×

জাতীয়

চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, কোথায় কত দুর্নীতি হয়েছে স্পষ্ট করতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৯ পিএম

চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, কোথায় কত দুর্নীতি হয়েছে স্পষ্ট করতে হবে

বুধবার সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও/ফোকাস বাংলা

‘সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি ও আর্থিক খাতে অনিয়মের অভিযোগ তোলায় মোকাব্বির খানকে চ্যালেঞ্চ ছুড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোথায়, কবে, কত টাকা দুর্নীতি হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে। আমি তার উত্তর দেবো।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর কালে মোকাব্বির খান সরকারের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী এমন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তাকে।

মোকাব্বির খান তার প্রশ্নে বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে আজকে যে সঙ্কট চলছে তার জন্য শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ি করার কোন কারণ নেই। এখানে আমাদের অভ্যান্তরীণ অনেক বিষয় আছে। তিনি বলেন, আর্থিক খাতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা, মেগা প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে ব্যাপক লুটপাট, জালানী খাতে কুইক রেণ্টাল ইনডেমনিটি এগুলো অনেক বিষয়ই দায়ি। ফলাফল -ডলার সঙ্কট, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা আজ দুর্বিষহ। গণফোরামের এই এমপি বলেন, গত দুই দিন আগে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বিদ্যুতের দাম আবারো বাড়ানো হবে, মাসে মাসে সমন্বয় হয়ে, তিনি বাড়ানোর কথা বলেন না, বলেন সমন্বয় হবে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ খুবই আতঙ্কিত। মোকাব্বির খান তার প্রশ্নে আরো বলেন, গত বছরের ৫ আগষ্ট জ্বালানী তেলের দাম সমন্বয় করা হয় এবং ২৯ আগস্ট লিটার প্রতি ৫ টাকা কমানো হয়। তিনি বলেন, বাড়ানোর তুলনায় কমানোর অঙ্কটা অনেক কম সেজন্য প্রধান মন্ত্রী দামটা এড়িয়ে গেলেন। তিনি চলতি বছর জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে কিনা তা জানতে চান। এছাড়া, তিনি ইনডেমনিটির সুযোগ নিয়ে কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে তার উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিউত্তরে বলেন, মনে হচ্ছে সংসদ সদস্য বিরোধী দলের শক্তিশালী হবার চেষ্টা করছেন। তবে তিনি যেসব অভিযোগ এনেছেন তা একেবারেই অমুলক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি মেগা প্রকল্পের কথা বলেছেন, এর সুবিধাভোগী কারা, এদেশের সাধারণ মানুষ। মেগা প্রকল্প তো অন্য কোন সরকার করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার করতে সক্ষম হয়েছে। পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। মেট্রোরেলও সাধারণ মানুষ ভোগ করছে। তিনি বলেন,সংসদ সদস্য অনেক বেশী সম্পদশালী, উনার হয়তো এসব লাগে না। এসময় প্রধানমন্ত্রী মোকাব্বির খানকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, মাননীয় স্পিকার আপনার মাধ্যমে আমি ওনাকে চ্যালেঞ্চ দিচ্ছি: কোথায় কবে কত টাকা দুর্নীতি হয়েছে তা সুনিদ্দিষ্ঠ ভাবে বলতে হবে। আমি তার উত্তর দেব। আমি ষ্পষ্ট বলতে চাই ওয়াল্ড ব্যাংক তো পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। তারা তা প্রমান করতে পারেনি। ক্যানাডার ফেডারেল কোর্টে যে মামলা হয় তার রায়েই বলা হয়েছিল যেসব অভিযোগ করা হয়েছিল তার সবটাই মিথ্যা।

মোকাব্বির খানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্পিকার আমি জানি মাননীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক হলেও ওনার একটা সেকেণ্ড হোম আছে। সেই সেকেণ্ড হোম যেখানে অর্থাৎ ইংলাণ্ডে বিদ্যুতের দাম দেড় শ’ শতাংশ বেড়েছে, সেখানে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখানে ভোগপণ্য খাদ্যদ্রব্যসহ সব জিনিষের দাম ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশে এখনো সে অবস্থার সৃষ্টি হয়নি।

ইক রেন্টালের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হা কুইক রেণ্টালের প্রয়োজন ছিল বলেই আমরা এনেছিলাম, তার জন্য আমরা মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছিলাম। আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম তিন হাজার ২০০ মেগাওয়ার্ট । যখন আমি ‘৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় আসি তখন আমরা ১৬০০ মেগাওয়াট থেকে চার হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করি। বিএনপি সরকারের আমলে মানুষ বিদ্যুৎ পেত না, শুধু খাম্বা পোতা ছিল, বিদ্যুৎ উদপাদন হ্রাস করা হয়। বিদ্যুৎ জন্য ছিল হাহাকার, কোন কারখানা চলতে পারতো না, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের স্বল্পতা ছিল। তার পরে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন কি কি দ্রুত উন্নতি করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করি, কুইক রেণ্টাল তখন প্রয়োজন হয়। আমরা বিএনপির রেখে যাওয়া ৩২০০ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ থেকে ২৫ হাজার ৮০০ মেগাওয়ার্টে উন্নীত করেছি। এখন প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ দিদচ্ছি। কুইক রেন্টালে যদি দুর্নীতি হতো তাহলে বিদ্যুৎ তো এত দিনে পাওয়ার কথা ছিল। বিএনপির আমলে এই বিদ্যুতের ওপর দুর্নীতি করেছিল বলেই বিশ্বব্যাংক টাকা দেয়া বন্ধ করেছিল। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে দুর্নীতির কারণে অর্থ বন্ধ হয়। যেখানে বড় বড় মহারথীরাই দুর্নীতির খোঁজ পায়নি, সেখানে আমাদের কিছু লোক ভাঙা রেকর্ডের মত দুর্নীতির কথা, কুইক রেন্টাল, কুইক রেন্টাল করেই বাজিয়েই যাচ্ছে। কিছুদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ একটু কমিয়ে দেয়া হলেই চারিদিকে হাহাকার উঠেছিল। সেজন্যই তো কুইক রেন্টালের প্রয়োজন। যারা এসব অভিযোগ করছে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগটা যদি বন্ধ করে দিই, তা হলে দেখি কি হয়!

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App