×

অর্থনীতি

প্রতি ইউনিটে বাড়াতে চায় ১ টাকা ২১ পয়সা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৪৯ পিএম

প্রতি ইউনিটে বাড়াতে চায় ১ টাকা ২১ পয়সা

ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ১ টাকা ২১ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি। গতকাল রবিবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে সঞ্চালন সংস্থা ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি শেষে এই তথ্য জানা গেছে।

গণশুনানিতে বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল ও কমিশনের অপর চার সদস্য উপস্থিত ছিলেন। গণশুনানিতে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে আগ্রহী পক্ষগুলো নিজ নিজ প্রস্তাবের পক্ষে কমিশনের কাছে যুক্তি উপস্থাপন করে। এদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সব পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। তখন পাইকারিতে দাম ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়ানোর পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহক বা খুচরা পর্যায়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। বর্তমানে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ইউনিট প্রতি ৭ টাকা ২ পয়সা। বিইআরসির কারিগরি কমিটি প্রতিইউনিট বিদ্যুতের দাম ১ টাকা ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৮ টাকা ২৩ পয়সা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে।

জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। দুই দিন পর বিতরণ সংস্থাগুলো খুচরা পর্যায়ে অর্থাৎ ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে বিইআরসির কাছে আবেদন করে। ওইসব আবেদন কারিগরি কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়। এরপর গতকাল প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়। এতে কারিগরি কমিটি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, এই মূহূর্তে পাইকারী ও খুচরা কোনো পর্যায়েই দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। এমনিতেই মানুষ চারদিক থেকে আর্থিক সংকটে আছে। এর আগে পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি। ডিসেম্বর থেকে দাম কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ কোম্পানিগুলো লোকসান দেখিয়ে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আবেদন করে। এতে সরকার খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করে। দাম বাড়ানোর ফলে সমাজের সব স্তরে জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে। সাধারণ মানুষের পকেট থেকেই বাড়তি দাম আদায় করবে।

জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট মেটাতে সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নিচ্ছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কাছ থেকেও সরকার আর্থিক সহায়তা নিচ্ছে। এসব সংস্থা সরকারের ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ খাতে দাতা সংস্থাগুলো ভর্তুকির বিরুদ্ধে। দাতা সংস্থার চাহিদার কারণেই এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) গত বছরের ১২ জানুয়ারি গড়ে পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর জন্য এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে আবেদন করে। কিন্তু পিডিবির তথ্যে অসম্পূর্ণতা থাকায় তা আমলে না নিয়ে আবারো আবেদন করতে বলে। পরবর্তীতে পিডিবি নতুন করে আবেদন করলে গত ১৮ মে বিইআরসি শুনানির আয়োজন করে। এই আবেদনের পর বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। তবে গণশুনানিতে ক্যাব ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেন।

এদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। গতকাল সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে এই দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের ভুলনীতি, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অপচয় প্রভৃতি কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু সরকার এসব সত্য গোপন করে উৎপাদন বৃদ্ধির অজুহাতে আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বিশেষজ্ঞরা এটা প্রমাণ করেছেন যে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা প্রতিরোধ করে বিদ্যুৎ খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। অথচ সরকার তা না করে জনগণের কাঁধে বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। চড়া মূল্যস্ফীতির সময়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচসহ সর্বত্র প্রভাব পড়বে। তাই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই যৌক্তিক হবে না।

বিবৃতিতে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধ এবং এ খাতে ভুলনীতি ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত ও বিচার করার দাবি জানানো হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App