×

সারাদেশ

প্রস্তুত ইজতেমা ময়দান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৫ পিএম

প্রস্তুত ইজতেমা ময়দান

ছবি: সংগৃহীত

৬৪ জেলার মুসল্লি ৯০ খেত্তায়

ঢাকার অদূরে টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশাল সবুজ চত্বর এখন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের বরণের অপেক্ষায়। আগামী শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) এখানে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। ইতোমেধ্যেই এর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

ইজতেমার কর্মসূচিতে রয়েছে আম ও খাস বয়ান, ছয় উছুলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, তাশকিল, তালিম, বিষয়ভিত্তিক আলোচনা। এছাড়া রয়েছে পেশাভিত্তিক আলোচনা, নতুন জামাত তৈরি, চিল্লায় নাম লেখানো ও যৌতুকবিহীন বিয়ের মতো নানা আনুষ্ঠানিকতা।

আগামীকাল বুধবার (১০ জানুয়ারি) থেকে দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠে আসতে শুরু করবেন। ১৬০ একর এলাকাজুড়ে নির্মিত চটের প্যান্ডেল ৯০টি খেত্তায় ভাগ করা হয়েছে। সেখানে ৬৪ জেলার মুসল্লিদের জন্য স্থান নির্ধারণ করে খুঁটি নম্বর লাগানো হয়েছে। মাঠের উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় পঁচিশ হাজার বিদেশি মেহমানের জন্য পাঁচটি আন্তর্জাতিক নিবাস তৈরি করা হয়েছে। মাঠের প্রবেশপথগুলোতে ইতোমধ্যেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর নজরদারি শুরু হয়েছে।

তাবলীগ মারকাজের নিয়ম অনুযায়ী, সভাপতি ও প্রধান অতিথিবিহীন এই মহাসমাবেশ কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ছাড়াই শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে। তিন দিনের আয়োজনের প্রথম পর্ব শুক্রবার শুরু হলেও আগের দিন বৃহস্পতিবার বাদ জোহর থেকে আগতদের ইবাদতে শামিল হতে খাস বয়ান চলবে।

এই দফার ইজতেমার আয়োজক মাওলানা যোবায়েরের অনুসারীরা। অন্যদিকে, ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে মাওলানা সাদ কান্ধালবীর অনুসারীদের তিন দিনব্যাপী দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা। উভয় পর্বে তাবলিগ মারকাজের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন দেশ থেকে সাড়ে তিন সহস্রাধিক বিদেশি অতিথি দেশে পৌঁছেছেন। তারা রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর আশপাশের মসজিদগুলোতে দাওয়াতি কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

তাবলিগের দুই পক্ষের সঙ্গে প্রশাসনের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরস্পরবিরোধী দুই পক্ষ একসঙ্গে ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করবে না। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার পর ১৬ জানুয়ারি যোবায়েরপন্থীরা মাঠ ছাড়বেন। মুসল্লিশূন্য চারদিন ময়দানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলবে। ১৯ জানুয়ারি বিকাল থেকে সাদ অনুসারীরা ইজতেমা মাঠে আসতে শুরু করবেন। ২৩ জানুয়ারি থেকে সাধারণ প্যান্ডেল ও আন্তর্জাতিক নিবাস খুলে ফেলার কাজ শুরু করবে যোবায়ের অনুসারীরা।

তাবলিগ জামাতের বিবদমান দুই গ্রুপের মারমূখী অবস্থানসহ নানা দিক বিবেচনায় এবার আগের বছরগুলোর চেয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

প্রথম পর্বে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের নিজ নিজ খেত্তায় অবস্থানের জন্য ইজতেমার প্রকৌশল বিভাগ একটি দিক নির্দেশনা দিয়েছে।

টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম জানান, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় জোরালো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুরো টঙ্গীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সাত হাজার পুলিশ সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া র‌্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আনসার সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন। টঙ্গীর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের অস্থায়ী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছয়দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

ইজতেমা ময়দান ও সংলগ্ন এলাকাগুলো কড়া নজরদারিতে রাখতে বিভিন্ন স্থানে ১৪টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। ইজতেমা চলাকালে প্রতিটি খেত্তায় সাদা পোশাকে নিরাপত্তা কর্মীরা অবস্থান নেবেন। মহাসড়ক, আবাসিক এলাকা ও শিল্পাঞ্চলের অলিগলিতে পুলিশি টহল থাকবে। তুরাগ নদীতে নৌ টহল ও আকাশে হেলিকপ্টার টহল চলবে। পকেটমার ও প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে যাতে কোনো মুসল্লি ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেজন্য ভ্রাম্যমাণ পুলিশি টহল থাকবে।

