×

সম্পাদকীয়

সংকট কাটিয়ে সব শিক্ষার্থী বই পাক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:২৭ এএম

বাংলাদেশে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি বারবার বলে আসছে কাগজ সংকটের কারণে এবার বিনামূল্যে বই বিতরণে অনিশ্চয়তা দেখা দিবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সহায়তার কথাও বলা হচ্ছিল। বছরের প্রথম দিন থেকে বই উৎসব কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারছে না- এমন খবর গণমাধ্যমে আসছে। গতকাল ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে বিদ্যালয়ে এখনো সব বই পৌঁছায়নি। প্রাক-প্রাথমিক, তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির বই পাইনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। সে কারণে শিক্ষার্থীদের বই দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের হাতে নির্দিষ্ট সময়ে নতুন বই তুলে দেয়া সরকারের একটি চ্যালেঞ্জ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বলা যায়, নববর্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি বাড়তি আনন্দের দিন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছানো নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বই উৎসব সফল হবে- এ প্রত্যাশা আমাদের। ২০১০ সাল থেকে উৎসবের মাধ্যমে পাঠ্যবই বিতরণ করে আসছে সরকার। করোনার কারণে বিগত দুই বছর বই উৎসবে ভাটা পড়লেও এবার আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেখেছি, বই বিপণন নিয়ে নানা ঘটনা। বিনামূল্যে বিতরণের বই কালোবাজারে বিক্রি, বইয়ের সঙ্গে নোট বই কিনতে অভিভাবকদের বাধ্য করার মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন শ্রেণির বই বছরের পর বছর সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রকাশকরা। অন্যদিকে পাঠ্যপুস্তকের মান নিয়েও সংশয় ছিল। অস্পষ্ট ছাপা, নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করা হতো এসব পাঠ্যপুস্তকে। কিন্তু‘ বর্তমানে যে ঝকঝকে ছাপা রঙিন বইগুলো শিক্ষার্থীর হাতে দেয়া হচ্ছে, তাতে শিক্ষার্থীদের বই পাঠের আনন্দ বহুগুণ বেড়ে যাবে। সদিচ্ছা থাকলে এসব অন্তরায় দূর করা যায়, সেটা প্রমাণ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী এর আগে একাধিকবার শিক্ষাকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে অভিহিত করেছেন। এটি যে দারিদ্র্যমুক্তির কার্যকর অস্ত্র তা প্রমাণিত হয়েছে শিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দারিদ্র্যমুক্তির ঘটনায়। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণসহ শিক্ষা খাতে বাজেটের এক উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ যে জাতির জন্য সত্যিকার অর্থেই লাভজনক তা বাস্তবতার নিরিখেই প্রমাণিত হয়েছে। সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিনামূল্যে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই বিতরণ ও নারীদের অবৈতনিক শিক্ষার যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে, তা বিশ্ব সমাজেরও প্রশংসা অর্জন করেছে। জানা গেছে, বইয়ের টেন্ডার, মান যাচাই, টাকা পয়সা, বিল-ভাউচার- সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে জাতীয় কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বইয়ের ক্রেতা হলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এনসিটিবির মাধ্যমে বই তারা শিক্ষার্থীদের দেয়। এখানে একটি ¯œায়ুযুদ্ধ চলে আসছে দীর্ঘদিন। এনসিটিবির দাবি তারা বইয়ের মালিক। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলে আসছে, আমরা বই কিনি, টাকা না দিলে বই ছাপা হবে না। এর সঙ্গে আরো রয়েছে পুস্তক প্রকাশক ও মুদ্রণকারীরা। এর ফলে প্রতি বছর ত্রিমুখী একটি সমস্যা তৈরি হয়। যা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাগজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টিও। বিষয়গুলো মনিটরিং করবে কে? এমন দ্ব›দ্ব অভিযোগের কারণে সরকারের অর্জনটি ভেস্তে যেতে পারে। দেশে পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ ও বিতরণকে ঘিরে যে কায়েমি চক্র গড়ে উঠেছিল তারা এখনো সক্রিয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের অনমনীয় মনোভাবই প্রত্যাশিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App