×

সারাদেশ

জগন্নাথপুরে অস্ত্র-বিস্ফোরক উদ্ধার: গ্রেপ্তার ২

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:৫৫ পিএম

জগন্নাথপুরে অস্ত্র-বিস্ফোরক উদ্ধার: গ্রেপ্তার ২
জগন্নাথপুরে অস্ত্র-বিস্ফোরক উদ্ধার: গ্রেপ্তার ২

ছবি: ভোরের কাগজ

জগন্নাথপুরে অস্ত্র-বিস্ফোরক উদ্ধার: গ্রেপ্তার ২

ছবি: ভোরের কাগজ

মামলা ৫ জনের বিরুদ্ধে, রহস্যের কেন্দ্রবিন্দুতে আফজাল ও তার পরিবার

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার দীঘলবাক গ্রাম থেকে অস্ত্র, বিস্ফোরক তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস উদ্ধারের ঘটনায় দীঘলবাক গ্রামের আখলাকুর রহমানের ছেলে আফজাল হোসেনকে প্রধান করে ওই পরিবারের ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৫-৬ জনকে আসামি করে সংশ্লিষ্ট আইনে জগন্নাথপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোমবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে ভোরের কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জগন্নাথপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শুভাশীষ ধর। তিনি বলেন, রবিবার রাতে জগন্নাথপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিয়া উদ্দিন বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। এর আগে শনিবার সিলেট থেকে আটককৃত আফজাল হোসেনের বাবা আখলাকুর রহমান (৭০) ও তার ছেলে আমজাদুর রহমানকে (২০) এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় আফজাল হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলাসহ জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া, রবিবার বিকেলে অভিযানের পর দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।

[caption id="attachment_397245" align="aligncenter" width="1200"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামেন ভোরের কাগজের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি, অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন মামলার সূত্র ধরে গত ৭ জানুয়ারি শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট মহানগরীর পীর মহল্লার ঐক্যতান ৯/১১ ভাড়ায় থাকা বাসা থেকে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ ও সিলেট আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় আফজালের বাবা আখলাকুর রহমান (৭০) ও তার ছেলে আমজাদুর রহমানকে (২০) আটক করে পুলিশ। এরপর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই রবিবার জগন্নাথপুর উপজেলার দীঘলবাকে তাদের গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।

রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত টানা ছয় ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানে আফজালের বাড়ি থেকে ভাঙা রিভলবারের অংশ, বেশ কিছু পুরাতন মোবাইল ফোন, বিস্ফোরক তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম, বিস্ফোরক পাউডার ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস জব্দ করে পুলিশ। তবে এসময় বাড়ি থেকে কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

সকাল থেকে উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের দীঘলবাক গ্রামের মৃত আব্দুস সমিরের ছেলে আখলাকুর রহমানের বাড়িটি ঘিরে রাখে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ।

পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি), অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট ও সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল এসে অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানে একটি রিভলবারের ভাঙা আংশ, একটি ল্যাপটপ, নয়টি মোবাইল ফোন, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম ও পাউডার, দুটি কর্ডলেস টেলিফোন ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

দিনভর অভিযান শেষে বিকেল সোয়া পাঁচটায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও মিডিয়া) রিপন কুমার মোদক।

[caption id="attachment_397246" align="aligncenter" width="676"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৬ জানুয়ারি জগন্নাথপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিক নন এফআইআর মামলা নং-১১৪/২০২২ ও ৩৭৬/২০২২ এর আসামি আফজাল হোসেনকে (৩৫) আদালতের ইস্যুকৃত সমন জারি করতে আফজালের বাড়ি গেলে সে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এসময় তার বসতঘরের কয়েকটি কক্ষে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, সাদা পাউডার ও যন্ত্রপাতি দেখতে পান ওই পুলিশ সদস্য।

বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পর বাড়িটি নজরদারিতে রাখা হয় এবং রবিবার অভিযান পরিচালনা করে এসব বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

আফজাল হোসেন কে?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলার দীঘলবাক গ্রামের আখলাকুর রহমানের ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে আফজল সিলেটের পাঠানটুলা জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতো। তখন থেকেই তার রহস্যজনক আচরণে গ্রামবাসীর অসন্তোষ ছিলো।

আফজালের চাচাত ভাই শাওন মিয়া ভোরের কাগজের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধির কাছে বলেন, তার আচরণে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল গ্রামের মানুষ। মাঝেমধ্যে বাড়িতে এসে একা থাকতো সে। কারো সঙ্গে মিশতো না। নানা ধরনের ডিভাইস তার কাছে আছে। যখন তিনি বাড়িতে আসতেন, তখন বাড়ির আশপাশে মোবাইলের নেটওয়ার্ক কাজ করতো না। এলাকায় ‘দাঙ্গাবাজ’ হিসেবেও পরিচিতি আছে তার। ২০২০ সালের তিন ফেব্ররুয়ারি সিলেটে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলো আফজাল। এরপর জামিন বেরিয়ে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে আফজাল। এলাকায় একসময় সে নিজেই নিজেকে ‘জামায়াত-শিবিরকর্মী’ হিসেবে পরিচয় দিতো।

আফজাল ও তার পরিবারের সদস্যরা জঙ্গিসংগঠনের সঙ্গে জড়িত কিনা সেই বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু সাঈদ ভোরের কাগজের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিকে বলেন, মামলার তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App