×

মুক্তচিন্তা

শীতার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৩২ এএম

শীতার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন

পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে আড়ষ্ট জনজীবন। কোনো কোনো জায়গায় সারাদিন রৌদ্রের দেখা মিলছেই না। দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। সেখানে তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৭-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মানুষজন চাইলেও ঘর থেকে বের হতে পারছে না, ফলে তাদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড শীত সইতে না পেরে ঘরহীন মানুষজন দিনে দুপুরে গাড়ির টায়ার এবং বিভিন্ন জ্বালানি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে দেশজুড়ে এখন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে, এটি আরো কিছুদিন থাকতে পারে। তারা আরো বলছে এ মাসে দেশজুড়ে এমন আরো ৩-৪টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এমন শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে দেশের বেশিরভাগ দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শীতে কষ্ট পাবে। একে তো এরা শৈত্যপ্রবাহের জন্য সারাদিন কোনো কাজ করতে পারবে না, ফলে পরিবারে দেখা দেবে খাদ্যের অভাব। অন্যদিকে অনেকের শীতবস্ত্র কেনারও টাকা থাকবে না, এতে এই শৈত্যপ্রবাহ মোকাবিলায় তারা একপ্রকার নিরুপায় হয়ে পড়বে। খাদ্য এবং শীতবস্ত্রের অভাবে যাতে দেশের কোনো দরিদ্র মানুষ কষ্ট না পায় আমাদের সবাইকে সেই দিকে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে দেশের কিছু জায়গা যেমন- কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, শ্রীমঙ্গল ইত্যাদি জায়গাকে আগেভাগেই টার্গেট করে রাখতে হবে, সেখানে খাদ্যসামগ্রীসহ শীতবস্ত্র পৌঁছে দিতে হবে। যেহেতু প্রায় প্রতি বছরই উক্ত জায়গাগুলোতে প্রচণ্ড শীত পড়ে এবং এবার আবহাওয়া অধিদপ্তর আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে, শৈত্যপ্রবাহ আসছে সেহেতু আর বিলম্ব না করে উত্তরবঙ্গের শীতল জায়গাগুলোতে এখনই সাহায্য পাঠানো যুক্তিযুক্ত হবে। সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদেরও শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কারণ এলাকাভিত্তিক বিত্তবানরা যদি শীতার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে তাহলে এই শীতে কোনো দরিদ্র মানুষই কষ্ট পাবে না। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে- প্রচণ্ড শীতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ছোট্ট শিশু এবং সত্তরোর্ধ্ব মানুষের। এদের সেবার ক্ষেত্রে যাতে কোনো ত্রæটি না হয় এ বিষয়ে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এদের শীত নিবারণের জন্য যে কোনো মূল্যে শীতবস্ত্র কিনে দিতে হবে। কারো কেনার সামর্থ্য না থাকলে তা অবশ্য পড়শিদের জানাতে হবে। এই মুহূর্তে সব জনপ্রতিনিধির উচিত বাইরে বের হয়ে ঘুরে ঘুরে দেখা, মানুষ কেমন জীবনযাপন করছে। যদি দেখা যায় কোনো শিশু এবং বৃৃদ্ধ শীতে খুবই কষ্ট পাচ্ছে তাহলে জনপ্রতিনিধিরাই তাদের সাহায্য করতে পারবে। যেহেতু দেশজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ চলছে এমতাবস্থায় দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো তাদের রোজগারের জন্য বের হতে পারছে না- এদের বিষয়ে আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে। এরা এই শৈত্যপ্রবাহে অন্ততপক্ষে দুবেলা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এদের চাইলে সরকার বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র মূল্যে খাদ্যসুবিধা দিতে পারে, তাহলে হয়তো তারা এই শৈত্যপ্রবাহে পরিবার নিয়ে দিন কাটাতে পারবে। সরকারের পাশাপাশি দেশের বিত্তবান ও বিভিন্ন সংগঠনগুলো এদের সাহায্যে এগিয়ে এলে এই শৈত্যপ্রবাহে তাদের তেমন সমস্যা হবে না। এই শৈত্যপ্রবাহে ভাসমান মানুষ এবং পথশিশুদের ব্যাপক কষ্ট, কারণ এদের থাকার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। এরা কখনো রেলস্টেশনে কখনোবা কোনো অট্টালিকার বারান্দায় আবার কখনোবা রাস্তার পাশে শুয়ে থাকে। এদের প্রতি দ্রুত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলে বাঁচাই অসম্ভব হয়ে যাবে। সিটি করপোরেশন চাইলে এই শৈত্যপ্রবাহে শহরের ভাসমান মানুষগুলোকে শৈত্যপ্রবাহ চলাকালীন পর্যন্ত কোনো একটা নির্দিষ্ট জায়গায় তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারে। পাশাপাশি তাদের দৈনিক আহারের ব্যবস্থা করে দিয়ে তাদের জীবন বাঁচাতে পারে। এই মুহূর্তে দরিদ্র মানুষগুলোর খুববেশি প্রয়োজন শীতবস্ত্র, তাই আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের আশপাশে থাকা দরিদ্র মানুষদের কাছে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিই।

রতন কুমার তুরী : শিক্ষক ও লেখক, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App