×

সম্পাদকীয়

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হই

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৪৯ এএম

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হই
আজ বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বাধীন দেশে ফিরেছিলেন। বাঙালি জাতির মহান মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ৯ মাসের সশস্ত্র ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হলেও প্রকৃতপক্ষে তাঁর দেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়েই বাঙালির বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তাকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করা হয়। বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে মহাবিজয়ের ফলে বাংলাদেশ যখন আনন্দ-উল্লাসে উত্তাল, বঙ্গবন্ধু তখনো পাকিস্তানি কারাগারে বন্দি। গোটা জাতি তখন তাঁর জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে উৎকণ্ঠিত। বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে থাকার পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ভোরে বঙ্গবন্ধু ছাড়া পান। এই দিন বঙ্গবন্ধুকে বিমানে তুলে দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি পৌঁছান লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে। ব্রিটেনের বিমানবাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন বঙ্গবন্ধু। ১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সে দেশের মন্ত্রিসভা, প্রধান নেতারা, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন। ১০ জানুয়ারি সকাল থেকেই বাংলাদেশের মানুষ ঢাকা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিল। দুপুরে বাংলার মানুষ আনন্দাশ্রæ আর ফুলেল ভালোবাসায় বরণ করে নিলেন তাদের প্রাণের নেতাকে। ৩১ বার তোপধ্বনি হয় তেজগাঁও বিমানবন্দরে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা স্বাগত জানান বঙ্গবন্ধুকে। রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এভাবেই লেখা হয়- স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রæধারা নামল তাঁর দুচোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রæতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস। ১০ জানুয়ারি এলেই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথা বাঙালির মনে দোলা দেয়। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আক্ষরিক অর্থেই শুধু প্রত্যাবর্তন ছিল না- সেটি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তিরও অঙ্গীকার ছিল। এ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে হবে। জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৫১তম বার্ষিকীতে সে দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকার অঙ্গীকারই করতে হবে আমাদের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App