×

জাতীয়

বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে চলছে নেতিবাচক প্রচারণা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩০ এএম

বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে চলছে নেতিবাচক প্রচারণা

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ফাইল ছবি

‘পুনর্জীবিত’ আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি মন্ত্রীর নির্দেশ কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিষয়ে বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এরপরই প্রশ্ন উঠেছে, বিদেশে নিয়োগপ্রাপ্ত আমাদের কূটনীতিকরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন কিনা? বিদেশে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে সুযোগ-সুবিধার সর্বোচ্চ পেয়েও তারা নিজ দেশের জন্য কী কাজ করছেন? পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নতুন নির্দেশনার পর কতটুকু দায়িত্বশীল আচরণ করছেন আমাদের কূটনীতিকরা? এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিক চিত্র বহির্বিশ্বে তুলে ধরার জন্য বিদেশি মিশনগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত রবিবার পুনর্জীবিত করা হয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি। কমিটির বৈঠকের পর বিদেশি মিশনপ্রধানদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন।

বর্তমানে বিদেশে বাংলাদেশের মোট ৪৯টি আবাসিক কূটনৈতিক মিশন আছে। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কনস্যুলেট জেনারেল, ডেপুটি হাইকমিশন, অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশন ও বিভিন্ন ভিসা অফিস ধরনের ১১টি সাব-মিশন রয়েছে। বাংলাদেশের কয়েকটি অনাবাসিক কূটনৈতিক মিশনও আছে যেগুলো সাধারণত সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস/হাইকমিশন দ্বারা পরিচালিত হয়। বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত এবং এ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার অথবা মিশনপ্রধানদের নিয়োগ দেন সরকারপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রী।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, মিশনপ্রধানের ৭০ ভাগ পেশাজীবী কূটনীতিকদের মধ্য থেকে এবং বাকি ৩০ ভাগ সরকারপ্রধানের ইচ্ছানুযায়ী

অকূটনীতিক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া যেসব গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্রচুরসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির বাস সেসব দেশের দূতাবাস/হাইকমিশন ছাড়াও শহরগুলোতে, বিশেষত ব্যবসা ও কনস্যুলারসংক্রান্ত দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার কনস্যুলার জেনারেল/ডেপুটি হাইকমিশন স্থাপন করে। সাধারণত এসব মিশনের প্রধান থাকেন সরকারের যুগ্ম সচিব। কোনো বন্ধুরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পান এবং স্বাগতিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা স্বীকৃত হন। সেজন্য তিনি ওই দেশের ঊর্ধ্বতন মহলে অবাধ যাতায়াতের সুযোগ পান এবং উভয় দেশ ও সরকারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সম্পূর্ণ দায়ী থাকেন। বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান, সরকারি দলিলে স্বাক্ষর দান এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অন্যান্য চুক্তি স্বাক্ষর করার পূর্ণ ক্ষমতা তাকে দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বার সরকার পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একের পর এক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। এরই মধ্যে সরকারবিরোধী একটি চক্র বিদেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বিশেষ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সম্পর্কে বহির্বিশ্বে অপপ্রচার ঠেকাতে আমাদের কূটনীতিকদের একটি অংশ নির্বিকার। তাদের সচল করতে সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকার বিভিন্ন স্থানে কূটনীতিকদের পরিবর্তন করেছে, তারপরও নিত্যনতুন বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের প্রশাসনের ‘এলিট’ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সক্ষমতা, যোগ্যতা এবং দেশপ্রেম নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। এসব কারণেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নতুন এই নির্দেশ দিতে হলো।

রবিবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর একটি অপচেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। সেইসঙ্গে দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূতদের সংশ্লিষ্ট দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে মিশনে আমন্ত্রণ জানানোসহ নানাভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাদের কাছে বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে হবে। বিদেশে প্রচারিত মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে জবাব দিতেও মিশনপ্রধানদের নির্দেশনা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

এর আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা করেন তিনি। বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ বিভিন্ন বাহিনীর জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগে থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ ধরনের একটি কমিটি ছিল। তবে সেটা স্তিমিত হয়ে যাওয়ায় রবিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে কমিটিকে ‘পুনর্জীবিত’ করা হয়েছে। কমিটির কাজ হবে একটা তথ্য পেলে তা কতটুকু সত্য, কতটুকু মিথ্যা- সেটা যাচাই করা। কারণ অন্য মন্ত্রণালয় তথ্য দিলে আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করি এবং এটার সত্য মিথ্যা আমরা জানি না। সংশ্লিষ্ট এ মন্ত্রণালয় হলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়। কমিটি তাদের সঙ্গে আলাপ করবে যে, এই জিনিস আমরা পেয়েছি, আপনারা একটু বলেন কী অবস্থা? তারপর তারা আমাদের বলবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভাগের মহাপরিচালক এই সমন্বয় কমিটির প্রধান থাকবেন। তার সঙ্গে যুক্ত হবেন স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সবার অংশগ্রহণে স্বচ্ছ নির্বাচন করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা জনগণের ওপর বিশ্বাসী। জনগণ যাকে চাইবে, তাকেই ভোট দেবে। আওয়ামী লীগের স্লোগান হলো- আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। সরকারের এই নীতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে বিদেশি মিশনগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক শমসের মবিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঠিক কাজই করেছেন। মন্ত্রী তাদের কাজটিকে আবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তাদের কী কী কাজ করতে হবে তার তাগাদা দিয়েছেন মন্ত্রী।

আরেক কূটনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ জমির ভোরের কাগজকে বলেন, মোটাদাগে কূটনীতিকদের ওপর তিনটি দায়িত্ব থাকে। এগুলো হচ্ছে- বিদেশে নিজ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ¦ল করার বিষয়ে কাজ করা, অপপ্রচার হলে কারা অপপ্রচার করছে তা চিহ্নিত করে তাকে বুঝিয়ে নিবৃত্ত করা এবং দেশের উন্নয়ন কাজের প্রচার করা। মূলত এই বিষয়গুলোই পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, কূটনীতিক হিসেবে যারা বিদেশে নিয়োগ পাবেন তারা প্রথমেই সেই দেশের ভাষা ও কৃষ্টি শিখবেন। তাহলে ওই দেশের কর্তৃপক্ষ ভাববে, এরা আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। তখন তারা আমাদের সমালোচনা না করে সহযোগিতা করবে। কূটনীতিতে বাংলা বর্ণের ‘স’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বর্ণ দিয়ে আপনি সমালোচনার শিকার হবেন, না সহযোগিতা পাবেন, তা নির্ভর করে আপনার ওপর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App