×

জাতীয়

একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী পায়নি ২০০ প্রতিষ্ঠান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:০৫ এএম

একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী পায়নি ২০০ প্রতিষ্ঠান

ফাইল ছবি

উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একাদশ ও সমমান আলিম শ্রেণিতে ভর্তির প্রথম পর্যায়ে সারাদেশে সরকার অনুমোদিত দুশটি কলেজ ও মাদ্রাসা কোনো শিক্ষার্থী পায়নি। এসব প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ভর্তির জন্য কিছু শিক্ষার্থী আবেদন করলেও ভর্তির ‘নিশ্চয়ন’ করেনি। আর চারটি কলেজে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদনই করেনি। আরো প্রায় পাঁচশ’ কলেজ ও মাদ্রাসায় ৫০ জনের কম শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেছে। শিক্ষার্থীদের কাছে ‘আকর্ষণ’ হারানো এসব কলেজের এখন টিকে থাকাই ‘চ্যালেঞ্জ’ হবে বলে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, শিক্ষা বোর্ডের অনুরোধে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অনলাইনে একাদশ শ্রেণির ভর্তি প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন করে দেয়।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, শিক্ষক স্বল্পতা, শ্রেণিকক্ষ স্বল্পতা, ছাত্র রাজনীতি প্রবণতা এবং পরিচালনা পর্ষদের সমস্যার কারণে এ সব কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায়নি। সরকারের উচিত এগুলো দ্রুত খতিয়ে দেখা।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এরকম পরিস্থিতিতে আজ দ্বিতীয় পর্যায়ের ভর্তির আবেদনের ফল প্রকাশ হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নতুন করে দুই লাখ ৮২ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করেছে বলে বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ভর্তির আবেদন করে। এতে একজন শিক্ষার্থী পছন্দের ১০টি কলেজে আবেদন করতে পারে। সেখান থেকে যে কোনো একটি কলেজে ভর্তির জন্য অনলাইনে নিশ্চয়ন করতে হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাহারি নাম দিয়ে নতুন গজিয়ে ওঠা কোচিং সেন্টার সদৃশ কলেজগুলোই ভর্তিতে শিক্ষার্থী পায়নি। শিক্ষার্থী না পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ ডিসেম্বর একাদশ শ্রেণি ও সমস্তরে অনলাইনে প্রথম পর্যায়ের ভর্তির আবেদনের শেষ সময় ছিল। ওই সময়ে ভর্তির জন্য অনলাইনে মোট ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৪৬ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। ২০২২ সালের এসএসসি ও সমমান

পরীক্ষায় মোট ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। ২০২১ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছিল। এ হিসেবে এবার এমনিতেই কম উত্তীর্ণ হয়েছে তিন লাখের বেশি শিক্ষার্থী।

২০২২ সালের এসএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রথম পর্যায়ে তিন লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেনি। এবার সারাদেশের কলেজ ও আলিম মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে মোট ভর্তিযোগ্য আসনের সংখ্যা ২৫ লাখ ৫৪ হাজারের মতো। সারাদেশে ৯ হাজার ১৮১টি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক ও সমস্তরের মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয়। এর মধ্যে দুশ প্রতিষ্ঠানে কিছু শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করলেও তারা ভর্তির নিশ্চয়ন করেনি। আর চারটিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেনি। তবে শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা এখনই শিক্ষার্থী না পাওয়া কলেজগুলোর নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, বুয়েট থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে ২০০টি কলেজ ও মাদ্রাসায় ন্যূনতম একজন শিক্ষার্থীও ভর্তির নিশ্চয়ন করেনি। এর সবকটি কলেজই বোর্ডের অনুমোদিত। আরও অসংখ্য কলেজ ও মাদ্রাসায় একজন-দু’জন থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। যেসব কলেজ ও আলিম মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির নিশ্চয়ন করেনি সেসব প্রতিষ্ঠানের অস্থিত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের তদবিরের কারণেই ওইসব প্রতিষ্ঠান পাঠদানের অনুমতি পেয়েছিল বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ওই সব কলেজ ও মাদ্রাসার বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, একাদশ শ্রেণিতে পাঠদানের অনুমোদন পেতে প্রতি বিভাগে ন্যূনতম ৫০ জন করে শিক্ষার্থী থাকতে হয়। কাম্য শিক্ষার্থী না থাকলে পাঠদানের অনুমতি বাতিল হতে পারে। ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ হলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান।

বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ব্যবসায় শিক্ষা, মানবিক ও বিজ্ঞান বিভাগে পাঠদান হয়। এর মধ্যে বাংলা ও ইংরেজি বিষয় আবশ্যিক। এছাড়া প্রতিটি বিভাগে অন্তত তিনটি আবশ্যিক বিষয় নিতে হয়। এ হিসেবে প্রতি বিষয়ে ন্যূনতম একজন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও অধ্যক্ষসহ একটি কলেজে ১২ জন শিক্ষক থাকে। এছাড়া কর্মচারী, লাইব্রেরিয়ান, পিয়নসহ সব মিলিয়ে অন্তত ২০ জন জনবল থাকে। যেসব কলেজে কেউ ভর্তি হতে আবেদনই করেনি সেগুলো কীভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বেতনভাতা দেবে, টিকে থাকার ব্যয় নির্বাহ করবে সেটি নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা।

ভর্তির আবেদন না হওয়া কলেজের বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেছেন, কলেজগুলো যদি এমপিওভুক্ত হয় তাহলে মাউশি সেগুলোর এমপিও স্থগিত বা বাতিল করতে পারে। এমপিওভুক্তি না হলে শিক্ষা বোর্ড সেসব প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি বাতিল করতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App