×

জাতীয়

শীতে কাবু উত্তরের জনপদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩০ এএম

শীতে কাবু উত্তরের জনপদ
বৃষ্টির মতো ঝড়ছে কুয়াশা

গত ৫ দিন ধরে তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জনপদ। সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে না সকাল পেরিয়ে দুপুরেও। রাতে বৃষ্টির মতো ঝড়ছে কুয়াশা। সূর্য না ওঠায় ঘুয়াশায় ঢাকা থাকছে চারপাশ। হিমেল হাওয়া আর শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বয়স্ক ও শিশুরা।

ভোরের কাগজের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

আবু সালেহ মো. রায়হান, পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ে প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা। বাড়ছে শীতের তীব্রতা। গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।

৬ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে রাত থেকে কুয়াশায় পথঘাট ঢেকে যাচ্ছে। সকাল বলা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহনগুলো। ঘন কুয়াশার কারণে বোরো ধান, ভুট্টা, মরিচসহ নানা ধরনের শাকসবজির ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলার কৃষকরা।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মধ্যে ২৫ হাজার ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে জানুয়ারির শুরু থেকে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদ্যু শৈতপ্রবাহ আরো কয়েকদিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।

তৈয়বুর রহমান, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে শীতের সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কনকনে ঠান্ডার প্রকোপ তীব্রতা হয়েছে। দুদিন পর গতকাল সকালে সূর্যের আলো দেখা গেছে। তারপরও তাপমাত্রা নিম্নগামী রয়েছে। গতকাল কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ টাওয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে। শীতে বৃদ্ধ এবং শিশুরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। জেলার হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও হাঁপানি রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে।

ঘন কুয়াশার কারণে জেলার বাস, ট্রেনসহ সব ধরনের যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বিশেষ করে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে কুড়িগ্রাম ও রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মুখে পড়ছে। শীতের সঙ্গে কনকনে ঠাণ্ডার প্রকোপ যতই বাড়ছে নদীর পাড়ের বৃদ্ধ ও শিশুদের দুর্ভোগ ততই বাড়ছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের ত্রাণ দপ্তর থেকে দুস্থদের মধ্যে বিনামূল্যে কম্বল বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারেই অপ্রতুল বলে একাধিক জনপ্রতিনিধি অভিযোগ তুলেছেন। আরো বিপুল পরিমাণ গরম কাপড় বরাদ্দের প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তারা।

হাসান গোর্কি, রংপুর : তীব্র শীতে কাবু রংপুর জেলার মানুষ। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত দুদিন থেকে সকালের দিকে ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো যাচ্ছিল না। দুপুরের পরই আবার কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়ছে প্রকৃতি। শীতে নিম্ন আয়ের মানুষরা কষ্টে দিনযাপন করছেন। ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়ক ও নগরীর সড়কগুলোতে হেডলাইট ও ফগ লাইট জালিয়ে চলাচল করছে ছোট বড় সব ধরনের যানবাহন।

এদিকে শীতের কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের ঠাণ্ডাজনিত রোগবালাই বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। প্রতিদিন সরকারি হাসপাতালেগুলোতে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো নতুন কম্বল আসছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

মনসুর আলী, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ে কয়েকদিন ধরে কুয়াশায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে দুই-তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। এতে সমস্যায় পড়েছেন শিশু ও বয়স্করা। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না সাধারণ মানুষ। ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাফেরা করছে। প্রচন্ড শীতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বেশি। প্রতিদিন রাত ৮টার মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে গ্রামগঞ্জ ও শহরের হাটবাজারগুলো। শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় কিনতে শীতের পুরোনো কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন অনেকেই।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার পর্যন্ত জেলায় সর্বোচ্চ ২৫ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মামুন ভূইয়া জানান, জেলায় এ পর্যন্ত সরকারি ভাণ্ডার থেকে ২৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দপ্তর, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করার খবর পাওয়া যায়। তবে ঠাকুরগাঁওয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে পৌর শহরের নিশ্চিন্তপুর আইডিয়াল স্কুল মাঠে প্রায় ৩ শতাধিক অসহায় ও শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।

কামরুল আহসান কল্লোল, নীলফামারী : নীলফামারীতে জেঁকে বসেছে শীত। ক্রমেই কমছে তাপমাত্রা। ঘন কুয়াশায় সকালেও আলো জ্বেলে চলছে যানবাহন। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসেই দেখা দেবে শৈত্যপ্রবাহ। গত কয়েকদিন ধরেই ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। ঘন কুয়াশার পাশাপাশি কনকনে ঠাণ্ডাও জেঁকে বসতে শুরু করেছে পুরো জেলাজুড়ে।

গতকাল জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এদিন বেলা ১২টায় সূর্যের দেখা মিললেও তা বেশিক্ষণ থাকেনি। দুপুরের মধ্যেই আবারো মেঘে ঢাকা পড়ছে। দুপুর ১২টার পরেই সূর্যের দেখা মিলেছে, তবে প্রখরতা ছিল না। এ সময়টাতে সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। সৈয়দপুর উপজেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, দিন দিন তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমে যেতে পারে। এ মাসের শুরুতেই একটি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত নানা রোগ। নীলফামারী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট শয্যার বিপরীতে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। বহির্বিভাগেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App