×

জাতীয়

হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবনে স্থবিরতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৪ এএম

হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবনে স্থবিরতা

ফাইল ছবি

হিমেল হাওয়া আর হাড় কাঁপানো শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। তবে হতদরিদ্ররাই বেশি বিপাকে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহে অচলাবস্থা বিরাজ করছে বেশ কয়েকটি জেলায়। দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগের প্রকোপ। ঘন কুয়াশা আর মেঘের আড়াল থেকে সূর্য কিছু সময়ের জন্য উঁকি দিলেও শীতের তীব্রতা তেমন একটা কমছে না। তবে, কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে দিনের তাপমাত্রা।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। নওগা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

এছাড়া সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। পরবর্তী তিন দিনে আবহাওয়ার অবস্থা সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।

এদিকে, ঘন কুয়াশার কারণে পথ চলতে বিপাকে পড়ছেন গাড়ি চালকরা। দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। বিঘœ ঘটছে নৌ চলাচলেও। ঘন কুয়াশার কারণে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামায় কিছুটা সমস্যা হতে দেখা গেছে কয়েকদিন। গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এদিন ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীবাসী বলছে, গত বেশ কয়েক বছর এবারের এত শীতের তীব্রতা অনুভূত হয়নি।

গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে ২৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী দুদিনে শীত কিছুটা কমতে পারে। তবে, আগামী ৫ দিনে বাড়বে শীত। আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। নওগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে ও এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

তিনি আরো জানান, সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়া চুয়াডাঙ্গায় জেলার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, জেলাটিতে তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতি থাকবে দু-একদিন। তাপমাত্রা আরো কমতে পারে বলেও জানান তিনি।

এদিকে হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ চরমে। চুয়াডাঙ্গা শহরের রিকশাচালক মো. নাসির মোল্লা বলেন, ঠাণ্ডার জন্য রিকশা চালানো যাচ্ছে না। হাত-পায়ের পাতা মনে হচ্ছে বরফ হয়ে যাচ্ছে। পেটের দায়ে বাড়ি থেকে বের হলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। দিনমজুর কাশেম আলী বলেন, এভাবে চললে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। আলম নামের এক কৃষক বলেন, ভোরে কাজে যেতে পারছি না। এভাবে ঠাণ্ডা পড়লে কাজে যাওয়া সম্ভব হবে না। ফসলের ঠিকমতো পরিচর্যা করা সম্ভব হচ্ছে না।

অন্যদিকে, শীতজনিত কারণে হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১৩টি বেডের বিপরীতে ভর্তি রয়েছে ৫০ জন। দিনে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হচ্ছে শতাধিক। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন জানান, তীব্র শীতে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে বহু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া প্রতিদিন তিন থেকে চারশ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নেয়। শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।

চট্টগ্রামেও জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। নগরীর বিভিন্ন সড়কের পাশের ফুটপাত, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, ষোলশহর, ঝাউতলা, কদমতলী স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে কেউ কেউ চটের বস্তা পেতে শুয়ে আছেন। অনেকের সেটাও নেই। মানবেতর জীবনযাপন করছেন রিকশাচালকরাও। প্রতিদিন ভোরে রিকশা নিয়ে বের হন রিকশাচালক আব্দুল মোতালেব। তিনি বলেন, বেশি ঠাণ্ডায় কষ্ট হয় রিকশা চালাতে। কমে গেছে উপার্জনও। ঠাণ্ডা বেড়ে যাওয়ায় ফুটপাত ও খোলা আকাশের নিচে থাকা দরিদ্র মানুষরা কাগজ, পলিথিন ও ছেঁড়া কাপড় জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা ও সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়বে। রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া উত্তর অথবা উত্তর পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। গতবারের চেয়ে এবার অনেক বেশি শীত পড়েছে- এমনটাই বলছেন উত্তরবঙ্গের মানুষ। বিশেষ করে শৈত্যপ্রবাহে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীসহ আশপাশের অঞ্চলে হাড়কাঁপানো শীত পড়েছে। ষাটোর্ধ্ব বয়সি এক পান দোকানি বললেন, ঠাণ্ডায় দাঁতের সঙ্গে দাঁত কামড় খাচ্ছে। শরীর বেঁকে যেতে চাচ্ছে ধনুকের মতো। ঠাণ্ডা কনকনে বাতাস। হাত-পা বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়্যা কাঁপ উঠি যাচ্ছে। আমরা খালি (শুধু) পেটের দায়ে পড়ে থাকি স্টেশনে।

মাদারীপুর কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আবদুর রহমান সান্টু বলেন, গতকাল সকাল ১০টায় মাদারীপুর জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা আরো কমতে পারে। গেল তিন দিনের মধ্যে এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। দু-তিন দিন পরে তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও জানুয়ারিজুড়ে আরো শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। তাপমাত্রা নি¤œগামী হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চরের সাড়ে পাঁচ শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী, সন্ন্যাসীর ও চরজানাজাতের মানুষ বেশি বিপাকে পড়েছেন। এর আশপাশজুড়েই পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদ। তাই সরকারিভাবে শীতবস্ত্র চাচ্ছেন এলাকাবাসী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App