×

জাতীয়

আন্দোলন আরো তীব্র হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:২৮ পিএম

আন্দোলন আরো তীব্র হবে

ছবি: ভোরের কাগজ

আন্দোলন আরো তীব্র হবে

ছবি: ভোরের কাগজ

কারাগারে একমাস আটক থাকার পর মুক্তি পেয়েই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন আরও তীব্্র হবে। তিনি বলেন, ‘পিছু হটবার পথ নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাবো। তাই আন্দোলন আরো তীব্র করতে হবে। এর মাধ্যমে দেশকে মুক্ত করতে হবে।

সোমবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। এসময় উচ্ছসিত নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন- ‘মির্জা ফখরুলের মুক্তি আন্দোলনে শক্তি, মির্জা আব্বাসের মুক্তি আন্দোরনে শক্তি’।

এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি মহাসচিব সন্ধ্যা ৬টার কিছু পর কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন। সেখান থেকে সরাসরি তিনি নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে আসেন। এ সময় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী মির্জা ফখরুলকে ফুলের মালা পরিয়ে অভিনন্দন জানান। প্রিয় নেতার মুক্তিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন দলীয় কর্মীরা। এ সময় তার সঙ্গে মুক্তি পান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও।

সন্ধ্যার পর সরাসরি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছে বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্রিয় ভাইয়েরা, মহান আল্লাহ-তায়ালার ইচ্ছা ও আপনাদের আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা মাত্র দুইজন মুক্তি পেয়েছি। আরো অনেকে এখনও কারাগারে। শুধু বন্দি নয়, তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। একটা সেলের মধ্য ৫-৭ জনকে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে।

ফখরুলের দাবি, ক্ষমতাসীনরা গ্রেফতার করে ভোটের অধিকারের আন্দোলন বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু এতে আন্দোলন আরোও বেগবান হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সারাদেশ আন্দোলনে প্রকম্পিত হচ্ছে সরকার যত বেশি অত্যাচার করবে ততবেশি মানুষ ফুঁসে উঠবে। পিছু হটবার পথ নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাবো। তাই আন্দোলন আরও তীব্র করতে হবে। এর মাধ্যমে দেশকে মুক্ত করতে হবে। আসুন এই শপথ নিয়ে নতুন অঙ্গীকার করি। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন রাজপথে থাকবো।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সমাবেশের স্থান নির্ধারণ নিয়ে অস্থির অবস্থার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়। আমার অপরাধ ছিল আমি সংঘর্ষ এড়িয়ে গেছি। সরকারকে বলবো বিএনপি সন্ত্রাসী দল নয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় তারেক রহমান তাদের পরিবারের খোঁজ নেয়ায় ধন্যবাদ জানান তিনি।

এর আগে সোমবার সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের পক্ষে জামিননামা দাখিল করেন তাদের আইনজীবীরা।

আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ জানান, দুপুরে ঢাকা সিএমএম আদালতের জুডিসিয়াল মুন্সিখানায় তাদের হাইকোর্টের দেয়া জামিনের আদেশ এসে পৌঁছায়। পরে আইনজীবীরা জামিননামা দাখিল করেন।

এর আগে গত ৩ জানুয়ারি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে ৬ মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। তাদের জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. সেলিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সে আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।

পরে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে তাদের জামিন বিষয়ে জারি করা রুল হাইকোর্টকে ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন সবোচ্চ আদালত। পাশাপাশি চেম্বার জজ আদালত মির্জা ফখরুল-আব্বাসের জামিননামা দাখিলে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন, তা প্রত্যাহার করেন। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৮ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

ওইদিন আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সগীর হোসেন লিওন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম গোলাম মোস্তফা।

গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. আসাদুজ্জামান এ আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত ও অর্ধশত আহত হন। সংঘর্ষের পর পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান চালায়। ঘটনার পরদিন পল্টন, মতিঝিল, রমনা ও শাজাহানপুর থানায় পৃথক চারটি মামলা করে পুলিশ। এতে ২ হাজার ৯৭৫ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৭২৫ জনের। তবে নাম উল্লেখ করা বিএনপির নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস ছিলেন না।

পরে ওই দুই নেতার বাসায় গত ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে পৃথক অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দুজনকে প্রথমে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে। বাসা থেকে নিয়ে যাওয়ার প্রায় ১১ ঘণ্টা পর মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে তাদের পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App