×

সারাদেশ

ডুয়েটিয়ান কাপ্তাইয়ের মেধাবী প্রান্তর সাফল্যের ইতিকথা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:২৯ পিএম

ডুয়েটিয়ান কাপ্তাইয়ের মেধাবী প্রান্তর সাফল্যের ইতিকথা

সিদরাত মুনতাহা নূর প্রান্ত

ডুয়েটিয়ান কাপ্তাইয়ের মেধাবী প্রান্তর সাফল্যের ইতিকথা

সিদরাত মুনতাহা নূর প্রান্ত। ছবি : ভোরের কাগজ

ডুয়েটের মেধাবী গ্রাজুয়েট ইঞ্জিনিয়ার সিদরাত মুনতাহা নূর প্রান্ত । আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেছেন অর্ধশতাধিক প্রতিযোগিতায় আর ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের হয়ে অর্জন করেছেন কয়েক ডজন পদক, স্মারক ও সম্মাননা। এক্সট্রা কারিকুলার ও কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির পাশাপাশি তিনি সমানভাবে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন একাডেমিক ফলাফলেও।

২০২২ সালে ডুয়েটের ইইই বিভাগ থেকে ২য় স্থান অর্জন করে সমতুল্য ৯১ শতাংশ নম্বর ও ৩.৮৯/৪.০০ সিজিপিএ প্রাপ্ত হয়ে এবং হ্যাট্রিক ডিন এওয়ার্ড নিয়ে বি এস সি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন। গতবছর শহীদ মোস্তফা এক্সিলেন্স এওয়ার্ডে তিনি তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স এর জন্য ডুয়েটে স্টুডেন্ট অব দা ইয়ার সম্মাননা প্রাপ্ত হন। এছাড়া ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, কাপ্তাই এর তড়িৎ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন সিজিপিএ ৩.৯৪/৪.০০ প্রাপ্ত অভাবনীয় ফলাফলের মাধ্যমে, তিনি ওই প্রতিষ্ঠানেও ১ম স্থান অর্জন করেন। এখানে তিনি স্কিল ডেভেলপমেন্ট এক্সপো ২০১৫ তে ব্যতিক্রমি এক অটোমেশন ডিভাইস প্রদর্শন করে সকলের নজর কাড়েন।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যারা একাডেমিক ফলাফলে ভাল করেন তাদের এক্সট্রা কারিকুলার, কো কারিকুলার ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিচরণ খুবই কম। তবে এক্ষেত্রে প্রান্ত একজন ব্যাতিক্রমি ও অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন এদেশের শিক্ষাঙ্গনে।

নাসা স্পেস এপ্স চ্যালেঞ্জ ১০ প্রতিযোগিতায় ২০২১ সালে স্পেস আই সফটওয়্যারের ধারনা প্রদান করে এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিনি ও তার দল নাসা গ্যালাক্টিক প্রব্লেম সলভার এওয়ার্ড অর্জন করেন। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল হাল্টপ্রাইজে তিনি রিজিওনাল ফাইনালে বিজয়ীর খেতাব অর্জন করেন, যা হাল্ট ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুল ও আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন সার্টিফাই করেন।

এছাড়া সম্প্রতি ২০২২ সালে তার একটি থিসিস ইন্সটিটিউট অব ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্স আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক থিসিস পেপার কন্টেস্টে চ্যাম্পিশিপের খ্যাতি অর্জন করে, যা ডুয়েট ও দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনে। এখানে তার থিসিসের বিষয় ছিল একটি আধুনিক ভিসিও ডিজাইন যা দ্বারা দ্রুত সময়ে ও কম খরচে কমিউনিকেশন ডিভাইসের পিএলএল অংশে কাজ সম্পন্ন করা যাবে।

এছাড়া সিদরাত মুনতাহা ও তার দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় রোবটিক্স প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। জিপিএইচ ইস্পাত এসো রোবট বানাই যা চ্যানেল আইতে প্রচারিত হয়, উক্ত প্রতিযোগিতায়ও তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে বিজয়ীর খেতাব বয়ে আনেন। এছাড়াও ব্রেন শেয়ার ন্যাশনাল ইংলিশ অলিম্পিয়াডেও তিনি বিজয়ী হন। তার বিভিন্ন উদ্ভাবনী ধারনা ও কার্যক্রম জাতীয় পর্যায়ে নজর কাড়ে ও বিভিন্ন সময় জাতীয় টেলিভিশন এবং সংবাদ পত্রে উঠে আসে। এরই সঙ্গে তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ সেকশন ও টেকফেস্ট আই আই টি, বোম্বে, ইন্ডিয়াসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এম্বাসেডর ও তরুণ আইকন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রতিষ্ঠা করেছেন ডুয়েট ইনোভেশন সোসাইটি ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কাজ করেছেন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান বিদ্যালয়, রোবমেন্টসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানে যা দেশ বিদেশে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে শিক্ষাদান এবং রোবটিক্স ও উদ্ভাবনে আগ্রহী করার কাজ করে থাকে। তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ডুয়েট রোবটিক্স ক্লাব, আই ইইই ডুয়েট স্টুডেন্ট ব্রাঞ্চ, ডুয়েট সাহিত্য সংঘ সহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক সংগঠনের। একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার, মেশিন লার্নিং, আরটিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, মাইক্রোকন্ট্রোলার প্রোগ্রামিংসহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স ও ট্রেনিং প্রাপ্ত।

