×

পুরনো খবর

সবার সহযোগিতায় রংপুরের প্রত্যাশিত উন্নয়ন করতে চাই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:২৫ পিএম

সবার সহযোগিতায় রংপুরের প্রত্যাশিত উন্নয়ন করতে চাই
সাক্ষাৎকারে মেয়র মোস্তাফিজার : সবার সহযোগিতায় রংপুরেরহাসান গোর্কি, রংপুর থেকে : রংপুরের গণমানুষের নেতা মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফা। ধনী-গরিব সবার কাছে সমান জনপ্রিয়। এবার ভোটে বিজয়ী হয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হলেন। সবার কাছে সমান জনপ্রিয় জাতীয় পার্টির এই নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর ভোরের কাগজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তার ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ নানা কথা। প্রথমেই এই বিশাল জয়ের ব্যাপারে উল্লসিত মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা অকপটে বলেন, আমার এই বিজয় আমি রংপুরবাসীকে উৎসর্গ করলাম। তারা আমাকে ভালোবাসে। এ কারণেই তারা আমাকে ভোট দিয়েছে। এই বিজয় আমার না, এটা রংপুরবাসীর বিজয়। আমি আবারো রংপুরবাসীর উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই। তিনি রংপুর নগরীকে একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে দল-মত নির্বিশেষে সবার মতামত ও সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, রংপুর সব দল ও মতের মানুষের, আমার একার নয়। এ কারণে আমি যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সব দলের সহযোগিতা চাই। আমি তাদের আমন্ত্রণ জানাব। আমি মনে করি, যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা ও মতামত থাকা প্রয়োজন। সবার সহযোগিতা না থাকলে প্রত্যাশিত উন্নয়ন সম্ভব হয় না। বিশাল ব্যবধানে বিজয়ে ভোটের এ ধরনের ফলাফল আশা করেছিলেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রত্যাশিত বিজয় পেয়েছি। গত নির্বাচনেও আমি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলাম। এবারো আমাকে যোগ্য মনে করেই দল মনোনয়ন দিয়েছিল। গত ৫ বছর আমি কাজ করেছি। এবার নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে আমি সব মানুষের কাছে গেছি। তাদের কাছ থেকে আমি ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। যে কারণে আমাকে বিজয়ী হতে কোনো বেগ পেতে হয়নি। দায়িত্ব গ্রহণের পর কোনো কোনো উন্নয়নমূলক ও নাগরিক সুবিধার ওপর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবেন জানতে চাওয়া হলে পুনরায় নির্বাচিত মেয়র বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও দুর্নীতি প্রতিরোধের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেব। রংপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। আমার প্রথম কাজ হবে মূল শহরের সঙ্গে সব এলাকার উন্নয়ন করা। নির্বাচনী ইশতেহারে এ ব্যাপারে আমি বিস্তারিত বলেছি। আমি একটি পরিকল্পিত ও সুন্দরনগরী গড়তে চাই। এজন্য পরিকল্পনার প্রয়োজন। রংপুর একটি সুন্দর শহর ছিল। কালের বিবর্তনে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরের যানজট নিরসনে বিকল্প রাস্তাঘাট করা প্রয়োজন। আগামী ৩০ বছরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে। এজন্য আমি নগর পরিকল্পনাবিদ ও নগরীর নাগরিকদের সঙ্গে পরামর্শ করব। দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন গড়ে তোলার অঙ্গীকারের ব্যাপারে আমি আগেই বলেছিলাম এখনো বলছি। দুর্নীতির সঙ্গে আমার কোনো আপস নেই। উন্নয়ন কার্যক্রম চালাতে অর্থের জোগানের ব্যাপারে মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, উন্নয়ন কাজের জন্য অর্থের প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং দাতা সংস্থার সঙ্গে আমি সেতুবন্ধন রচনা করব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী রংপুরের পুত্রবধূ। তিনি রংপুরের মানুষের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করবেন। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার ভোটের বিশাল ব্যবধানের কারণ জানতে চাইলে গণমানুষের নেতা মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, রংপুর লাঙ্গলের ঘাঁটি। লাঙ্গল প্রতীককে ভালোবাসে। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন এবং দল-মত নির্বিশেষে সবাই সমর্থন দিয়েছেন বলেই ভোটবিপ্লব হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। পরপর দুবারই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হওয়ার নেপথ্যে লাঙ্গল প্রতীক ও ব্যক্তি ইমেজের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, প্রতীক একটা প্রার্থীর মুখ, তবে প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজ, গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার বিষয়টি খুবই গুরুত্ব বহন করে। কারণ ভোটারদের কাছে শুধু প্রতীক নয় প্রার্থীও যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। আর আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। রংপুরে তাদের দলের একটা বড় অবস্থান রয়েছে। তাদের সহযোগী অনেক সংগঠনও আছে। যদি আওয়ামী লীগের কর্মীরা ভোট দিত তাহলে ৪০ হাজারের বেশি ভোট নৌকায় পড়ত। নৌকার প্রার্থী কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি, সে ভোটও পড়েনি। নির্বাচনে ইভিএম অভিজ্ঞতা-অভিযোগ প্রসঙ্গে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ?আমি নিজেই এবার প্রথম ইভিএমে ভোট দিলাম। এর আগে কখনো দেইনি। আর আমাদের ভোটারের মধ্যে অনেক বয়স্ক নারী-পুরুষ রয়েছেন, তাদের ইভিএম সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। ইভিএম ত্রæটিপূর্ণ, এটা কখনো স্লো, কখনো হ্যাং হয়ে যায়। এই মেশিনে ভোট পুনরায় গণনার সুযোগ নেই। অনেক বেশি ভোটার উপস্থিত হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইভিএমে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে। আমরা দেখেছি সময় শেষেও অনেকগুলো কেন্দ্রে রাত পর্যন্ত ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়েছিল। নির্বাচনে জনগণের কাছে তুলে ধরা ইশতেহার বাস্তবায়নে শ্যামাসুন্দরী খাল পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে জানিয়ে আবারো নির্বাচিত মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এবার প্রস্তাবিত ৩১ দফা ইশতেহারে নগরীর সৌন্দর্য রক্ষার্থে, উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যানজট নিরসনসহ ২৫০ বছরের পুরাতন এই শহরকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রস্তুতকৃত মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে নগর স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স এবং অঞ্চলভিত্তিক নগর মাতৃসদন কেন্দ্র নির্মাণ, খেলাধুলার মাঠ বাড়ানোসহ বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। প্রসঙ্গত, রংপুর সিটি করপোরেশনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি সরকারদলীয় প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার চেয়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৯ ভোট বেশি পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App