×

সারাদেশ

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে একমাসে ৫২ শিশুসহ ১৪৪ জনের মৃত্যু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬:৫৫ পিএম

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে একমাসে ৫২ শিশুসহ ১৪৪ জনের মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে গত একমাসে ১৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ৫২ জন শিশু ও ৬৬ জন বৃদ্ধ রয়েছেন। বেশিরভাগ মৃত্যু ঠান্ডাজনিত রোগে হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। এখনো কয়েকশ রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি রয়েছে।

জানা গেছে, ডিসেম্বর মাসে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ৯২৭ জন ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৯৫০জন রোগী ভর্তি হয়। এরমধ্যে মোট ১৪৪ জন মারা গেছে। যার মধ্যে শূন্য থেকে চার বছর বয়সী ৫১ জন, ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী একজন, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী সাত জন, ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ১৯ জন ও ৫০ বছরের উর্ধ্বে ৬৬ জন রোগী মারা গেছেন।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, গত সাত দিনে শিশু ওয়ার্ডে ১২৯ জন ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১০৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে তিনজন রোগী মারা গেছেন। গত কয়েকদিন বেশিরভাগ রোগী ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

এদিকে, নোয়াখালীর ৩৫ লাখ লোকের একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র ২৫০ শয্যার এ জেনারেল হাসপাতালে জনবল সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। যার ফলে রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেলার বাহিরে থেকেও অনেক রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসছেন।

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সিট না পেয়ে রোগীরা ঠান্ডার মধ্যে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেক রোগী সুস্থ হয়ে বাড়িতে গিয়ে আবারো ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা নিয়েও নানান অভিযোগ তুলেছেন।

শিশু ওয়ার্ডে ছয়দিন আগে ভর্তি হয়েছেন নোয়াখালী সদর উপজেলার শরীফপুর গ্রামের আড়াই বছর বয়সী মাহবুবুর রহমান। তার মা খালেদা আক্তার বলেন, গত মাসে সর্দি-কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে ১৬ দিন চিকিৎসা করে বাড়ি গিয়ে সাত দিনের মাথায় আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার মৌলভীবাজার এলাকার চারমাস বয়সী শিশু ফাহিমের মা ফাতেমা বেগম বলেন, তার বাচ্চা ঠান্ডায় আক্রান্ত হওয়ার পর স্থানীয় অনেক হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েও কোনো উন্নতি না হওয়ায় ছয়দিন আগে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোগীরা জানান, হাসপাতালে টাকা ছাড়া কোনো চিকিৎসা মেলে না। টাকা না পেলে সিট তো দূরে থাক একটা বেডশিটও দেয় না। সকল ওষুধ বাহির থেকে কিনে আনতে হয়। অপরিষ্কার হাসপাতালে টয়লেট এতো খারাপ এতে ভালো মানুষও রোগী হয়ে যাবে।

তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তৃতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স আকলিমা আক্তার বলেন, স্বল্প জনবল নিয়ে রোগীদের চাপ সামলাতে হচ্ছে। বারবার বলার পরও ডিউটি নার্সের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে না। রোগীরা একযোগে সেবা চাইলে একার পক্ষে একজন নার্স তা দিতে পারেন না। তাই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন জানান, ৫৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৪৩ জন। নার্সসহ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরও চরম সংকট রয়েছে। ফলে রোগীদের অতিরিক্ত চাপে চিকিৎসা দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ১৮৬০ সালে এটি ১৫০ বেড়ের হাসপাতাল হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরে ১৯৯৮ সালে এটিকে ২৫০ বেড়ের জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত করা হলেও বিগত ২৫ বছরের এখানে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App