সিদরাত মুনতাহা জানান, করোনায় যখন লক ডাউনে বিশ্ব অচল তখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোর্স গ্রহণ তাকে নতুন করে ভাবতে শেখায়, বিশেষ করে আমেরিকার মিশিগান ইউনিভার্সিটির পাইথন প্রোগ্রামিং ও ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের মেশিন লার্নিং এর কোর্স তার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আনে।

বর্তমানে তিনি রাজধানীর স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন, এখানেও শিক্ষার্থীদের তিনি অত্যন্ত প্রিয় ও অনুকরণীয়। পাশাপাশি তিনি ডুয়েটে পোস্টগ্রাজুয়েট কোর্সে অধ্যয়নরত আছেন। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর এর অর্থায়নে জাতীয় পর্যায়ে রোবটিক্স, সায়েন্স ও ইনোভেশন প্রতিযোগিতায় দুইবার বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন এবং ইয়্যুথ আইকন হিসেবে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান, রোবটিক্স, ইনোভেশন ও প্রযুক্তি নিয়ে ওয়ার্কশপ, সেমিনারে ট্রেনিং প্রদানে ব্যাস্ত সময় অতিবাহিত করছেন তিনি। বাংলাদেশ স্মার্ট সিটি এক্সপো ২০১৯ এর ইনোভেশন ফর স্মার্ট সিটি ইভেন্টে তিনি বিজয়ীর খেতাব অর্জন করেন, সেখানে সাইবার সিকিউরিটি মালেশিয়ার সিইও ড.আমির উদ্দিন বিন আবদুল ওয়াহাব তাকে সম্মাননা প্রদান করেন। এছাড়া জাতীয় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গনিত প্রতিযোগিতায় তার একটি গবেষণা জাতীয় পর্যায়ে দেশ সেরা ৩০ এ অবস্থান করে।

এই কৃতি সন্তান জানান, একদম ছোটবেলা থেকেই তিনি ভিন্ন ভাবে নতুন কিছু শেখা ও তা প্রয়োগে মনযোগী ছিলেন তার ফলশ্রুতিতে প্রথম তিনি ২০১১ সালে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাপ্তাইয়ের বিজ্ঞান বিভাগের হয়ে সেকেন্ডারি স্কলার মেরিট টেস্ট বৃত্তি লাভ করেন এবং এর পর থেকে লেখা পড়ার পাশাপাশি বাস্তবমুখী জ্ঞানার্জন ও হাতেকলমে শেখার দিকে গভীর মনযোগ দেন। তিনি আরো বলেন, বই পুস্তকের বিদ্যার বাহিরে আরো যে জগৎ আছে সেখান থেকে শেখার ক্ষেত্র অনেক বেশি এবং প্রয়োগের ক্ষেত্র অসীম, আমাদের দুইদিকেই সমান ভাবে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

তরুণদের উদ্দেশ্য তিনি আরো বলেন, একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি কো-কারিকুলার ও এক্সট্রা-কারিকুলার এক্টিভিটিতে যুক্ত থাকা অত্যন্ত জরুরী। সঠিকভাবে সময় ব্যাবস্থাপনা করতে পারলে একই সাথে দুই দিকেই ভাল করা সম্ভব।

কাপ্তাই, রাঙ্গামাটিতে বেড়ে উঠা এবং চকরিয়া, কক্সবাজারে জন্মানো এই কৃতি সন্তানকে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন যথাযথ সুযোগ পেলে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দ্বারা এই দেশ ও জাতির জন্য আরো ভালকিছু করার চেষ্টা করবো। যেহেতু শিক্ষকতা পেশায় আছি, দেশের জন্যই আরো উন্নতমানের ইঞ্জিনিয়ার গ্রাজুয়েট তৈরীতে আরো চমক আনতে পূর্ণ মনোনিবেশ করতে চাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App