বিদেশি অতিথিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা

বিদেশি অতিথিদের প্রায় সপ্তাহখানেক ময়দানে অবস্থান করতে হয়। এ সময় তাদের থাকা-খাওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। নিজ দেশের আবহাওয়া ও রুচির প্রতি লক্ষ্য রেখে তাদের আবাসস্থল ও অজু, গোসলের জায়গা প্রস্তুত করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের অতিথিদের জন্য তাদের নিজ নিজ দেশের প্রচলিত খাবার, পানীয়সহ প্রয়োজনীয় আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন আগতদের সার্বক্ষণিক বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহে ১২টি গভীর নলকূপ চালু করেছে। পুরো প্যান্ডেল মশকমুক্ত রাখা ও অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তুরাগ নদীর দুই পাড়ে মুসল্লিদের সহজ যাতায়াতের জন্য সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ নদীর ওপর চারটি ভাসমান সেতু তৈরি করেছে।

চিকিৎসা সেবা

টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্তাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ইজতেমায় আগত মেহমানদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা দিতে বিশেষ ব্যবস্থা হাতে নেয়া হয়েছে। এই জমায়েত চলাকালে হাসপাতালে অতিরিক্ত অ্যাজমা, হৃদরোগ, বার্ন, হাড়ভাঙ্গা, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের বিশেষ ইউনিট চালু করা হয়েছে। ছয়টি চিকিৎসক টিম গঠন করা হয়েছে। জরুরি রোগী স্থানান্তরের জন্য ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হবে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি অর্ধশতাধিক বেসরকারি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ সরবরাহ করবে।

কোন জেলার মুসল্লি কোন খেত্তায়:

গাজীপুর (খেত্তা-১), টঙ্গী (খেত্তা-২, ৩, ৪), ঢাকা (খেত্তা-৫ থেকে ১৮, ২১, ২২, ২৫, ২৭, ২৮, ৩০)। রাজশাহী (খেত্তা-১৯), চাঁপাইনবাবগঞ্জ (২০), নাটোর (২৩), নওগাঁ (২৪), নড়াইল (২৬), সিরাজগঞ্জ (২৯), টাঙ্গাইল (৩১)।

রংপুর (৩২), গাইবান্ধা (৩৩), লালমরিহাট (৩৪), মুন্সিগঞ্জ (৩৫), যশোর (৩৬), চিলমারি (৩৭)। বগুড়া (৩৮), জয়পুরহাট (৩৯), নারায়ণগঞ্জ (৪০), ফরিদপুর (৪১), ভোলা (৪২), নরসিংদী (৪৩), সাতক্ষীরা (৪৪)। বাগেরহাট (৪৫), কুষ্টিয়া (৪৬), মেহেরপুর (৪৭), চুয়াডাঙ্গা (৪৮)। ময়মনসিংহ (৪৯, ৫১) শেরপুর(৫০), জামালপুর(৫২), গোপালগঞ্জ (৫৩), কিশোরগঞ্জ (৫৪), নেত্রকোনা (৫৫)। ঝালকাঠি (৫৬), বান্দরবান (৫৭), বরিশাল (৫৮), পিরোজপুর (৫৯), হবিগঞ্জ (৬০), কক্সবাজার (৬১)। সিলেট (৬২), সুনামগঞ্জ (৬৩), ফেনী (৬৪), নোয়াখালী (৬৫), লক্ষীপুর (৬৬), চাদঁপুর(৬৭), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (৬৮), খুলনা (৬৯)। পটুয়াখালী (৭০), বরগুনা(৭১), চট্টগ্রাম (৭৪), কুমিল্লা (৭৫), মৌলভীবাজার (৭৬), রাজবাড়ী (৭৭), মাদারীপুর (৭৮), শরিয়তপুর (৭৯), মানিকগঞ্জ (৮০)। রাঙ্গামাটি (৮১), খাগড়াছড়ি (৮২), দিনাজপুর (৮৩), পাবনা (৮৪), ঠাকুরগাঁও (৮৫)। ঝিনাইদহ (৮৭), মাগুরা (৮৮), কুড়িগ্রাম (৮৯) ও পঞ্চগড়(৯০)।

এছাড়া, ১১ ও ১২ খেত্তার অংশিক এবং ৩২, ৩৭, ৭২, ৭৩ ও ৮৬ নম্বর খেত্তা সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App