×

জাতীয়

রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ অগ্রযাত্রাকে শ্লথ করেছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:৩১ পিএম

রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ অগ্রযাত্রাকে শ্লথ করেছে

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ফাইল ছবি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, সরকার করোনা পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করে অর্থনীতির গতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হলেও রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ সে অগ্রযাত্রাকে শ্লথ করেছে।

তিনি আরও বলেন, তারপরও ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইতিবাচক ও দেশের অগ্রযাত্রকে তরান্বিত করছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীন সার্বভৌম এ দেশে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং তাদের সকল প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু মহান জাতীয় সংসদ। আপনারা জনপ্রতিনিধি, তাই জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের ২১তম ও নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ আহবান জানান। সংবিধানে বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেওয়ার বিধান রয়েছে। সংসদে রাষ্ট্রপতি ১৬৮ পৃষ্ঠার ভাষণে সংক্ষিপ্তসার পাঠ করে শোনান। রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংসদের প্রথম অধিবেশনে এটিই তার শেষ ভাষণ। বিকেল চার ঘটিকায় অধিবেশন শুরু হলে চারটা ২০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ভাষণ শুরু করেন।

ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ আমরা অতিবাহিত করছি। ২০২২ সাল আমাদের জন্য ছিল চ্যালেঞ্জের একটি বছর। সমগ্র বিশ্বই পার করছে এক কঠিন সময়। করোনা অতিমারি আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করে অর্থনীতির গতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হলেও রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে শ্লথ করেছে। তারপরও ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক দুই-পাঁচ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতিবাচক। মাথাপিছু জাতীয় আয় পূর্ববর্তী অর্থবছর থেকে ২৩৩ মার্কিন ডলার বেড়ে ২ হাজার আটশত চব্বিশ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক নয়-সাত বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ দশমিক চার-চার বিলিয়ন ডলারে।

তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নাশান্যাল এডাপটেশন প্লান প্রণয়ন করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’-এর আওতায় ৬৪টি জেলায় প্রায় ৫ হাজার দুইশত তেষট্টি কিলোমিটার নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখননের কাজ চলমান রয়েছে। ফলে ১০৯টি ছোটো নদী, ৫৩৩টি খাল ও ২৬টি জলাশয় পুনরুজ্জীবিত হবে। এছাড়া, প্রধান প্রধান নদীসমূহে ড্রেজিং ও নদী ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গ তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে স্বাক্ষরিত ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তির’ ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি ধারা ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হওয়ায় অনগ্রসর পার্বত্য অঞ্চল জাতীয় উন্নয়নে সংযুক্ত হয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে সৌহার্দ্য বিরাজ করছে এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রয়েছে।

আবদুল হামিদ বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বে পরিচিতির লক্ষ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তথ্যপ্রবাহ ও সৃজনশীলতার ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সরকার আইন, বিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন করছে। সরকার কর্তৃক সংবাদকর্মীদের কল্যাণার্থে সাংবাদিক ও সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে।

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের সফলতা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা অতিমারি মোকাবিলায় টিকাদান এবং সামাজিক তৎপরতার ওপর ভিত্তি করে ‘কোভিড-১৯ রিকোভারি সূচক’-এ বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে সরকার প্রায় ১৫ কোটি জনগণকে কোভিড টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এনেছে। বর্তমানে চতুর্থ ডোজ টিকা দেবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ভাষণে তিনি মেট্রোরেল চালু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসাবে ৬টি মেট্রোরেল সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম উড়াল মেট্রো ট্রেন চালু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। সরকারের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬টি এমআরটি’র মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। একইসঙ্গে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশের সক্ষমতা ও গর্বের প্রতীক আইকনিক পদ্মা সেতু উদ্বোধন করায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি।

এ সময় তিনি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুলেন টানেলের দক্ষিণ টিউবের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে উল্লেখ করে দ্রুতই টানেলটি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশ ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রপতি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে মাস্টার প্ল্যান, আইন, নীতিমালা ও স্ট্র্যাটেজিপ্র্রণয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে একটি রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীন সার্বভৌম এ দেশে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং তাদের সকল প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু মহান জাতীয় সংসদ। আপনারা জনপ্রতিনিধি, তাই জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সরকার সদা তৎপর। বাংলাদেশের সকল থানায় ‘নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক’ স্থাপন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App