×

সারাদেশ

নোয়াখালীতে সরকারি খাস জমি দখলের মহোৎসব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬:০১ পিএম

নোয়াখালীতে সরকারি খাস জমি দখলের মহোৎসব

ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালী জেলা শহরে গণপূর্ত বিভাগের খাস জমি চান্দিনা ভিটি হিসেবে বন্দোবস্ত নিয়ে দ্বিগুন জমি দখল করে বিল্ডিং কোড না মেনে যত্রতত্র গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন। এসব নিয়মবহির্ভূত ভবন তৈরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিলেও তা কার্যত কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। এখানেই শেষ নয়, বহুতল ভবন নির্মাণের পর এবার শহরের প্লাট রোড়ের পাশে গণপূর্ত বিভাগের সরকারি খাস জমি (খালি জায়গা) দখলে চলছে মহোৎসব।

বহুতল ভবন নির্মাণ ও খালি জায়গা দখলে খোদ এ বিভাগের কর্মকর্তাদের পরোক্ষভাবে ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ শহরবাসীর। তবে এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী সাদ মোহাম্মদ আন্দালিব বলেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে ১০০টি মামলা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও খালি জায়গা উদ্ধারে দখদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবেন তাঁরা।

জানা গেছে, শহর উন্নয়নে শহরের আবদুল মালেক উকিল প্রধান সড়কের আমানিয়া হোটেল থেকে বকশীমিজির পোল পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশে নির্দিষ্ট পরিমান কিছু খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয় কিছু ব্যবসায়ীকে। কিন্তু প্রায় দ্বিগুন জায়গা দখল করেছে প্রভাবশালীরা। এতে একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, অন্যদিকে শহরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠছে দোকানপাট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রধান সড়কের পাশে চান্দিনা ভিটি হিসেবে বন্দোবস্ত পাওয়া দখলদাররা তাদের বন্দোবস্তীয় জায়গার দ্বিগুন জায়গা দখল করে আইনের তোয়াক্কা না করেই বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। অন্যদিকে শহরের প্লাট রোড়ের সরকারি খালি জায়গায় কেউ তুলেছেন খুপড়ি ঘর, কেউ কাঠ কিংবা বাঁশের বেড়া দিয়ে দখল করেছেন জায়গা। গণপূর্তের এসব জায়গা দখলের কিছুদিন পরে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন।

নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতে গণপূর্ত বিভাগের জমি দখল নিয়ে এভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ১৯২১ সালের দিকে নোয়াখালী পৌরসভার জন্য ৩৩৯ একর জমি অধিগ্রহন করে সরকার। সেখান থেকে কিছু ব্যবসায়ীকে ১.৩৩ শতক করে লিজ দেওয়া হলেও প্রায় দ্বিগুন জায়গা দখল করে নেন শতাধিক ব্যক্তি।

শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, গণপূর্ত বিভাগ কোন প্রতিকার বা আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় শহরে সরকারি সব জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এতে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। শহরের রাস্তা-ঘাটও ঠিকমতো না হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। কোথাও কোথাও পানি নিষ্কাশনের জায়গায় ভবন নির্মাণ করায় পানির নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা তৈরী হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, আইনের তোয়াক্কা না করেই শহরের প্রধান সড়কের পাশে গণপূর্ত বিভাগের সরকারি জায়গা নামে মাত্র বন্দোবস্ত নিয়ে দ্বিগুণ জায়গা দখল করে বিল্ডিং কোড না মেনে বহুতল ভবন নির্মাণ করে ফেলেছেন দখলদাররা। এখন নজর পড়েছে খালি জায়গার দিকে। শহরে যেন সরকারি জায়গা দখলের উৎসব চলছে। প্রশাসনের নাকের ডোগায় রাজনৈতিক চত্রছায়ায় থেকে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এসব দখলযজ্ঞ হচ্ছে। যার কারণে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা নিরব ভূমিকায় রয়েছেন।

শহরের জেলা শিক্ষা অফিসের সামনের এক ব্যবসায়ী বলেন, এখানে ফোর লেন সড়কের ওপর একটি ব্রিজ হচ্ছে। কিন্তু ব্রিজের সামনে সরকারি খাল দখল করে শুধু মাত্র পাইপের মতো জায়গা রেখে ওপরে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এতে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা তৈরী হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মনিটরিং কমিটির কাজ নির্মাণাধীন বাড়িগুলো সশরীরে পরিদর্শন করে কেউ অপরাধ করলে কিংবা জনস্বার্থবিরোধী কোনো কাজে জড়িত থাকলে বাড়ির কিংবা ভবনের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু জেলায় এ পর্যন্ত কেউ তা দেখেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

জেলার সিনিয়র আইনজীবী জামাল উদ্দিন বলেন, দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তার কারণে সরকারের উন্নয়নকামী কিছু প্রতিষ্ঠানের মনিটরিং কমিটিগুলো হয় না। এ সুযোগে অবৈধ ভবন মালিকদের কাছ থেকে কর্মচারীরা সুবিধা নিচ্ছেন। এ রকম অবহেলা ও নিষ্ক্রিয়তায় বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা।

সরকারি এসব জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও সরকারি খাস জমি দখলমুক্ত করে সরকারের আওতায় নেওয়ার দাবি জানান সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা। জমি দখলের কথা স্বীকার করে একাধিক দখলদার বলেন, আসলে গণপূর্ত বিভাগ আমাদেরকে এখনো লিখিতভাবে কিংবা মুখিকভাবে বলেনি যে আমরা তাদের জমি দখল করেছি। আমরাও চাই সুন্দর-পরিকল্পিতভাবে একটা শহর হোক। এই শহরকে পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়তে আমাদেরকে স্থায়ী বন্ধোবস্ত দেওয়া হোক। তাহলে আমরাও পরিকল্পিত শহর গড়ার অংশীদার হব।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, গণপূর্ত বিভাগকে আমরা বলেছি সরকারি খাস জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে এবং খাস জমি দখলমুক্ত করতে আপনারা যদি ম্যাজিস্ট্রেট চান আমরা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করবো। ইতিমধ্যে অপারেশনে যাওয়ার জন্য আমরা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগও করেছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App