে ভয়ংকর মাদক ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথের (আইস) ঢল নামতে শুরু করে। এ অবস্থায় মাদক নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে ‘কম্প্রিহেন্সিভ অ্যাকশন প্ল্যান’ বা সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা হাতে নেয় ডিএনসি।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে মাদক নিয়ন্ত্রণে ‘কম্প্রিহেন্সিভ অ্যাকশন প্ল্যান’ নামে এ পরিকল্পনার খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। পরে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা বিভাগে কার্যক্রম উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয় কম্প্রিহেন্সিভ অ্যাকশন প্ল্যানের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App