×

জাতীয়

ভোটের রাজনীতিতে পাঁচ চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৮ এএম

ভোটের রাজনীতিতে পাঁচ চ্যালেঞ্জ

ফাইল ছবি

সুষ্ঠু নির্বাচন ভোটার উপস্থিতি স্থিতিশীলতা সাম্প্রদায়িকতা কূটনীতিকদের তৎপরতা

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি প্রায় এক বছর। এর মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর ভোটের মাঠের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে দেশকে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরই বর্তায়। সদ্যবিদায়ী ২০২২ সালে রাজপথ ছিল উত্তাল। বিশেষ করে বছরের শেষ প্রান্তে এসে পরিস্থিতি টালমাটাল হয়ে ওঠে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছর রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় থাকবে জাতীয় নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম পরিচালিত হবে রাজনীতিকে কেন্দ্র করেই। এ বছর রাজনীতির ক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচন, ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি বাড়ানো, জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতা, কূটনৈতিক তৎপরতা এবং রাজনৈতিক ডামাঢোলে জনজীবন স্বাভাবিক রাখা- এই পাঁচ চ্যালেঞ্জকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে ২০২২ সালে সারাদেশে গণসমাবেশ করে রাজনীতির মাঠে সরব ছিল বিএনপি। ডিসেম্বর মাসে ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা তুলে ধরে দলটি। বছর শেষে রাজপথে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনেরও সূচনা করে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলটি। বিএনপির ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশকে ঘিরে রাজনীতিতে ব্যাপক উত্তাপ সৃষ্টি হয়। বিএনপিকে নয়াপল্টন এলাকায় সমাবেশ করতে না দেয়ার ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থানে যায়। পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। ওই ঘটনায় বিএনপির মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

অন্যদিকে বিএনপির রাজনীতি মোকাবিলায় সারাদেশে ব্যাপক শোডাউন করে আওয়ামী লীগও। সারাদেশে দলের সাংগঠিনক শক্তি বাড়াতে তৎপর ছিল ক্ষমতাসীনরা। দেশজুড়ে বড় বড় সভা-সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে শক্ত অবস্থান এবং জনসমর্থনের জানান দেয় আওয়ামী লীগও। বছর শেষে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার শপথে কেন্দ্রীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হন। কেন্দ্রীয় সম্মেলনে চাঙ্গা হয় তৃণমূলও।

বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন নিজেদের অবস্থান পুনরায় পাকাপোক্ত করতে এবং বিএনপি ১৫ বছরের খরা কাটাতে মরিয়া। চলতি বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কী হতে পারে- এই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনীতিতে ভালো মানুষেরা নেই, আমরা রাজনীতিকে আকর্ষণীয় করতে পারিনি। ছাত্র রাজনীতির সুনামের ধারা হারিয়ে গেছে। খারাপ লোকদের হাতে রাজনীতি থাকলে দেশ খারাপ হয়ে যাবে। ভালো, সৎ ও মেধাবীদের রাজনীতিতে আনতে হবে, না হয় রাজনীতি চরিত্রহীন হয়ে যাবে।

অন্যদিকে রাজনীতির ঘুরপাকের মধ্যে বিদায়ী বছরে সক্রিয় ছিল কূটনৈতিক তৎপরতা। একটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্ব দিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছেন কূটনীতিকরা। তাদের এসব বক্তৃতা-বিবৃতি অনেকটা অস্বস্তির কারণ হয়েছে ক্ষমতাসীনদের জন্য। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে বিদেশি কূটনীতিকদের। চলতি বছরে কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বাড়বে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া পাল্টাপাল্টি আন্দোলন ও রাজনৈতিক কর্মসূচির বিপরীতে জনজীবন স্বাভাবিক রাখাও রাজনীতির জন্য নতুন বছরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

এ ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ ভোরের কাগজকে বলেন, ভোটকেন্দ্রে জনগণের উপস্থিতি নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ আমি মনে করি, আগামী নির্বাচন ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো হবে না। এবারের নির্বাচন অনেক বেশি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হবে। এছাড়া দলগুলোর উন্নয়ন দর্শন বজায় রেখে মানুষের কাছে যাওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দর্শন রয়েছে। টানা তিন বছরের সরকারের ধারাবাহিকতায় একের পর এক উন্নয়ন-সাফল্য তাদের। কিন্তু বিএনপির অপরিপক্ব রাজনীতি চোখে পড়ার মতো। সংসদ থেকে ৭ জনের পদত্যাগ অদূরদর্শী রাজনীতি।

জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অজয় দাশগুপ্ত ভোরের কাগজকে বলেন, এ বছর রাজনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ নির্বাচন। প্রতিটি বড় দলেরই লক্ষ্য থাকে ক্ষমতায় যাওয়া। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি-পাল্টা কর্মসূচিতে বছরজুড়ে উত্তপ্ত থাকবে রাজনৈতিক মাঠ। এর মধ্যেই সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন ও পরিবেশ তৈরি করা বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এরা বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। চলতি নির্বাচনী বছরে জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতা মোকাবিলা করে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখাও রাজনীতির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App