×

জাতীয়

জাতির পিতা দেশে ফেরায় পূর্ণতা পায় বাঙালির বিজয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৯ এএম

জাতির পিতা দেশে ফেরায় পূর্ণতা পায় বাঙালির বিজয়

ফাইল ছবি

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। পাকিস্তানি কারাগারের অর্গল ভেঙে সদ্য স্বাধীন বাংলার মাটিতে পা রাখেন স্বাধীন দেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর আগমনে পূর্ণতা পায় বাঙালির বিজয় অর্জন। ক্যালেন্ডারের পাতা ঘুরে আজ সেই ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। ঢাকাসহ সারাদেশে নানা কর্মসূচি নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়।

ফিরে দেখা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : জাতির পিতা পাকিস্তানের কারাগার থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি। ওইদিন তাকে লন্ডনগামী বিমানে তুলে দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি পৌঁছান হিথ্রো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে সরাসরি ও টেলিফোনে কথা বলেন বঙ্গবন্ধু। পরের দিন ৯ জানুয়ারি ব্রিটেনের বিমানবাহিনীর একটি বিমানে দেশের পথে যাত্রা করেন। ১০ জানুয়ারি সকালে তিনি নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধান নেতারা, তিন বাহিনীর প্রধান ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন দেশের জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতারা ও জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে তিনি আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বেলা ১টা ৪১ মিনিটে ঢাকা এসে পৌঁছান বঙ্গবন্ধু। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। পরের দিন বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে লেখা হয়- ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামল তার দুচোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।

জননন্দিত জাতির পিতা শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তার ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়। আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের যুবক যারা আছে তারা চাকরি না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্রসমাজ তোমাদের মোবারকবাদ জানাই তোমরা গেরিলা হয়েছ, তোমরা রক্ত দিয়েছ, রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় নাই।

বঙ্গবন্ধু বলেন, একটা কথা- আজ থেকে বাংলায় যেন আর চুরি-ডাকাতি না হয়। বাংলায় যেন আর লুটতরাজ না হয়। বাংলায় যারা অন্য লোক আছে অন্য দেশের লোক, পশ্চিম পাকিস্তানের লোক বাংলায় কথা বলে না, তাদের বলছি তোমরা বাঙালি হয়ে যাও। আর আমি আমার ভাইদের বলছি তাদের ওপর হাত তুলো না। আমরা মানুষ, মানুষ ভালোবাসি। তবে যারা দালালি করেছে, যারা আমার লোকদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে তাদের বিচার হবে এবং শাস্তি হবে। তাদের বাংলার স্বাধীন সরকারের হাতে ছেড়ে দেন, একজনকেও ক্ষমা করা হবে না। তবে আমি চাই স্বাধীন দেশে স্বাধীন আদালতে বিচার হয়ে এদের শাস্তি হবে। আমি দেখিয়ে দিতে চাই দুনিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ বাঙালি রক্ত দিতে জানে, শান্তিপূর্ণ বাঙালি শান্তি বজায় রাখতেও জানে।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে কর্মসূচি : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারো নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। সকাল ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন- দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু, মারুফা আক্তার পপি ও গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা। বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এছাড়া দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এবং সংগঠনের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের সব কর্মসূচি স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাযথভাবে পালনের জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সংগঠনের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App