×

অর্থনীতি

২০২৩ সালে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:৩৭ পিএম

২০২৩ সালে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আর মহামারি পরবর্তী সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটার ফল হিসেবে চলতি বছরের প্রায় পুরোটাই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভুগতে হয়েছে। একদিকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে, অন্যদিকে ডলার সংকটে আমদানি এবং ব্যাংকিং খাতেও ছিল সংকট। একই সাথে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এবং ই-কমার্স খাতের অনিয়ম নিয়েও আলোচনা ছিল বছর জুড়ে। এছাড়া রপ্তানি এবং বৈদেশিক আয়ের ট্রেন্ডও ছিল কিছুটা নেতিবাচক। এসব পেরিয়ে নতুন বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জগুলো কী হবে? আশা জাগানিয়া খবর কি আসবে কোন খাতে?

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই হাজার বাইশ সাল শুরু হয়েছিল অর্থনীতিতে মহামারি উত্তর স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার মাধ্যমে। কিন্তু সারা দুনিয়াতে তখন শুরু হয়ে গেছে মূল্যস্ফীতি, যা থেকে বাদ পড়েনি বাংলাদেশও। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর সহসাই বিশ্বজুড়ে বেড়ে যায় জ্বালানি তেল এবং খাদ্য পণ্যের মূল্য।

মূল্যস্ফীতির গ্রাফ আরো ওপরে উঠতে থাকে। এরপর খুব দ্রুতই অর্থনীতির নানা খাতে সংকট দেখা দিতে থাকে। এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখে এক পর্যায়ে জুলাই মাসে বাংলাদেশের সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছে সাড়ে চারশো’ কোটি ডলার ঋণ চায়। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, ব্যাংকে ডলার সংকটসহ ২০২২ সালে যেসব সমস্যার মধ্য দিয়ে গেছে বাংলাদেশ, তার খুব একটা পরিবর্তন হবে না ২০২৩ সালে।

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, নতুন বছরে নানা খাতে উন্নতি হলেও, সংকট পুরোপুরি কাটবে না। বাংলাদেশে ২০২৩ সাল শুরু হচ্ছে কিছুটা উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবে চলতি বছরের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল আট দশমিক ৯১ শতাংশ। কিন্তু মনসুর বলেন, এ বছর এটা কমে আসবে, কারণ বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য কমছে, ফলে বাংলাদেশেও সরবরাহ ব্যবস্থায় উন্নতি হবে। ডলারের সংকট দ্রুতই কাটবে না। যদিও ব্যালেন্স অব পেমেন্টের যে ভারসাম্যহীনতা সেটা কমে আসছে। কিন্তু আমাদের অনেক সমস্যার জের টানতে হবে, আমদানির ঋণপত্র বা এলসি স্থগিত হয়েছিল সেগুলো সমাধান করতে হবে। আবার ডলার সংকটের কারণে অনেকে আমদানি করতে পারছেন না, যেটা অর্থনীতির জন্য ভালো না।

চলতি বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নানা রকম উত্থান-পতন ঘটেছে। ডলার সংকটে পণ্য এবং বিদ্যুৎ আমদানিতে সংকট দেখা দেয়। ফলে সরবরাহেও ঘাটতি দেখা দেয় অনেক খাতেই। এক পর্যায়ে সরকার কৃচ্ছতা সাধনের উদ্যোগ হিসেবে বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানোর জন্য এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের দিকে যায়। বিলাসদ্রব্য আমদানি সীমিত করে এবং জরুরি প্রয়োজন না হলে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রপ্তানিতে অনেক খাত ঋণাত্মক হয়ে পড়লেও, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি ১৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছরই প্রথমবার রপ্তানি আয় ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুও এ বছর উদ্বোধন হয়েছে, বছরের শেষে মেট্রোরেলের আংশিক উদ্বোধন হয়েছে। এসব বিষয়ই হয়ত সামনের বছর অর্থনীতিতে কিছুটা স্বস্তি আনতে সাহায্য করবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ মনে করেন, পরবর্তী বছরে অর্থনৈতিক মন্দার আশংকার মধ্যেও বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং তৈরি পোশাক খাত দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করবে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ফলে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর প্রভাব পড়েছে, যার একটা ফল সামনের বছরেও দেখা যাবে। সামনের বছর এ খাতে আরো নতুন নতুন ক্ষেত্র প্রসারিত হবে এবং তার ফল আমরা দেখতে পারবো। এছাড়া এতো সংকটের মধ্যেও আমাদের তৈরি পোশাক খাত তাদের বাজার ধরে রেখেছে। এর একটা বড় কারণ আমরা একেবারে বেসিক পণ্য তৈরি করি, যার চাহিদা কমার কোন কারণ নাই। ফলে এ খাতে রপ্তানির অগ্রগতি চলমান থাকবে।

ডলার সংকট ছাড়াও ২০২২ সালে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে ঋণ প্রদান এবং আদায়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ শোনা গেছে। নতুন বছর এসব সমস্যা মিটে যাবে—এমনটা মনে করেন না বিশ্লেষকেরা। তবে, ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন বছরের শেষ নাগাদ এ পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে।

বেসরকারি খাতের ব্যাংক ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়রা আযম বলেছেন, ডলার সংকটের কারণে আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার গতি হয়ত এ বছরও কমই থাকবে, তবে তিনি মনে করেন পরিস্থিতি আস্তে আস্তে সহনীয় হয়ে উঠবে। আমরা হয়ত এ বছরও কম এলসি খুলতে পারবো, কিন্তু ব্যাংক হিসেবে আমরাও ম্যানেজ করবো, ব্যালেন্স করবো বিষয়টা। হয়ত অনেক কম খুলবো কিন্তু আমরা ম্যানেজ করবো। আমার মনে হয় তারল্যের একটু সংকট আছে, বৈদেশিক মুদ্রারও সংকট আছে। ডলার তো আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ৯০ শতাংশ ইউএস ডলার, সে কারণে আমাদের সমস্যাটা বেশি হয়। কিন্তু আমরা সবাই মিলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবো বলেই আমি মনে করি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে নতুন বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাধারণত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সব সময়ই একটা উর্ধমুখী ট্রেন্ড দেখা যায়, তার একটা প্রভাব থাকবে অর্থনীতিতে। যদিও অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির বার্ষিক হার নতুন বছরে ছয় শতাংশ বা তার আশেপাশেই থাকবে বলে বলছে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, আর্থিক খাতের সংস্কার এবং সুশাসন নিশ্চিত না হলে অর্থনীতির সংকট কাটানো যাবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App