×

জাতীয়

নগরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:১৬ পিএম

নগরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল

ফাইল ছবি

গড়ে ওঠেনি অবকাঠামো নেই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ও

দেশের স্বাস্থ্য অবকাঠামোয় উন্নতি বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় গ্রাম থেকে মফস্বল পর্যায়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের সরকারি প্রতিষ্ঠান। তবে শহরাঞ্চলে এই সেবা খুবই কম। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না হওয়ায় সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি হাসপাতালে চাপ পড়ছে। এতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা প্রার্থীদের সেবা পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া নগরে রেফারেল পদ্ধতি কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নগরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত নগরের মানুষের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কে দেবে এর স্থায়ী মীমাংসা হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়নে রুরাল হেলথ সেন্টার, ইউনিয়ন সাবসেন্টার ও হেলথ এন্ড ফ্যামেলি ওয়েলফেয়ার সেন্টার রয়েছে। উপজেলায় ১০, ২০ ও ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হেলথ কমপ্লেক্স রয়েছে। জেলায় নার্সিং ইনস্টিটিউট সংবলিত জেলা হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, অনেক জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, যক্ষ্মা ক্লিনিক, কুষ্ঠ হাসপাতাল ও মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট স্কুলসহ ৭ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু বড় শহরগুলোতে মোট জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ বাস করলেও তাদের জন্য প্রাথমিক সেবা ব্যবস্থা অপ্রতুল। ফলে ছোটখাটো রোগের জন্য তাদের সেকেন্ডারি বা টারশিয়ারি হাসপাতালে ছুটতে হয়। এতে সেখানে চাপ তৈরি হচ্ছে। তাই যাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দরকার তারা পিছিয়ে পড়ছেন। অনেকে ভোগান্তি এড়াতে অন্যত্র যাচ্ছেন। এতে চিকিৎসা খরচ বাড়ছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, নগরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া স্থানীয় সরকারের আওতায়। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো ঠিকমতো নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা করতে পারছে না। এজন্য সরকারের নতুন কর্মপরিকল্পনা হলো-আগামীতে শহরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র আলাদা করা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত পাঁচ দশকেও দেশে শহরাঞ্চলে কার্যকর ও পর্যাপ্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং চারটি বিভাগীয় শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা) ৩৬টি আরবান ডিসপেনসারি হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নগরের জনগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ১৯৯৮ সাল থেকে ২৩ বছর ধরে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে চলমান রয়েছে ‘আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি’ প্রকল্প। বর্তমানে প্রকল্পটি ১২টি সিটি করপোরেশন এবং ১৩টি পৌরসভায় সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। প্রকল্পের চলমান চতুর্থ ধাপের কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালে। ঋণের অর্থে পরিচালিত এ প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে এনজিওর মাধ্যমে চলায় সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। তাছাড়া নানা দুর্বলতায়ও নাগরিকরা কাক্সিক্ষত সুফল পাচ্ছেন না। ভবিষ্যতে প্রকল্পটিতে দাতা প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন বন্ধ করে দিলে নগরের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা আরো ব্যাহত হবে।

সরকারের রুলস অব বিজনেস ও অ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুযায়ী, সারা দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার দায়িত্ব স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। সামগ্রিকভাবে জনগণের ধারণাও তাই। অথচ ২০০৯ সালের সিটি করপোরেশন আইন এবং ২০১০ সালের পৌরসভার আইনে অন্যান্য সেবার মতো স্বাস্থ্যের দায়িত্বও সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে দেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নগর স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার সামর্থ দৃশ্যমান নয়। তাছাড়া নগরের বিপুল জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো স্বাস্থ্য ইউনিট, কারিগরি জ্ঞান, অবকাঠামো বা জনবল নেই। সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার স্বাস্থ্যসেবার জন্য আলাদা কোনো আর্থিক খাত নেই। এসব সীমাবদ্ধতায় এটা স্পষ্ট, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছাড়া অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা চালানো সম্ভব না। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেই নগরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব দেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী মনে করেন, নগরের রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে সিটি করপোরেশনগুলোর উদ্যোগে কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু হলেও তা অপ্রতুল।

তিনি বলেন, বড় হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা বেশির ভাগই শহর ও নগরের বাসিন্দা। অধিকাংশই সাধারণ রোগব্যাধি নিয়ে আসেন। নগরে বেশিসংখ্যক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করা গেলে টারশিয়ারি হাসপাতালে চাপ কমবে। এজন্য সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও দক্ষ জনবল নিয়োগ, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে। বড় হাসপাতালের সম্পদ, অর্থ ও জনবল ব্যয় কমিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন সহজ হবে।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ছাড়াও নগরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে পরোক্ষভাবে শিল্প, বাণিজ্য ও পরিবেশসহ আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তবে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, এসব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় নেই। ফলে নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App