×

জাতীয়

জমি নাশ করে পুকুর খননের হিড়িক!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:৪৯ পিএম

জমি নাশ করে পুকুর খননের হিড়িক!

ছবি: ভোরের কাগজ

‘জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না’ এমন সরকারি নির্দেশ থাকলেও রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফসলি কৃষি জমিগুলো গভীর পুকুরে পরিণত করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে গত একমাসে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে।

এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে একদিকে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে বিনাশ হচ্ছে ফসলি জমি। এদিকে, গত মাসে ভ্রাম্যমান আদালত দুইজন পুকুর মালিককে ১ লাখ টাকা জরিমানাও করেছেন।

তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, আইনি জটিলতা এড়াতে জমির মালিকরা পুকুর খনন করতে ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রভাবশালী নেতা ও দুটি দপ্তর কর্মকর্তার সঙ্গে বিশেষ চুক্তি করেন। এরপর পুকুরের খননের কাজ চলে। আর যারা চুক্তিতে যায় না তাদের গুনতে হয় জেল-জরিমানা।

চলতি বছর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কান্দ্রা গ্রামে, জিউপাড়া ইউনিয়নের ধোপাপাড়া, গ্যাইংপাড়া, বিলমাড়িয়া, শিলমাড়ীয়া ইউনিয়নের রাতোয়াল পাড়া ও ভালুকগাছি ইউনিয়ন এলাকায় ছয়টি স্থানে ফসলি জমিতে পুকুর খনন কাজ চলছে পুরোদমে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তন্ময় কুমার সরকার বলেন, গত ৩ বছরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার একর ফসলি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে উপজেলার শিলমাড়িয়া, ভালুকগাছি ও জিউপাড়া ইউনিয়ন এলাকায়। অভিযোগ আসছে এ বছরেও আবারো বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমিতে পুকুর খনন শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এভাবে যত্রতত্র পুকুর খননের প্রভাবে বর্ষা মৌসুমে এলাকায় দীর্ঘ মেয়াদী জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। সেই সাথে এলাকায় খুব দ্রুত ফসলি জমির পরিমান কমছে। যা আগামিতে খাদ্য যোগানেও প্রভাব পড়বে।

জিউপাড়া ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, গত প্রায় এক মাস থেকে ধোপাপাড়া, বিলমাড়িয়া ও সরিষাবাড়ী এলাকায় ভেকু মেশিনে একাধিক পুকুর খনন কাজ চলছে। আর পুকুরের মাটি নিচ্ছে উপজেলার ১০-১২ টি অবৈধ ইটভাটার মালিকরা। টাক্ট্ররের মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত মাটি বহনের কারণে গ্রামীণ সড়কগুলো বেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়গুলো থানা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে ও থানা পুলিশকে অবহিত করা হলেও রহস্যজনক কারণে কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।

মনিরুল ইসলাম নামে একজন চাষি বলেন, মোটা অংকের চুক্তিতে উপজেলার সকল এলাকার পুকুর খনন শুরু হয়েছে। আর খনন কাজে মদদ দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রভাবশালী নেতা। সেই সাথে পুকুর খননকারীদের দুটি দপ্তরের সাথেও সমঝোতা করেন তিনি। সে কারণে ফসলি খেতে পুকুর খনন কাজ বন্ধ হয় না। আর জমির মালিক ও মৎস্য চাষিরা প্রকাশ্য পুকুর খনন করেন।

এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল হাই মোহাস্মদ আনাছ পিএএ বলেন, পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছেন। গত ডিসেম্বর মাসেও কান্দ্রা গ্রামে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। সেখানে ফসলি জমিতে পুকুর খননের কারণে ওই মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। বাকিগুলোতেও অভিযান করা হয়। তবে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয়দের জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App