প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাতে কুড়িগ্রামের তিনটি উপজেলার ২৬৫টি স্কুল ছুটি দিয়ে শিক্ষকদের যোগদান, বাধ্যতামূলক জনপ্রতি ৫০০ টাকা চাঁদা তুলে সোনার আংটি, রেফ্রিজারেটর ও ওয়াশিং মেশিন উপহার দেয়ার ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক বলে উল্লেখ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি প্রতিমন্ত্রীর দৃশ্যত নির্দেশনামূলক নিমন্ত্রণে ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের যোগসাজসে বিদ্যালয় বন্ধ রেখে বউভাতে স্বউৎসাহে বা বাধ্য হয়ে অংশ নেয়ার এই ঘটনা দেশের শিক্ষাখাতকে দলীয়করণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ধ্বংস করার এই ভয়াবহ দৃষ্টান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রীসহ সব জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবি জানায় টিআইবি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, গত রবিবার কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার সব স্কুল ছুটি দিয়ে শিক্ষকরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাতে অংশ নেন। বিষয়টিকে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষকতা পেশা ও শিক্ষার্থীর প্রতি নৈতিক দায়বদ্ধতার অরুচিকর লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বিকশিত দলীয়করণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের হাতে জিম্মি অবস্থার চরম উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত কুড়িগ্রামের এই ঘটনা। প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকবৃন্দের কেউ এই দায় এড়াতে পারেন না।

টিআইবি মনে করে, প্রধান শিক্ষকরা নিজেদের তিনদিন সংরক্ষিত ছুটির সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিগত আমন্ত্রণের বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতির জন্য সংরক্ষিত এই ছুটি এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহারের সুযোগ আছে কিনা, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ব্যাখার প্রয়োজন রয়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এতোগুলো বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে কারও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া ও বাধ্যতামূলক জনপ্রতি ৫০০ টাকা চাঁদা তুলে উপহার দেয়ার এই ঘটনা জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সক্রিয় যোগসাজস না থাকলে কোনো অবস্থাতেই ঘটতে পারতো না, তা খুব সহজেই বোধগম্য। প্রতিমন্ত্রী ও তার পরিবার এই উপহার গ্রহণ করে যে ন্যাক্কারজনক মানসিকতার পরিচয় দিলেন, তার ব্যাখা কি? আর এই পুরো ঘটনার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না হলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যতই বা কি! সরকারের উচিত জনগণের, বিশেষ করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জ্ঞাতার্থে তা ব্যাখাসহ প্রকাশ করা।