×

অর্থনীতি

বিশেষ ছাড়ে এমএফএস ব্যবসা করতে চায় নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৩৩ পিএম

বিশেষ ছাড়ে এমএফএস ব্যবসা করতে চায় নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি

ফাইল ছবি

  • আইন পরিপন্থি হওয়ায় সরকারের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত
  • শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ঋণের মেয়াদ ছয় মাস বৃদ্ধি

শর্তসাপেক্ষে লাইসেন্সপ্রাপ্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি (প্রস্তাবিত) মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবসা করতে আইনগত বিশেষ ছাড় চেয়ে আবেদন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। অনুমোদন পেলে ডাক বিভাগের সাথে চুক্তিভিত্তিক পরিচালিত মোবাইল ব্যাংকিং ‘নগদ’ নিজেরাই পরিচালনা করতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৪২৬তম সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের প্রথম বোর্ড সভায় বিষয়টি সরকারের কছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘যেহেতু আইনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমএফএস ব্যবসার সুযোগ নেই তাই লিজিং কোম্পানিটি শর্ত শিথিলের জন্য আবেদন করেছে। বিষয়টি বোর্ডে উত্থাপিত হয়েছে। যেহেতু আইনগত ছাড় দেয়ার এখতিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেই, তাই সরকারের কাছে বিষয়টি সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হবে। সরকার পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত জানাবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আইন অনুযায়ী কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমএফএস ব্যবসা করতে পারে না। কিন্তু নগদ প্রথমত লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসায় নেমে পরে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তির ফলে লাইসেন্সের জন্য আদেন করে। কিন্তু যথাযথ শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হওয়ায় দীর্ঘদিন লাইসেন্স পায়নি এবং নানা বিতর্কের মুখে ডাক বিভাগকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় এফএফএস সেবা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। পরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করার আবেদনের প্রেক্ষিতে নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি নামে আর্থি প্রতিষ্ঠান গঠনের লাইসেন্স দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী কতিপয় শর্তের প্রেক্ষিতে নিজ নামে এমএফএস সেবা পরিচালনায় অযোগ্য বিবেচিত হয় প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানটি। তাই তারা আইনগত ছাড় পেতে আবেদন করেছে, যা এখন সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টম্যান্টের লাইসেন্স ছাড়াই ডাক বিভাগের ব্রান্ড ব্যবহার করে ব্যবসা শুরু করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘নগদ’। স্বল্প সময়ে তারা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তত্ত্বাবধানের বাইরে থেকে যায় এমএফএস প্রতিষ্ঠানটি। ফলস্বরুপ সন্দেহজনক লেনদেন, বিধিবহির্ভুত ব্যাংক লোন ও মুলধনের অতিরিক্ত ই-মানি তৈরীরমতো বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ডাক বিভাগের মালিকানায় নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু বিপুল লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানটির সাথে মালিকানা চুক্তি করতে অপারগতা প্রকাশ করে রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানটি। ফলে নগদের ব্যবসা হুমকির সম্মুখীন হয়।

আইন অনুয়ায়ী এমএফএস সেবা পরিচালনার জন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান হলো ব্যাংক। তবে কোন ব্যাংকের সাথে না গিয়ে নিজেরই আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে নগদ কর্তৃপক্ষ। নাম প্রস্তাব করা হয় ‘নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি’। শর্ত সাপেক্ষে লাইসেন্স পেলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনে অনুমোদন না থাকায় এমএফএস ব্যবসা করার সুযোগ হারায় প্রতিষ্ঠানটি। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আইনগত ছাড় পেতে আবেদন করে। এখতিয়ার বহির্ভুত হওয়ায় আবেদনটি সরকারের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ঋণের মেয়াদ আরও দুই প্রান্তিক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে বোর্ড সভা। ফলে চরম আর্থিক সংকটে থাকা দেশটিকে দেয়া ২০ কোটি ডলার ফেরত পেতে অপেক্ষা বাড়লো দুই মেয়াদে আরও ছয় মাস। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন আর্থিক সংকট কাটিয়ে বাংলাদেশকে ঋণ ফেরত দিতে শ্রীলঙ্কাকে অন্তত ১৫ বছর সময় দিতে হবে। কারণ আন্তর্জাতিক ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত বড় দাতাকে আগে ঋণ পরিশোধ করার নিয়ম রয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেড় বছর আগে নেওয়া ২০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধের মত অবস্থায় নেই এখন মারাত্মক আর্থিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত বন্ধুপ্রতীম দেশ শ্রীলঙ্কা। এ কারণে আগের কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর এবারও নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে নেওয়া এই ঋণ পরিশোধে প্রথমে তিন মাস সময় বাড়ানোর অনুরোধ করে। এরপর দেশটির আর্থিক অবস্থা ক্রমে আরও নাজুক হলে তাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ধাপে ধাপে সময় বাড়ানো হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের শরণাপন্ন হয়। ২০ কোটি ডলার ধার দিয়ে সে সময় বন্ধুপ্রতীম দেশটির পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক দেশটিকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার অনুমোদন দিলেও পরে কয়েক কিস্তিতে ২০ কোটি ডলার দেয়। ‘কারেন্সি সোয়াপ’ ব্যবস্থায় নেওয়া ওই ঋণ পরিশোধের কথা ছিল তিন মাসের মধ্যে। লাইবর রেটের সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে শ্রীলঙ্কা তা দিতে পারেনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App